1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন হিন্দুত্ববাদী সংঘের সাথে দেখা করলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত?

২২ জুলাই ২০১৯

গত সপ্তাহে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ'র প্রধান দপ্তরে যান ভারতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টার লিন্ডনার৷ কেন হঠাৎ হিটলার-প্রেমী এই সংগঠনের সাথে এই সাক্ষাৎ?

https://p.dw.com/p/3MWmq
Screenshot Twitter vom Botschaftler Walter J. Lindner in Indien
ছবি: Twitter/Walter J. Lindner

ভারতের ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ' বা ‘আরএসএস' বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন৷ মোট সদস্য সংখ্যা ৬ লক্ষেরও বেশি৷  হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শে চালিত বিশাল এই সংগঠনের সাথে চিরকালই লেগে রয়েছে চরমপন্থি হিন্দু জাতীয়তাবাদের তকমা৷

শুধু তাই নয়, সংঘের প্রথম ‘সরসংঘচালক' বা প্রধান এম এস গোলওয়ালকর বা অন্যতম নেতা ভি ডি সাভারকর বারবার প্রকাশ্যে জানিয়েছেন এই সংগঠনের ‘হিটলার'-প্রীতির কথা৷ তবুও গত ১৭ জুলাই ভারতে জার্মানির রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টার জে লিন্ডনার নাগপুরে আরএসএসের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে বর্তমান সরসংঘচালক মোহন ভাগবতের সাথে দেখা করেন৷

একটি টুইটে তিনি সে কথা জানালে, জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাথে তথাকথিত হিটলারপ্রেমী এই সংগঠনের নেতার দেখা হওয়া নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন পড়ে গেছে৷

এই সাক্ষাতের সমালোচনা করছেন ভারতের সাংবাদিক, সমাজকর্মী থেকে সাধারণ জনতার অনেকে৷

‘দ্য ওয়ার' নিউজ পোর্টালের প্রধান সিদ্ধার্থ ভাটিয়া জানান, ‘‘আরএসএসের এই হিটলার-প্রেম কোনোদিনই গোপন ছিল না৷ সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের নামে ইহুদিদের ওপর নির্যাতনের বারবার প্রশংসা করেছেন সাভারকর-গোলওয়ালকর৷''

উল্লেখ্য, এই আরএসএসেরই রাজনৈতিক দল ভারতে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ বিজেপির অনেক নেতাই ছিলেন ‘হিন্দু স্বাভিমান' নিয়ে লড়া এই সংঘের সাথে জড়িত৷

লিন্ডনারের পদত্যাগ চেয়ে...

জার্মান রাষ্ট্রদূত লিন্ডনার নাগপুরে আরএসএস নেতৃত্বের সাথে দেখা করার পর পিটার ফ্রিডরিশ একটি অনলাইন আবেদন শুরু করেছেন৷ সেই আবেদনে সই সংগ্রহের মাধ্যমে লিন্ডনারের পদত্যাগ চাইছেন জার্মানিতে দক্ষিণ এশীয় রাজনীতির এই গবেষক৷

পিটার জানান, ‘‘লিন্ডনারের এই সাক্ষাৎ আসলে ভারতে গড়ে ওঠা হিন্দুত্ববাদ বা হিন্দু ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থনের আভাস৷'' এবিষয়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাসের হস্তক্ষেপ দাবি করেন ফ্রিডরিশ৷

কেন এই সাক্ষাৎ?

ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু'কে একটি সাক্ষাৎকারে লিন্ডনার আরএসএসের সাথে বৈঠক বিষয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন৷ সেখানে তিনি বলেন যে বর্তমান ভারতে আরএসএস বা হিন্দু জাতীয়তাবাদের উপস্থিতিকে অস্বীকার করার মতো বাস্তবতা এখন নেই৷

ভারতে জার্মান রাষ্ট্রদূত হিসাবে কর্মভার সামলানোর সবে দু'মাস পেরিয়েছে লিন্ডনারের৷ এ অবস্থায় তাঁর নাগপুর-ভ্রমণ শুধুই ছিল বর্তমান ভারতের সাংস্কৃতিক গঠনকে বুঝতে চেয়ে একটি প্রয়াস, যা অনেকেই হয়ত ভুলভাবে উপস্থাপন করছে, বলে জানান তিনি৷

উল্লেখ্য, নাগপুরে বর্তমানে চলছে মেট্রোরেল বসানোর কাজ, যেখানে প্রচুর অর্থ লগ্নি করেছে জার্মান সরকার৷ হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের প্রাণকেন্দ্রে তাই লিন্ডনারের ভ্রমণ যে শুধুই আদর্শিক কারণে ছিল, তা বলা যাবে না৷

Shabnam Surita Dana
শবনম সুরিতা, ডয়চে ভেলেছবি: Melissa Bach Yildirim/AU Foto

ভ্রমণের আদর্শগত কোনো পিছুটান না থাকলেও, লিন্ডনার আরএসএসের কর্মকাণ্ডে নাৎসি জার্মানি বা ফ্যাসিস্ত ইটালির ছোঁয়া দেখতে পেলেও ‘দ্য হিন্দু'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একবারও আরএসএসের বিপক্ষে কোনো কথা বলেননি৷ তাঁর মতে, ভারতে হিন্দুত্ববাদী চিন্তা ও রাজনীতি গোটা বিষয়টাই তাঁর কাছে এখনও ‘অপরিষ্কার অথচ ইন্টারেস্টিং'৷

সম্প্রতি, ২০ জুলাই ‘অপারেশন ভ্যালক্যুরি'র (সাবেক নাৎসি কর্ণেল ক্লাউস ফন স্টাওফেনব্যের্গের হিটলারকে মারার পরিকল্পনা) ৭৫ বছর পূর্ণ হলো৷ এই উপলক্ষে জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল রাষ্ট্রীয় পরম্পরায় শ্রদ্ধা জানান ফন স্টাওফেনব্যের্গকে৷

যে জার্মান সরকার হিটলারকে মারার পরিকল্পনার রাষ্ট্রীয় উদযাপন করে, ‘সাচ্চা দেশপ্রেমিক' নাম দেয় স্টাওফেনব্যের্গকে, সেই সরকারেরই রাষ্ট্রদূত যখন ভারতে হিটলার-প্রেমী সংগঠনের জন্য প্রকাশ্যে একটিও নিন্দাবাক্য উচ্চারণ করেননা, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য৷