মহাবিপদে বিবিসি
২৫ অক্টোবর ২০১২দর্শক-শ্রোতাদের সামনে হাজির হতেন চকচকে ট্র্যাকস্যুট, ঝকমকে সোনার চেইন, আংটি পরে৷ সবসময় ঠোঁটে থাকতো সিগার৷ ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত ছিলেন বিবিসি টেলিভিশনের তারকা উপস্থাপক৷ নাম জিমি স্যাভেল৷ দু'সপ্তাহ আগে তাঁর নামের এইটুকু বললে কেউ কেউ নিশ্চয়ই আপত্তি করতেন৷ স্যার জেমস উইলসন ভিনসেন্ট স্যাভেল – এত বড় নাম থেকে ‘স্যার' বাদ দেয়া বড় ভুল হিসেবেই গণ্য হতো! যে কেউ চাইলেও কি ‘স্যার' হতে পারেন? কিন্তু জিমি স্যাভেল এমনই অপকর্ম করেছেন বলে খবর যে এখন সুকীর্তির জন্য ব্রিটিশ রাজের খেতাব পাওয়ার ব্যাপারটি ব্রিটিশদেরই ফেলছে লজ্জায়৷
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগটা মারাত্মক৷ কর্মজীবনে অসংখ্য নারীর ওপর যৌন নিপীড়ণ চালানো৷ অভিযোগ উঠেছিল আগেই৷ সত্তরের দশকে লন্ডনের অদূরে সারে-তে পুলিশ চারটি অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছিল৷ পরে আইনজীবীরা তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ না আনার সিদ্ধান্ত নেন৷ বিবিসিও পুরোপুরি চেপে যায় ব্যাপারটা৷ গত বছরের অক্টোবরে ৮৪ বছর বয়সে মারা যান স্যাভেল৷ সাবেক কর্মস্থল তাঁর প্রতি আরো সহানুভূতি দেখায় তারপর৷ যত তোলপাড় সে কারণেই৷
দু'সপ্তাহ আগে পুরো ব্যাপারটি ফাঁস করে দেয় আইটিভি৷ বিবিসির প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত করে ফেলা আইটিভির কাছে বেশ কয়েকজন নারী সবিস্তারে জানান স্যাভেলের হাতে নিগৃহীত হওয়ার কথা৷ তা জানাজানি হবার পর থেকেই বিবিসিকে নিয়ে শুরু হয়ে গেছে তুমুল উত্তেজনা৷
বুধবার ডেভিড ক্যামেরনও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিষয়টি নিয়ে৷ সত্যকে আড়াল করার কারণে বিশ্বখ্যাত প্রচারমাধ্যমটির নিন্দা করে ঘটনা নতুন করে তদন্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
এদিকে ব্রিটেনের সরকারের প্রতি আবার নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়ে দিয়েছে বিবিসি৷ সংস্থার ট্রাস্টি চেয়ারম্যান ক্রিস প্যাটেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি লিখেছেন, সেখানে তিনি বিবিসির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন সরকারকে৷ এর আগে এমন কলঙ্কজনক ঘটনার জন্য সংসদে উপস্থিত হয়ে জবাবদিহি করতে হয়েছে জর্জ এন্টউইসলকে৷ বিবিসি মহাপরিচালক অবশ্য স্যাভেলের বিরুদ্ধে তদন্ত না করার ব্যাপারে নিজেকে নির্দোষ বলেই দাবি করেছেন৷ আরেকটি অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে৷ স্যাভেল মারা যাওয়ার পর যৌন নিপীড়নের অভিযোগের কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়েছিল তাঁকে, বলা হয়েছিল এমন অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তাঁর সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠান করা ঠিক হবে কিনা ভেবে দেখতে৷ এন্টউইসলকে কথাটা বলেছিলেন বিবিসির হেড অফ নিউজ হেলেন বোয়াডেন৷ তখনও বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেয়ায় বিবিসি মহাপরিচালকের পদত্যাগ করা উচিত, তাঁর সাজা হওয়া উচিত – এমন দাবিও উঠেছে৷
এদিকে বিবিসির সাবেক মহাপরিচালক মার্ক থম্পসনকেও সংসদে উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি সম্পর্কে তাঁর ভূমিকা পরিষ্কার করতে বলেছেন কয়কেজন আইন প্রণেতা৷ সঙ্গে সঙ্গেই এক চিঠিতে তাঁর জবাব দিয়েছেন থম্পসন৷ নিজেকে নির্দোষ দাবি তো করেছেনই, সঙ্গে আরো জানিয়েছেন, সংসদ চাইলে যে কোনো সময় হাজির হবেন তিনি৷ এন্টউইসলের আগে বিবিসির মহাপরিচালক ছিলেন মার্ক থম্পসন৷ আগামী নভেম্বরেই প্রধান নির্বাহী হিসেবে তাঁর দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে যোগ দেয়ার কথা৷
এসিবি/ডিজি (এএফপি)