ক্ষমতায়নের পথে তথ্যকল্যাণীরা
১৮ জুন ২০১৩আলোচনা সভা বা প্যানেলটির নাম ‘অকুপায়িং দ্য ফিউচার: সোশ্যাল মুভমেন্টস, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড দ্য ফাইট ফর ইকনমিক জাস্টিস'৷ সহজ করে বললে, সামাজিক অধিকার আন্দোলন, সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলির ব্যবহার এবং সমাজে অর্থনৈতিক সমতা আন্দোলন ভবিষ্যতে কোন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে – তার একটা রূপরেখা টানাই ছিল আলোচনা সভার মূল বিষয়বস্তু৷
বাংলাদেশের এই তথ্যকল্যাণীর সহবক্তা ছিলেন ‘ইনফোলেডি' প্রকল্পের প্রধান মো. মোশাররফ হোসেন এবং দুটি জার্মান সংস্থার প্রতিনিধি, ‘ফ্রেইসার'-এর লুকাস ক্রিস্টিয়ান ফিশার এবং ‘চেঞ্জ.অর্গ'-এর পাউলা হানেরমান৷
আলোচনা শুরু হয় মাহফুজাকে দিয়েই৷ প্রথমবার জার্মানিতে আসা, প্রথমবার এত বড় একটা সম্মেলনে অংশগ্রহণ৷ অথচ তারপরও মাহফুজা যখন নিজের কথা বলতে শুরু করেন, তখন স্তব্ধ হয়ে যায় সমস্ত সভা-ঘর৷ ধীরে ধীরে তিনি বলতে থাকেন তাঁর রোজকার ‘রুটিন'৷ প্রতিদিন সকালে কীভাবে তিনি প্রথমেই ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করেন, তারপর মোবাইল ফোন, সৌরশক্তিচালিত ল্যাপটপের মতো আর কী কী সরঞ্জাম এবং সঙ্গী সাইকেলটিকে নিয়ে তিনি বের হন কাজে, গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে...
না, মাহফুজা ইংরেজি জানেন না৷ তাই তাঁর জন্য দোভাষীর ব্যবস্থা থাকে৷ তবে তাতে কোনো অসুবিধা হয় না৷ বরং বাংলায় বাংলাদেশের সমস্যা যেন উপস্থিত দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়৷ কীভাবে এই তথ্যকল্যাণীরা তথ্যের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করছেন, কীভাবে সুবিধাবঞ্চিত নারী-শিশু-কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্যভিত্তিক সিডি দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে আইনি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করছেন এবং ইন্টারনেট বা ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে কীভাবে তাঁরা আপনজনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন – তা সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়৷
সবচেয়ে অবাক করার বিষয় এর মাধ্যমে গ্রামবাংলার এই তথ্যকল্যাণীরা নিজেদের যেমন আর্থিকভাবে সাবলম্বী করে তুলছেন, তেমনই অন্যদেরও আর্থিকভাবে লাভবান করছেন৷ শুধু তাই নয়, তথ্যের অধিকার সম্পর্কে মানুষ সচেতন হওয়ার ফলে দেশে দুর্নীতির মাত্রাও যে কমছে৷ আসলে এই ক্ষমতায়ন, সে যে পর্যায়েরই হোক না কেন, এটাকেই তুলে ধরা হয়েছে আলোচনা সভায়৷
এই যেমন, জার্মানির মানুষ অনলাইনে জিনিসপত্র কিনতে ভালোবাসে৷ কিন্তু কেনার সময় সেই টাকা কোথায় যায়? কারা পায়? লুকাস ক্রিস্টিয়ান ফিশার এ প্রশ্নেরই উত্তর দেন৷ ঐ অর্থ যাতে কোনো একটা ভালো কাজে, সামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার করা হয় – তার জন্যই উনি তৈরি করেছেন ‘ফ্রেইসার'৷ এর মাধ্যমে মানুষের অর্থ বিভিন্ন এনজিও বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কাজে লাগানো হয়৷
পাউলা হানেরমানের ‘চেঞ্জ.অর্গ' সামাজিক আন্দোলনে উৎসাহী মানুষকে বিনা পয়সায় সহায়তা করে৷ সোশ্যাল মিডিয়া তথা সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলির মাধ্যমে কীভাবে নিজ অধিকারের জন্য লড়াই করা যায়, সেটাই শেখায় সমাজ পরিবর্তনে বদ্ধপরিকর এই সংস্থা৷
আর বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী, ‘ইনফোলেডি' মাহফুজাও কিন্তু সেটাই করছেন৷ তথ্য দিয়ে শক্তি জোগাচ্ছেন নারী-পুরুষ, শিশু-তরুণী, শ্রমিক-কৃষকদের৷ তাই তো, মোশাররফ হোসেনের স্বপ্ন একদিন বিমান থেকে বাংলাদেশের মাটির দিকে তাকালে যেন চোখে পড়ে গোলাপি-নীল পোশাকের অসংখ্য কল্যাণী ‘ইনফোলেডি'-দের, আমাদের তথ্যকল্যাণীদের৷