কেমন ছিল শি জিনপিংয়ের ক্ষমতার ১০ বছর?
১৫ নভেম্বর ২০২২শি জিনপিং যখন চীনের প্রেসিডেন্ট হলেন, তখন প্রত্যাশা ছিল, তিনি সংস্কারের পথে চলবেন। কিন্তু ক্ষমতা পাওয়ার পরই তিনি সমাজের উপর নিয়ন্ত্রণ আরো আঁটসাঁট করার চেষ্টা করেন। শুরু করেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধরপাকড়। আন্তর্জাতিক নেতা ও বিশ্লেষকরা বুঝে যান, শি জিনপিং অন্য ধাতের মানুষ।
ক্ষমতায় আসার পরই শি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান চালান। সেখানে মূলত তিনি তার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকে টার্গেট করেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির(সিসিপি) উপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।
তাইওয়ানের ন্যাশনাল চেঙ্গেজি ইউনিভার্সিটির চীন নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সিন-সিয়েন ওয়াং বলেছেন, ''প্রথম থেকেই রাজনৈতিক বিরোধীদের সরিয়ে দিতে বাছাই করা মানুষের উপর দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালিয়েছেন।''
শি জিনপিংয়ের চিন্তাভাবনা
ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করার পাশাপাশি শি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। তার নাম দেয়া হয় 'শি জিনপিংয়ের চিন্তাভাবনা'। সেটাই দলের কাছে নীতিনির্ধারক হয়। ওয়াং জানিয়েছেন, ''শি বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচিও নিয়েছিলেন। কিন্তু মতাদর্শের প্রশ্নে তিনি তার চিন্তাভাবনা অনুসারে বেশ কিছু আইন পাস করেন।''
শি জিনপিং থট বা চিন্তাভাবনায় তিনটি ক্ষেত্রে ক্ষমতা আরো কুক্ষিগত করার কথা রয়েছে। সেগুলি হলো, দেশ, দল ও শি-র নিজের জন্য।
দলে নিজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার পর শি সেখানে কিছু সংস্কার চালু করেন। তিনি দেঙ-এর থেকে ভিন্নপথ নিয়ে সকলের জন্য সমৃদ্ধি বা কমন প্রসপারিটির কথা বলেন। ওয়েং বলেছেন, ''দেঙ-এর থেকে সরে এসে তিনি শি জিনপিংয়ের লিগ্যাসি শুরু করেন।''
অ্যামেরিকা-ভিত্তিক চীনা বিশেষজ্ঞ তেং বিয়াও বলেছেন, ''চীনা কমিউনিস্ট পার্টির যৌথ নেতৃত্ব থেকে পুরো নেতৃত্ব শি-কেন্দ্রিক হয়ে যাওয়াটা বিশাল পরিবর্তন। শি যখন ক্ষমতায় এলেন, তখন চীনের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন শুরু হলো।'' ১৯৪৯ সাল থেকে কমিউনিস্ট পার্টিই চীন শাসন করছে।
শি-র ক্ষমতায় থাকা আরো মসৃণ করার জন্য কমিউনিস্ট পার্টি প্রেসিডেন্ট পদে থাকার সময়সীমাও বাড়িয়ে দিয়েছে। দলের ২০তম পার্টি কংগ্রেসে ঠিক হয়, যতবার খুশি একজন প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন। তারপরই শি জিনপিং তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তেং বলেছেন, অনেক পশ্চিমা দেশ মনে করত, চীন ধীরে হলেও গণতন্ত্রের পথে যাবে। কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি।
সমাজের উপর নিয়ন্ত্রণ
শি সুশীল সমাজের উপরেও নিজের নিয়ন্ত্রণ জোরালো করেছেন এবং গত ১০ বছরে ব্যাপক ধরপাকড় করেছেন। তিনি কয়েকশ মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছেন। অনেকে জেলে বন্দি। অনেকে আর মানবাধিকারের বিষয় নিয়ে লড়াইয়ের জায়গায় নেই।
তেং বলেছেন, সিভিল সোসাইটির জন্য খুবই কম পরিসর রয়েছে। শি ক্ষমতার আসার পর মানবাধিকার আইনজীবী, ফ্যামিলি চার্চ, নারীদের আন্দোলন, এনজিও-র উপর প্রবল কড়াকড়ি ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাদের কাজ করার জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে।
এছাড়া চীন শিনজিয়াংয়ে প্রচুর সংখ্যক উইগুর মুসলিম ও অন্য জনজাতিকে শিবিরে রেখেছে। পশ্চিমা দেশগুলি বারবার এর নিন্দা করেও কিছু করতে পারেনি।
হংকংয়েও তারা একইরকম দমন-পীড়নের নীতি নিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চীন বিষয়ক ডিরেক্টর সোফিয়া রিচার্ডসন বলেছেন, হংকং ও শিনজিয়াংয়ের অবস্থা প্রায় একইরকমের।
আন্তর্জাতিক উচ্চাশা
শি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছেন। তিনি বিপুল অর্থব্যয়ে সড়ক নির্মাণ প্রকল্প নিয়েছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বিস্তার করেছেন, জাতিসংঘের উপরও প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছেন। তার কূটনীতি হলো রীতিমতো আক্রমণাত্মক। এই কূটনীতির নামই হয়েছে 'উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি'।
উইলিয়াম ইয়াং/জিএইচ (ডিডাব্লিউ)