কৃষি উৎপাদন
৩০ জুলাই ২০১২অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বসেছিল ইমাজিন কাপের আসর৷ সেটাতে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশের ‘ইঞ্জিন' টিম৷ এ দলের সদস্যরা হলেন খালিদ মাহমুদ, আইমান কাদের সিদ্দিকী, জুনায়েদ হাসান ও মেহেনাজ চৌধুরী৷ তাঁরা বুয়েট, অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ, এআইইউবি ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী৷ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাঁরা সিডনিতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন৷
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৩ সাল থেকে মাইক্রোসফট ‘ইমাজিন কাপ'এর আয়োজন করে আসছে৷ তবে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নিল বাংলাদেশ৷
টিম ইঞ্জিনের তৈরি করা সফটওয়্যার'এর নাম ‘অন্নপূর্ণা', যার অর্থ অন্নদাত্রী, বা যিনি অন্ন দেন৷ অন্নপূর্ণা আসলেই এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন যেটা, কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে অন্ন বা খাদ্যের জোগান করতে সহায়তা করবে৷ এ কারণে বিশ্বের অনেকের কাছেই সফটওয়্যারটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে৷ যার ফল ইমাজিন কাপে সফলতা৷ প্রতিযোগিতার পিপলস চয়েস বিভাগে তিন নম্বর স্থানটি পেয়েছে অন্নপূর্ণা৷
‘ইমাজিন কাপ' আর অন্নপূর্ণা নিয়ে কথা হচ্ছিল খালিদ মাহমুদের সঙ্গে৷ তিনি বললেন, ‘‘বিশ্বের অন্যতম বড় সমস্যা ক্ষুধা আর দারিদ্র৷ এ কারণে প্রতিবছর বিশ্বের অনেক মানুষ মারা যায়৷ যার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে৷ আমরা চিন্তা করলাম কীভাবে এই সমস্যা দূর করা যায়৷ সে থেকেই বছর খানেক আগে অন্নপূর্ণার কথা মাথায় আসে৷''
তিনি বলেন, ‘‘অন্নপূর্ণার সাহায্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব৷ কেননা এটা দিয়ে কৃষক মাটির গুণাগুণ পর্যালোচনা করে সঠিক পরিমাণ সার প্রয়োগ ও সঠিক বীজটি রোপন করতে পারবে৷''
খালিদ বলেন, সিডর'এর কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জমিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেছে৷ আর আফ্রিকার জমিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি৷ কৃষককে এসব বিষয় মাথায় রেখে সার প্রয়োগ ও বীজ বপন করতে হবে৷ তাহলে উৎপাদন বেশি হবে৷
তিনি বলেন, মাটি বুঝে বীজ বপন করতে হবে৷ যে মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি সেখানে লবণ সহ্য করতে পারে এমন বীজ দিতে হবে৷ আবার সার প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে৷ কেননা বেশি সার দিয়ে উৎপাদিত শস্য খাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ অনেক ক্ষেত্রে সেটা ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে৷ খালিদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবেন, যার বড় একটা কারণ হবে বিষাক্ত সার৷ এছাড়া জমিতে অতিরিক্ত সার প্রয়োগে ফলনও কম হতে পারে৷ উপরন্তু পরিবেশের ক্ষতির দিকটা তো রয়েছেই৷
সব মিলিয়ে মাটি বুঝে সার প্রয়োগ আর বীজ বপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ একাজে সহায়তা করে অন্নপূর্ণা৷ স্মার্টফোনের মাধ্যমে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে কৃষক জানতে পারবে তাঁর জমিতে কী পরিমাণ সার দেয়া উচিত আর কোন বীজ বোনা উচিত৷
ভবিষ্যতে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ফসলের রোগ নির্ণয় ও তার প্রতিকার সংক্রান্ত তথ্য দেয়ারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
খালিদ বলেন, মাইক্রোসফটের প্রতিযোগিতার কারণে এখন পর্যন্ত শুধু উইন্ডোজ ফোনের জন্য অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করা হয়েছে৷ ভবিষ্যতে এটা অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের জন্যও তৈরি করা হবে৷
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন স্মার্টফোন৷ যেটা মোটামুটি ব্যয়বহুল৷ তাছাড়া গ্রামের একজন কৃষক স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে কিনা - সেটাও ভেবে দেখতে হবে৷ এ প্রসঙ্গে খালিদ বলেন, স্মার্টফোনের দাম দিনদিন হাতের নাগালে চলে আসছে৷ আর কৃষকরা না পারলেও সরকার চাইলে মাঠকর্মীদের মাধ্যমে এই সফটওয়্যার'এর উপকারিতা কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারে৷ কেননা গ্রামেগঞ্জে কৃষকদের সহায়তার জন্য সরকারের একটা বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে৷ এছাড়া বিভিন্ন এনজিও কৃষকদের নিয়ে কাজ করছে৷ তাদের মাধ্যমেও অন্নপূর্ণাকে কৃষকদের কাছে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে৷
খালিদ বলেন, তাঁরা অন্নপূর্ণাকে কাজে লাগানোর জন্য সরকার ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন৷ বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্য দেশেও যেন এটা ব্যবহৃত হয় সেজন্য ইরি'র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও ভবিষ্যতে আলোচনা হতে পারে বলে জানান খালিদ৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ