সেনা বাহিনীর মানব ঢাল নিয়ে আলোড়ন
১৯ এপ্রিল ২০১৭জম্মু-কাশ্মীরে হালের উপ-নির্বাচনের সময় পর পর দু'টি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ায় শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়৷ একটিতে নির্বাচনি নিরাপত্তার ডিউটিতে কর্তব্যরত কেন্দ্রীয় রিজার্ভ বাহিনীর জওয়ানদের উন্মত্ত জনতার হাতে হেনস্থা হতে দেখা যায়: লাথি, কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় কোনোটাই বাদ যায়নি৷ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দশজনকে চিহ্নিত করা হয়৷ তারপর তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচজনকে৷ তবে আরও খোঁজ চলছে৷ আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের নিগ্রহের ঘটনার নিন্দা করেছেন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও৷ দ্বিতীয় ভিডিওটিতে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর জিপের সামনে পাথর ছোঁড়া জনতার একজনকে ‘মানব ঢাল' হিসেবে বেঁধে জওয়ানদের টহল দিতে৷ যাঁকে ঢাল করা হয়েছে, তাঁর নাম ফারুক আহমেদ দার৷ তাঁর বক্তব্য, সে নাকি ভোট দিয়ে গ্রামে বোনের বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় সেনা জওয়ানরা তাঁকে বিক্ষোভকারীদের একজন মনে করে তুলে নিয়ে যায়৷ পরে তাঁকে জিপের সামনে বেঁধে ঘুরতে দেখা যায় জাওয়ানদের৷ আর জিপের ভেতর থেকে লাউড স্পিকারে বলতে শোনা যায়, ‘পাথরবাজদের এই রকম অবস্থাই হবে৷'
এই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজ দ্বিধাবিভক্ত৷ সরকারের অবস্থানের প্রেক্ষিতে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি বলেন, পাথর ছোঁড়া যুবকদের নিরস্ত করতে এবং নির্বাচনি কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য এই পন্থা অন্যায্য নয়৷ উপ-নির্বাচনে সহিংসতা রুখতে এটা একটা অভিনব উপায়৷ আটজন ভোট কর্মীকে উদ্ধার করতে এবং তাঁদের নিরাপত্তা দিতে যাওয়ার পথে পাথর ছোঁড়ার মুখে পড়তে হয় নিরাপত্তা বাহিনীর৷ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে তখন সেনা জওয়ানদের কাছে পাল্টা গুলি চালানো ছাড়া উপায় ছিল না৷ তাতে হতাহতের সংখ্যা বেশি হতো৷ সেই তুলনায় এটা মন্দের ভালো৷ এ বিষয়ে গতকাল নতুন দিল্লিতে সেনাবাহিনীর দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতেরও মন্তব্য, ভারতীয় সেনাবাহিনী তার কঠোর ভাবমূর্তি এবং পেশাগত সুনাম এইভাবেই বজায় রেখে যাবে৷ তাই সেনা কর্তপক্ষের মতে, এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও অপরিহার্য ছিল৷ সেনা বাহিনীকে অযথা রাজনীতির ঘোলা জলে টেনে নামানো হচ্ছে৷
কেউ কেউ বলছেন, জওয়ানদের কি আত্মরক্ষার অধিকার নেই? টুইটারে মুখ খুলে বিতর্কের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন নর্দান কমান্ডের প্রাক্তন প্রধান এবং বর্তমানে এক রাজনৈতিক দলের নেতা এইচ. এস পনাগ৷ তাঁর মতে, এই দৃশ্য সেনা তথা দেশের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক হয়ে থাকবে৷ কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের সভাপতি ওমর আবদুল্লা টুইটারে অবিলম্বে এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানান৷
সাধারণ নাগরিককে এইভাবে ‘মানব ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করায় কাশ্মীর উপত্যকায় ক্ষোভ আরও বাড়লেও, এর মধ্যে দোষের কিছু দেখছেন না দিল্লি থেকে প্রকাশিত কাশ্মীর গেজেট পত্রিকার সম্পাদক সুশীল ভকিল৷ ডয়চে ভেলেকে উনি চাঁছাছোলা ভাষায় বললেন, বিক্ষোভকারীদের হাতে গত এক বছর নিহত হয় ৮৭ জন নিরাপত্তা কর্মী৷ সেটার মোকাবিলা করতে গেলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে গেল গেল রব কেন? পৃথিবীর অনেক দেশেই তো এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আকছারই ঘটছে৷ কৈ তা নিয়ে তো এমন ঝড় ওঠে না? ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্য দেশে কি ঘটছে না এ ধরনের ঘটনা? ডয়চে ভেলেকে সরাসরি প্রশ্ন করেন কাশ্মীর গেজেট পত্রিকার সম্পাদক সুশীল ভকিল৷
কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গিপনা এবং পাথর ছোঁড়ার তীব্রতা বাড়ছে কেন? উত্তরে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের নতুন অধিকর্তা এস.পি বৈদ্য সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্ররোচনার জালে এরা জড়িয়ে পড়ছে৷ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা আছে এতে৷ জঙ্গিদের সীমান্তের ওপারে পালাবার পথ করে দিতে পাথর ছোঁড়ার মতো হিংসার মহড়া দেযা হয় জনতাকে দিয়ে৷ জওয়ানদের লক্ষ্য করে পাথর বৃষ্টি করা হলে নিরাপত্তা বাহিনীকে তার জবাব দিতেই হয়৷ তবে নিরাপত্তা বাহিনীকে সংযত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ ছররা গুলির বদলে প্লাস্টিক গুলি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে৷ অনেক সময় কারণে-অকারণে প্রতিবাদ বিক্ষোভ গড়ে তোলা হয়৷ পুলওয়ামার কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে চেকপোস্ট বসানোর প্রতিবাদে রণক্ষেত্র তৈরি করা হয় কাশ্মীরে৷ কলেজ পড়ুয়াদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়, আহত হয় অনেকে৷ এটার কি দরকার ছিল? অবশ্যই না৷