1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেরালার বিধ্বংসী বন্যার জন্য দায়ী প্রকৃতি, না মানুষ?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২১ আগস্ট ২০১৮

কেরালার ভয়াবহ বন্যার জন্য প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন এ পর্যন্ত অন্তত ৪০০ মানুষ৷ ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চলেছে যুদ্ধকালীন অবস্থার ভিত্তিতে৷

https://p.dw.com/p/33UAt
Monsun in Indien Überschwemmungen in Kerala
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Rahi

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কেরালা গলাজলে ভাসছে৷ কেরালা বৃষ্টিপ্রধান রাজ্য হলেও এ বছরের বন্যার জন্য পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নানা মত৷ পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ সৌমিত্র মুখোপাধ্যায় জানালেন এর জন্য প্রকৃতি ও মানুষ সমান দায়ী৷

কেরালার চোখে জল৷ গত ৯ই আগস্ট থেকে এক নাগাড়ে মুষলধারে বৃষ্টির জন্য ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কেরালার জনজীবন বিপর্যস্ত৷ এমনিতে কেরালা বৃষ্টিপ্রধান রাজ্য হলেও এ বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় ২৫০ শতাংশ বেশি৷ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, জলমগ্ন ৯ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি৷ জলবন্দি হাজার হাজার মানুষ৷ বন্যার পরে নানা রোগের প্রাদুর্ভাবের আশংকা৷ পুনর্বাসন এবং ওষুধপত্রের বন্দোবস্ত চলেছে পাশাপাশি৷ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১১ লাখ মানুষ৷ কেরালায় বৃষ্টিপাত নতুন কিছু না হলেও এই ধরণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি গত ৯০ বছরের মধ্যে আর হয়নি৷ এর কারণ নিয়ে পরিবেশ ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নানা মত৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং মানুষের অবিমৃষ্যকারিতা, বিভিন্ন কারণে ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ভৌগলিক দিক থেকে আজ বিপন্ন৷ লাগাতার চলছে পাথরকাটা, খনিজ সম্পদের লোভে খনন, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন এবং নদীবক্ষে বড় বড় নির্মাণ যার অনিবার্য কারণ ভূমিধস৷ সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকা সত্বেও তা কাজে না লাগানো পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অবস্থানগত এইসব চ্যালেঞ্জ কেরালার এই আকস্মিক বন্যা বিপর্যয়ের মূলে৷

Dr._S_Mukherjee - MP3-Stereo

কেরালার এই ভয়াবহ বন্যার কারণ জানতে চাইলে দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ ডঃ সৌমিত্র মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘প্রকৃতিতে যে পরিবর্তন আসছে সেটাকে জলবায়ু পরিবর্তন বা ক্লাইমেটিক চেঞ্জ বলা হচ্ছে৷ আমাদের টোটাল হাইড্রোলজিক্যাল আবর্ত থেকে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব অল্প, ০.০০১শতাংশ৷ কিন্তু তারমধ্যে যদি কিছু পরিবর্তন হয় যেমন এ বছর যে পরিমাণ গরম পড়েছিল, তাতে বাষ্পীভবন বেশি হয়েছে৷ আর বাষ্পীভবন বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণটাও বেশি হয়েছে৷ তবে হ্যাঁ, বৃষ্টির পরিমাণ সারা বছর যতটা হয়, এ বছর ততটাই হয়েছে৷ কিন্তু বৃষ্টির চরিত্রটা গেছে বদলে৷ অল্পদিনের মধ্যে প্রবল বর্ষণ হয়েছে কিছু কিছু এলাকায়৷ সব জায়গাতে সমানভাবে হচ্ছে না৷ কিছু কিছু জায়গায় অনাবৃষ্টি, কিছু কিছু জায়গায় প্রবল বৃষ্টি৷ এটাই হল জলবায়ু পরিবর্তনের ফল৷

কেরালায় ভয়াবহ বন্যা, নিহত অন্তত ১৬৪

পিঠ পেতে দুর্গতদের উদ্ধারের যে ভিডিও ভাইরালআর আমরা যদি মানুষের প্রভাব দেখি, সেটাও কম নয়৷  যেভাবে আমরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছি, যেভাবে আমরা জমি ব্যবহার করছি সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ কারণ নয়৷ জনসংখ্যা বাড়ার জন্য বেশি বেশি ঘরবাড়ি বানাচ্ছি, গাড়ির পার্কিং-এর জায়গাগুলোকে কংক্রিট দিয়ে মুড়ে দিচ্ছি যারজন্য বৃষ্টির জল মাটির নীচে চুঁইয়ে যেতে পারে না৷ জমির ব্যবহার ঠিকমত না হওয়ার জন্য নানা রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে৷ আসলে জলবায়ু পরিবর্তন মানুষ ও প্রকৃতি দুটোর মিলিত প্রভাব৷ একদিকে মানুষের কর্মকাণ্ড অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়৷ যেমন ২০১৩ সালে হিমালয়ের কেদারনাথে মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি এবং হড়পা বানে যে ধরণের বিপর্যয় হয়েছিল, তারমধ্যে মানবসৃষ্ট কারণও ছিল৷ যেমন কেদারনাথ এলাকায় যে ধরণের নির্মাণ কাজ হয়েছিল, সেটা ঐসব এলাকার উপযুক্ত ছিল না৷ কেরালাতেও জনসংখ্যা বাড়ার ফলে জমির ব্যবহার সেভাবে হয়নি৷ বনাঞ্চল ধ্বংস করলে তার নেতিবাচক পরিণাম অবশ্যই থাকবে৷ বনাঞ্চল ধ্বংস করলে ভূমিধস হবে৷ বৃষ্টির জল গাছপালায় না পড়ে সোজা পড়বে মাটিতে৷ বন্যার জলের তোড় লোকালয়ে ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে, ডয়চে ভেলেকে বললেন, পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ সৌমিত্র মুখোপাধ্যায়৷

কারো কারো মতে, কেরালায় একসঙ্গে চারটি বাঁধের জল একসঙ্গে ছাড়ার ফলে নাবাল এলাকাগুলি দ্রুত জলমগ্ন হয়৷ এটা নাকি তাঁদের মতে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল৷ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনাও কম দায়ী নয়৷ সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের আগেই এটা বোঝা উচিত ছিল৷ দ্বিতীয়ত, আবহাওয়ার পূর্বাভাসকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি৷ পশ্চিমী হাওয়া আরবসাগরে উত্তপ্ত হলে আর্দ্রতা বাড়ে বর্ষাকালে৷ গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলির আবহাওয়া পশ্চিমী দেশগুলির মত নয়৷ কলকাতা, মুম্বাই, ঢাকা ও করাচিতে ছয় কোটি লোকের বাস সেখানে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি বেসি হওয়াই স্বাভাবিক৷

করণীয় কী?

চলতি বছরের মার্চ মাসে সংসদে পেশ করা জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়, বর্ষাকালে লাগাতার বৃষ্টি ও বন্যার আশংকা থেকে যায়৷ কাজেই এজন্য উপযুক্ত জলনিকাশি অবকাঠামো জরুরি৷ পরিকল্পনাহীনভাবে জলাধার নির্মাণে বিধিনিষেধ, বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত কাঠামো তৈরি করা ইত্যাদি৷

দেশবিদেশ থেকে ত্রাণ সাহায্য আসছে উদার হস্তে৷ কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই কেরালার বন্যা দুর্গতদের জন্য ৫০০ কোটি মঞ্জুর করেছে৷ সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস৷ উপসাগরীয় দেশগুলিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ কেরালায় আটকে পড়া ২০০০ বাঙালি শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল দপ্তর৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য