ক্রসফায়ারে দেয় এমপি, না পুলিশ?
১৯ জুলাই ২০১৭বাংলাদেশের ট্যাবলয়েড দৈনিক ‘মানবজমিনকে' এক সাক্ষাৎকারে সাভারের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান বলেছিলেন, ‘‘সাভারে অনেক ক্যাডার আর মাস্তান ছিল৷ এখন সব পানি হয়ে গেছে৷ কারও ‘টু' শব্দ করার সাহস নেই৷ পাঁচজনকে ক্রসফায়ারে দিয়েছি, আরো ১৪ জনের লিস্ট করেছি৷ এখন সব ঠান্ডা৷ লিস্ট করার পর যে দু'একজন ছিল তারা আমার পা ধরে বলেছে, আমাকে জানে মাইরেন না৷ আমরা ভালো হয়ে যাবো৷''
কিন্তু ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে ডা. এনামুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ঠিক ওভাবে বলিনি৷ ওরা ঘুরিয়ে লিখেছে৷ আমি বলেছি, পুলিশ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে৷ আরো ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তালিকা হচ্ছে৷ এ সব কারণে সাভারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হয়েছে৷''
এই ব্যবস্থার মানে কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ক্রসফায়ার? আমি তো ক্রসফায়ার দেই না৷ এটা দেয় পুলিশ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ তাদের ওপর হামলা হয়, তারাও জবাব দেয়৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘অপারেশন ক্লিনহার্ট এবং এখন যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে (ক্রসফায়ার) তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে৷ মানুষ ভালো আছে৷''
সাভারে ক্রসফায়ারের জন্য ১৪ জনের তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা হয়েছে৷ যাদের বিরুদ্ধে আটটির বেশি মামলা আছে, তারাই এই তালিকায় আছে৷''
তাহলে তাদেরও কি ক্রসফায়ারে দেয়া হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''
তাঁর কথায়, ‘‘ওই পাঁচজনকে গত চার বছরে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়েছে৷ তারা সন্ত্রাসী এবং বহু মামলার আসমি৷''
দু-একজন আপনার হাত-পা ধরে ক্রসফায়ার থেকে নাকি রেহাইও পেয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এমন কথা আমি কোথাও বলিনি৷ এটা ডাহা মিথ্যা কথা৷''
এদিকে মানবজমিনে প্রকাশিত প্রতিবদেনের প্রদিবেদক কাজী সোহাগ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এমপি ডা. এনামুর রহমান আমাকে যা বলেছেন, তাই উদ্ধৃত করা হয়েছে৷ তাঁর কথার রেকর্ডিং আমার কাছে আছে৷ তাঁর অনুমতি নিয়েই তাঁর সাক্ষাৎকার রেকর্ড করা হয়৷ গোপনে ধারণ করা হয়নি৷''
কাজী সোহাগ বলেন, ‘‘আমি ক্রসফায়ার নিয়ে কোনো প্রশ্ন তাঁকে করিনি৷ তিনি নিজেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে পাঁচজনকে ক্রসফায়ারে দেয়ার কথা বলেছেন৷ বলেছেন ১৪ জনের তালিকা করার কথাও৷ তাঁর কথা হুবহু উদ্ধৃত করা হয়েছে আমাদের পত্রিকায়৷''
সংসদ সদস্য এনামুর রহমান এখনো (বুধবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত) কোনো প্রতিবাদ পাঠনননি বলে জানান কাজী সোহাগ৷
রানা প্লাজা ধসের পর ডা. এনামুর রহমান সাভারে তাঁর নিজম্ব ক্লিনিক এনাম মেডিক্যালে আহতদের চিকিৎসা দিয়ে আলোচনায় আসেন এবং প্রশংসিত হন৷ এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হন তিনি৷ এর আগে সাভারের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগেরই তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ৷
ডা. এনামুরের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে সাভারের সরকার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা কোনো সুস্থ মানুষের কথা না৷ কোনো সুস্থ মানুষ এটা বলতে পারেন না৷ এটা তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এখতিয়ার৷ জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কাজ হলো জনগণের নিরাপত্তা দেয়া৷''
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কি তালিকা করে ক্রসফায়ারে দেয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আই ডোন্ট থিংক সো৷''
বন্ধু, আপনার কী মনে হয়? ক্রসফায়ারে দেয় এমপি, না পুলিশ? জানান নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷