গাজীপুরে মসজিদ এখন খুলবে না: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
২৯ এপ্রিল ২০২০তিনি বলেছেন, ‘‘গাজীপুরের মেয়র সরকারের আদেশ অমান্য করেছেন৷ তিনি আমাদের ফোন ধরছেন না৷ আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছি৷’’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘ওনার ঘোষণায় কিছু আসে যায় না৷ এই ঘোষণা দেয়ার কোনো এখতিয়ার মেয়রের নেই৷’’
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় সামাজিক দূরত্ব মেনে নগরের মসজিদগুলোতে শুক্রবার থেকে নামাজ পড়ার ঘোষণা দেন৷
বুধবার ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য জানিয়ে তার বর্তমান সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন ফলো করে আমরা মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ দেবো৷’’ এরপর তিনি আর কোনো কথা না বলে ফোন লাইন কেটে দেন৷ তারপর বারবার চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি৷
করোনা প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সাধারণ নামাজে ৫ জন, জুমার নামাজে ১০ জন এবং তারাবির নামাজে ১২ জনের বেশি অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়৷ ধর্মমন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত দেশের সব মসজিদ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে৷
বুধবার টেলিফোনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘গাজীপুরের মেয়র যে ঘোষণা দিয়েছেন তা সরকারের নির্দেশনার বিরুদ্ধে যায়৷ তার সঙ্গে ওই ঘোষণার পর আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি৷ তিনি আমাদের ফোন ধরছেন না৷ আমরা গাজীপুরের প্রশাসন এবং পুলিশকে বলে দিয়েছি৷ এখন তারাই ব্যবস্থা নেবেন৷ কোনোভাবে গাজীপুরের মেয়রের মসজিদ খুলে দেয়ার ঘোষণা কার্যকর হবে না৷ তার ঘোষণায় সরকার ক্ষুব্ধ৷ সরকারের নির্দেশের বাইরে কিছু হওয়ার সুযোগ নেই৷ মেয়র নিজেই আরেকটি ঘোষণা দিয়ে মসজিদ খুলে দেয়ার ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবেন৷’’
এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদও গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মসজিদ স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়ার জন্য খুলে দেয়ার সুযোগ নেই৷ মেয়র সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েছেন৷ সরকারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে৷’’
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুরের মেয়র বলেন, ‘‘পোশাক কারখানা যেহেতু খুলে দেয়া হয়েছে তাই আমি মসজিদও খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছি৷ আমার এলাকায় কোনো করোনা আক্রান্ত নেই৷ তাহলে মসসিদে নামাজ পড়া বন্ধ থাকবে কেন? রমজানের সময় সবার মসজিদে নামাজ পড়তে দেয়ার সুযোগ থাকা উচিত৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ পড়া হবে৷ মসজিদের বাইরে কেউ নামাজ পড়তে পারবেন না৷ এক এলাকার লোক অন্য এলাকার মসজিদে নামাজ পড়তে পারবেন না৷’’
তবে বুধবার গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম সরবারের নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘শুক্রবার যাতে স্বাভাবিক নামাজের জন্য মসজিদ খোলা না হয় সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেবো৷ সরকারের যে নির্দেশনা তা বহাল রাখতে আমরা সবকিছু করবো৷’’
এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি৷
তবে গাজীপুরের মেয়রের মসজিদ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তকে হঠকারী এবং অবিবেচনাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-র মহাসচিব অধ্যাপপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী৷ তিনি একইসঙ্গে পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গাজীপুরের মেয়র না বুঝে অথবা রাজনৈকিভাবে ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগোনোর জন্য মসজিদ খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ এটা হলে ভয়াবহ বিপর্যয় হবে৷ তিনি জানেন না যে, তার এলাকায় করোনা আক্রান্ত কেউ আছেন কিনা৷ কারণ, উপসর্গ ছাড়াই অনেক করোনায় আক্রান্ত আছেন৷ তাদের একজনও যদি মসজিদে যান তাহলে সবার মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ আর সাধারণ মাস্ক পরে বা কথিত সামাজিক দূরত্ব মেনে সব সময় করোনা প্রতিরোধ করা যায় না৷ যারা মসজিদে নামাজ পড়তে যাবেন, তারা এটা কিভাবে মানবেন! তখন তো প্রতিযোগিতা তৈরি হবে৷ আর এক এলাকার মসজিদ খুলে দিলে সারাদেশে এর প্রভাব পড়বে৷ সবাই ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লগিয়ে মসজিদ খুলে দিতে চাইবে৷’’
পোশাক কারখানা খুলে দেয়াকেও তিনি অবিবেচনাপ্রসূত মনে করেন৷ তার কথা. ‘‘যদি খুলতেই হতো, তাহলে পোশাক শ্রকিদের সবাইকে প্রথমে ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে রাখতে হতো৷ তারপর যারা আক্রান্ত নন তাদের কারখানার ভিতরে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢুকতে দিতে হতো৷ কিন্তু তা করা হয়নি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এরইমধ্যে আমরা কয়েকজন পোশাক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত বলে খবর পেয়েছি৷ একজন তো টেস্ট দিয়ে কারখানায় চলে গেছেন৷ এখন জানা গেছে, তার করোনা পজিটিভ৷ এই পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে এখন করেনা ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷’’
প্রসঙ্গত, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে মোট আটটি থানা এলাকায় সরকারি হিসেবে ৬৭৫টি মসজিদ আছে৷