হত্যা, ধর্ষণ আর নির্যাতন থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের সামনে সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে সে দেশ থেকে পালানো৷ আর পালিয়ে বাঁচার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে তাদের বেশিরভাগই আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে৷ কেউ কেউ একটু দূরের পথ থাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়া অবধিও পৌঁছাতে পারে সমুদ্র পথে৷ সে পথে অবশ্য যেতে যেতেই সমুদ্র সলিল সমাধি ঘটে অনেকের৷
মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী হওয়ায় বাংলাদেশের উপর চাপটা একটু বেশি৷ বেসরকারি হিসেবে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে অবস্থান করছে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেক বাংলাদেশি তাদের মনে করছেন বাড়তি বোঝা৷ পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে৷ কেউ কেউ বলছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে৷
এটা ঠিক, বিভিন্ন ছোট-বড় অপরাধের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ গণমাধ্যমে তেমনটা দেখাও যায়৷ আর পাঁচ লাখ মানুষ যেখানে থাকবেন, সেখানে কোনো অপরাধ হবে না, এমনটা ভাবাও কঠিন৷ তবে আমার কাছে মনে হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যতটা অপরাধ করছেন, তারচেয়ে বেশি তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়ানো হচ্ছে৷ যেমন, ইয়াবা পাচারের পেছনে রোহিঙ্গাদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেন কেউ কেউ৷ অথচ কক্সবাজারের স্থানীয় এক এমপি মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত৷ শুধু জড়িত নন, সেখান থেকে বাংলাদেশে যে মাদক প্রবেশ করে তার পুরোটাই বলতে গেলে তার দখলে৷ আর তিনি রোহিঙ্গা নন, বাংলাদেশি৷
আর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে ইউরোপের কয়েকটি ঘটনা আমি জানি৷ একজন বাংলাদেশি হিসেবে ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া যতটা কঠিন, একজন রোহিঙ্গা হিসেবে ততটাই সহজ৷ কারণ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজ সচেতন৷ ফলে কেউ যখন ইউরোপে প্রবেশের পর প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে তিনি রোহিঙ্গা, তাঁর জার্মানির মতো দেশেও আশ্রয় মেলে সহজে৷ আর এই সুযোগটা অনেক বাংলাদেশিও নেন৷ ফলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ইউরোপের এসে রোহিঙ্গা পরিচয় দেয়া বাংলাদেশির সংখ্যাও নেহাত কম নয়৷
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার পেছনে একটাই কারণ থাকতে পারে৷ সেটা হচ্ছে মানবিকতা৷ যে মানবিকতার কারণে ১৯৭১ সালে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশিকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল, যে কারণে এক মিলিয়নের বেশি মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থীকে জার্মানি আশ্রয় দিচ্ছে, একই কারণে বাংলাদেশেরও উচিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া৷
খেয়াল রাখতে হবে, এই আশ্রয় যেনে চিরস্থায়ী না হয়৷ বরং মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক সমাজের সহায়তায় বাংলাদেশের কঠোর চাপ প্রয়োগ করা উচিত৷ মিয়ানমারের অবশ্যই রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে হবে৷ মিয়ানমারের একজন সাধারণ নাগরিক যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, রোহিঙ্গাদের জন্যও তা নিশ্চিত করতে বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশটিকে রাজি হতে হবে৷ আর সেটা নিশ্চিত করা গেলে, রোহিঙ্গারা যে স্বেচ্ছায় নিজের দেশে ফিরে যাবে তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই৷
আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? লিখুন মন্তব্যে৷