গড় আয়ু বৃদ্ধি কি প্রবীণদের ভোগান্তি বাড়াবে?
২ জানুয়ারি ২০১৫আমরা, বাংলাদেশিরা আবেগপ্রবণ৷ তাই আমাদের প্রবীণরা সম্পদ থাকা বা না থাক – সন্তানের, আপনজনের সান্নিধ্যে থাকতে তাঁরা পছন্দ করেন৷ শেষ বয়সে নিজ সন্তানের কাছ থেকে তাঁরা সেবা, সময় আশা করেন৷
সমস্যা হচ্ছে, বর্তমান যুব সমাজ সম্ভবত প্রবীণদের এই আবেগটুকু বুঝতে পারেন না৷ যৌথ পরিবারের ধারণাও ক্রমশ উঠে যাচ্ছে৷ তরুণ প্রজন্ম উন্নত জীবনের আশায় গ্রাম কিংবা মফস্বল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন শহরে৷ বাবা-মাকে রেখে যাচ্ছেন গ্রামে৷ তাই প্রবীণ বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা হয়ে যাচ্ছেন আরও অসহায়৷ শেষ বয়সে যে সময়টা তাঁদের শান্তিতে থাকা উচিত, সেই সময়টাও তাঁদের কাটছে দুশ্চিন্তায়, হতাশায়৷
অবশ্য যেসব প্রবীণ শহরে থাকেন, তাঁদের অবস্থা যে খুব ভালো তাও বলা কঠিন৷ কথা হচ্ছিল হেল্পএজ ইন্টারন্যাশনালের সেগুফতা শারমিনের সঙ্গে৷ প্রবীণদের অধিকার নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থাটির ‘অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স কোর্ডিনেটর' তিনি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং হেল্পএজের এক জরিপের ভিত্তিতে তিনি জানান, শহরের বস্তিতে বসবাসরত প্রবীণদের মধ্যে ৫৪ শতাংশই পরিবারের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন৷
গণমাধ্যমেও মাঝে মাঝে এ রকম খবর প্রকাশ হয়৷ সম্পদের দখল নিতে মাকে নির্যাতন করছেন সন্তান৷ অনেক সময় স্ত্রীর চাপে পিতা-মাতাকে দিয়ে আসছেন বৃদ্ধাশ্রমে৷ কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটি খবর শেয়ার করেছিলেন অনেক মানুষ৷ বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এক মা তাঁর সন্তানের কাছে আকুতি জানিয়েছেন যে, মারা গেলে নাকের নাকফুলটি বিক্রি করে যাতে তাঁকে দাফন করা হয়৷ কতটা কষ্ট থেকে একজন মা এমন কথা বলতে পারেন, সেটা সহজেই বোঝা যায়৷
আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩' চালু করেছেন৷ এই আইনের আওতায় ভরণ-পোষণে ব্যর্থতার জন্য সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে, আর সেই অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তিন মাস কারাভোগের সাজারও ব্যবস্থা রয়েছে৷ সেগুফতা শারমিন অবশ্য জানান, আইন হলেও বিষয়টি প্রচার কম হয়েছে৷ তাই অনেক মানুষ এটার কথা জানেনা৷ আর আইনটি প্রয়োগও হচ্ছে কম৷
সাগুফতা জানান, বাংলাদেশে প্রবীণদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে৷ এই বেড়ে চলা মানুষদের সহায়তার জন্য যে প্রস্তুতির দরকার, তা নেই৷ তাছাড়া সবার জন্য সামাজিক ভাতাও নেই৷ সব মিলিয়ে তাই বাংলাদেশে ষাটোর্ধ ১১ দশমিক দুই মিলিয়ন মানুষ খুব যে ভালো আছেন সেটা বলার সময় এখনো আসেনি৷
তবে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বা প্রবীণরা সবাই মন্দ আছেন, ব্যাপারটা তেমনও নয়৷ তবে দুশ্চিন্তা যাঁরা কষ্টে আছেন, তাঁদের নিয়ে৷ আমার মনে হয়, ভরণপোষণ আইনের পাশাপাশি এ বিষয়েও সচেতনতা বাড়াতে হবে৷ বর্তমান নবীন প্রজন্মকে নিজেদের ভবিষ্যতটাও যে ভাবতে হবে! নিজেদের বসাতে হবে বর্তমান প্রবীণদের জায়গায়৷ কারণ, একটা সময় আজকের তরুণরাও যে প্রবীণ হবেন, বৃদ্ধ হবেন৷ তাহলেই তাঁরা বুঝবেন যে নিজেদের দায়িত্ব পালন করাটা আসলে কতটা প্রয়োজনীয়৷
তাই সামাজিকভাবে প্রবীণদের সঙ্গে নবীনদের সম্পর্কটা আরো মজবুত করার উদ্যোগ নিতে হবে৷ আর প্রবীণদের আর্থিক দিকটাও যাতে ঠিক থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷ তাঁদের চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিৎ এবং সহজ করতে হবে৷ কাজ অনেক, তাই এগোতে হবে পরিকল্পনা করে৷