1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া উচিত?

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম মূলত রাজনীতি, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, শরণার্থী এবং অভিবাসন সম্পর্কিত ইস্যু কভার করেন৷ পাশাপাশি জার্মানি ও ইউরোপে জীবনযাপনের নানা দিকও তুলে ধরেন তিনি৷
আরাফাতুল ইসলাম
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রোহিঙ্গারা বিশ্বের বুকে নিপীড়নের শিকার অন্যতম সম্প্রদায়৷ ঠুনকো কারণে তাদের নির্বিচারে হত্যা করে সেনারা৷ রোহিঙ্গা নারীরা হন ধর্ষণের শিকার৷ সভ্য দুনিয়ায় এই অসভ্যতা বিশ্বমিডিয়া সবাইকে দেখালেও কার্যত নিরব মিয়ানমার৷

https://p.dw.com/p/2XoXr
Myanmar Improvisierter Fischfang der Rohingya wegen eines Verbots von Fischerbooten
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Htusan

হত্যা, ধর্ষণ আর নির্যাতন থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের সামনে সবচেয়ে সহজ পথ হচ্ছে সে দেশ থেকে পালানো৷ আর পালিয়ে বাঁচার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে তাদের বেশিরভাগই আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে৷ কেউ কেউ একটু দূরের পথ থাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়া অবধিও পৌঁছাতে পারে সমুদ্র পথে৷ সে পথে অবশ্য যেতে যেতেই সমুদ্র সলিল সমাধি ঘটে অনেকের৷

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী হওয়ায় বাংলাদেশের উপর চাপটা একটু বেশি৷ বেসরকারি হিসেবে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে অবস্থান করছে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেক বাংলাদেশি তাদের মনে করছেন বাড়তি বোঝা৷ পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে৷ কেউ কেউ বলছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে৷

এটা ঠিক, বিভিন্ন ছোট-বড় অপরাধের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ গণমাধ্যমে তেমনটা দেখাও যায়৷ আর পাঁচ লাখ মানুষ যেখানে থাকবেন, সেখানে কোনো অপরাধ হবে না, এমনটা ভাবাও কঠিন৷ তবে আমার কাছে মনে হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যতটা অপরাধ করছেন, তারচেয়ে বেশি তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়ানো হচ্ছে৷ যেমন, ইয়াবা পাচারের পেছনে রোহিঙ্গাদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেন কেউ কেউ৷ অথচ কক্সবাজারের স্থানীয় এক এমপি মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত৷ শুধু জড়িত নন, সেখান থেকে বাংলাদেশে যে মাদক প্রবেশ করে তার পুরোটাই বলতে গেলে তার দখলে৷ আর তিনি রোহিঙ্গা নন, বাংলাদেশি৷

আর রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে ইউরোপের কয়েকটি ঘটনা আমি জানি৷ একজন বাংলাদেশি হিসেবে ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া যতটা কঠিন, একজন রোহিঙ্গা হিসেবে ততটাই সহজ৷ কারণ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজ সচেতন৷ ফলে কেউ যখন ইউরোপে প্রবেশের পর প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে তিনি রোহিঙ্গা, তাঁর জার্মানির মতো দেশেও আশ্রয় মেলে সহজে৷ আর এই সুযোগটা অনেক বাংলাদেশিও নেন৷ ফলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ইউরোপের এসে রোহিঙ্গা পরিচয় দেয়া বাংলাদেশির সংখ্যাও নেহাত কম নয়৷

আরাফাতুল ইসলাম
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার পেছনে একটাই কারণ থাকতে পারে৷ সেটা হচ্ছে মানবিকতা৷ যে মানবিকতার কারণে ১৯৭১ সালে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশিকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল, যে কারণে এক মিলিয়নের বেশি মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থীকে জার্মানি আশ্রয় দিচ্ছে, একই কারণে বাংলাদেশেরও উচিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া৷

খেয়াল রাখতে হবে, এই আশ্রয় যেনে চিরস্থায়ী না হয়৷ বরং মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক সমাজের সহায়তায় বাংলাদেশের কঠোর চাপ প্রয়োগ করা উচিত৷ মিয়ানমারের অবশ্যই রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে হবে৷ মিয়ানমারের একজন সাধারণ নাগরিক যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, রোহিঙ্গাদের জন্যও তা নিশ্চিত করতে বৌদ্ধ অধ্যুষিত দেশটিকে রাজি হতে হবে৷ আর সেটা নিশ্চিত করা গেলে, রোহিঙ্গারা যে স্বেচ্ছায় নিজের দেশে ফিরে যাবে তাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই৷

আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? লিখুন মন্তব্যে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য