কী হচ্ছে আদালত পাড়ায়?
অন্তর্বর্তী সরকারে সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন আইনজীবীরা৷ ছাত্রদের দাবির মুখে ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার মতো ঘটনাও ঘটেছে৷
‘মারধরের শিকার হয়েছি’
আইনজীবী মোশারফ হোসেন শাহীন বলেন, ‘‘গত আড়াই মাসে যাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে নেওয়া হয়েছে, তাদের সবাইকে অপদস্থ করা হয়েছে৷ যারা ডিফেন্স করতে যাচ্ছেন, তাদের উপরও হামলা করা হচ্ছে৷ আক্রমণ করা হচ্ছে৷ এই ধরনের কাজের মাধ্যমে বাইরে খারাপ বার্তা যাচ্ছে৷ আমি নিজেও ডিফেন্স করতে গিয়ে মরধরের শিকার হয়েছি৷ আশা করবো, সবাই যেন সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন৷’’
‘আসামি পক্ষের কোনো আইনজীবীই আদালতে যেতে পারছেন না’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বাদী ও আসামি দুই পক্ষেই আইনজীবী থাকতে হয়৷ কিন্তু বর্তমান সরকারের সময় আসামি পক্ষকে আইনজীবী রাখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না৷ প্রত্যেক আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকে৷ সেই সুযোগও পাচ্ছেন না তারা৷ আমি নিজেও কোনো মক্কেলের পক্ষে দাঁড়াতে পারছি না৷ শুধু আমি নই, আসামি পক্ষের কোনো আইনজীবীই আদালতে যেতে পারছেন না৷
‘আসামির পক্ষে আইনজীবীর অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে না’
সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘‘আসামির পক্ষে আইনজীবীর দাঁড়াতে পারাটা অধিকার, সেটাই নিশ্চিত করা হচ্ছে না৷ সবাই নাগরিক কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন৷ একটা পক্ষ বলতে চাচ্ছে, আরেকপক্ষ এদেশের নাগরিকই না৷ আমরা আগের পথেই চলে গেছি কিনা সেটাও ভাববার বিষয়৷ একটাই পার্থক্য শুধু পুলিশ গুলি করছে না৷ দেশে সরকার দুইটা কিনা সেটাও প্রশ্ন! ছাত্ররাও সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, আবার যারা শপথ নিয়েছেন (উপদেষ্টারা) তারাও চালাচ্ছেন৷’’
‘এভাবে চললে অভিযুক্তরা ন্যায় বিচার-বঞ্চিত হবেন’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, ‘‘সংবিধানে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে আইনজীবী নিযুক্ত করার কথা বলা হয়েছে৷ এখন যারা ডিফেন্স করতে যাবেন, তারা তো ভয়ের মধ্যে আছেন৷ প্রধান বিচারপতি বারবার বলছেন, অভিযুক্তকে আইনজীবী প্রাপ্তির সুযোগ দিতে৷ কিন্তু আইনজীবীরা মারধরের শিকার হচ্ছেন৷ অভিযুক্তরা নিজের কথাও বলতে পারছেন না৷ কোর্টও ভয়ের শিকার হন৷ এভাবে চললে অভিযুক্তরা ন্যায় বিচার-বঞ্চিত হবেন৷’’
‘এই বিচারব্যবস্থার জন্য তো তারা জীবন দেননি’
ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, ‘‘আমাদের বিচারব্যবস্থা সামনের দিকে এগোচ্ছে কিনা সেই প্রশ্ন করলে আমি বলবো- ‘না’৷ বিগত সরকারের সময়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ যেটা করেছে, আমরা তো সেটা চাই না৷ আজকের যে বাংলাদেশ, সেটার জন্য কিন্তু যাদের অবদান, তাদের অনেকে কবরে শুয়ে আছে৷ অনেকে অন্ধ হয়ে হাসপাতালের বিছানায়৷ আমার কাছে একজন এসেছেন, যিনি ৪০ বছর ধরে বিচারের জন্য আদালতে ঘুরছেন৷ এই বিচারব্যবস্থার জন্য তো তারা জীবন দেননি৷’’
‘ছাত্ররা আদালতে মিছিল না করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলেই ভালো হতো’
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি তারিক উল হাকিম বলেন, ‘‘ছাত্ররা যেভাবে আদালতের ভেতরে এসে মিছিল করে দাবি জানিয়েছে, সেটা না করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করলেই ভালো হতো৷ তারপর দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন করতে পারতো৷ বিগত সরকারের সময়ের চেয়ে এখন কোনো পার্থক্য দেখা যাচ্ছে কিনা সেটা বুঝতে হলে আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে৷’’
‘আদালতের তো নিজস্ব কোনো বাহিনী নেই যে, তারা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে’
অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ ড. শাহজাহান সাজু বলেন, ‘‘কোন বিচারককে বেঞ্চ দেবেন আর কোন বিচারককে বেঞ্চ দেবেন না সেটা প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার৷ ছাত্ররা যেভাবে উচ্চ আদালতের ভেতরে এসে মিছিল করলো, সেখানে পুলিশ তো বাধা দিলো না৷ এখন আদালতেরও তো নিজস্ব কোনো বাহিনী নেই যে, তারা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে৷ ফলে তাদের আন্দোলনের কারণেই ভয়ে বা চাপে পড়ে প্রধান বিচারপতি এটা করেছেন সে কথা তো আপনি বলতে পারবেন না৷
‘প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন আসামী পক্ষের আইনজীবীদের দাঁড়াতে সমস্যা হচ্ছে না’
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘‘ছাত্রদের দাবির মুখে কয়েকজন বিচারককে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, এমন নয়৷ আমরা আইনজীবীরাও তাদের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেছি৷ আমাদের কাছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমানও আছে৷ সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রধান বিচারপতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন কিন্তু আসামী পক্ষের আইনজীবীদের দাঁড়াতে সমস্যা হচ্ছে না৷