গাড়ি মানেই শব্দ, স্থির করেন ডিজাইনার
২৪ মে ২০১৪মাত্র সাড়ে চার সেকেন্ডে শূন্য থেকে একশো! সর্বোচ্চ স্পিড ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার৷ স্পোর্টস কার ভক্তদের কাছে ‘পর্শে ৯১১' মডেল এক স্বপ্নের মতো৷ কোম্পানির দুই কর্মী মূল বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন৷ পর্শে কোম্পানির ব্যার্নহার্ড ফেফলিন বলেন, ‘‘এই সাউন্ড আসলে আবেগ আর গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতাকেই আরও জোরদার করে৷ তাই আমার কাছে সাউন্ড এক মৌলিক বিষয়৷''
দুই অ্যাকুস্টিক ডিজাইনার কোম্পানির গবেষণা কেন্দ্রে প্রত্যেকটি মডেলের শব্দ নিয়ে কাজ করেন৷ তাঁদেরই ইচ্ছা অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়াররা কখনো ভেন্টিলেশন, কখনো বা ধোঁয়ার পাইপে রদবদল করেন৷ এর মাধ্যমে ইঞ্জিনের শব্দে রকমফের ঘটে৷ পরীক্ষার সময় ইঞ্জিনিয়াররা অবশ্য শুধু নিজেদের কানের উপর ভরসা করেন না৷ এক কৃত্রিম মাথা মানুষের শ্রবণশক্তির অনুকরণ করে৷ এ ছাড়া একঝাঁক মাইক্রোফোনের মাধ্যমেও ইঞ্জিনের শব্দ রেকর্ড করে বিশ্লেষণ করা হয়৷
প্রয়োজনে ইঞ্জিনের মধ্যে রদবদল করা হয়৷ যে কোনো নতুন মডেল নিয়ে ভাবনা-চিন্তার স্তরেই অ্যাকুস্টিক ডিজাইনারদের ডাক পড়ে৷ ব্যার্নহার্ড ফেফলিন বলেন, ‘‘কনসেপ্ট পর্যায়ে ইঞ্জিন বা গাড়ি – কিছুই থাকে না৷ অর্থাৎ কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমেই সবকিছু করা হয়৷ আমরা বাতাস ঢোকা, ইঞ্জিন আর বাতাস বার হওয়ার প্রক্রিয়া সিমুলেট করে সাউন্ড তৈরি করি৷ অনেক রকম কম্বিনেশন পরীক্ষা করি৷ প্রায় ২৪০ রকম সম্ভাবনা রয়েছে৷''
বার্লিনের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুস্টিক্স বিভাগের ক্লাউস গেনুইট প্রায় ৩০ বছর ধরে গাড়ির শব্দ নিয়ে গবেষণা করছেন৷ নিজের কোম্পানির মাধ্যমে গোটা বিশ্বের গাড়ি নির্মাতাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘জার্মানি বা ইংল্যান্ডের গাড়ির তুলনায় ইটালির গাড়ির শব্দ কিন্তু আলাদা৷ আবার ইউরোপের তুলনায় এশিয়ার গাড়ির চরিত্রে তফাত রয়েছে৷ এশিয়ার গাড়ির ফ্রিকুয়েন্সি তেমন গভীর নয়, শব্দ কম, বেশ আরামদায়ক৷ ইউরোপে, বিশেষ করে ইটালিতে উচ্চ ফ্রিকুয়েন্সির শব্দ হয়, আরপিএম-ও বেশি৷ ইংল্যান্ডে ফ্রিকুয়েন্সি অনেক গভীর৷''
হালের ইলেকট্রিক গাড়ি অ্যাকুস্টিক ডিজাইনারদের নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে৷ বিশেষ করে ধীরে চললে খুবই কম শব্দ হয়৷ এমন গাড়ির স্বয়ংক্রিয় ‘ওয়ার্নিং সাউন্ড' থাকা উচিত কিনা, তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষজ্ঞরা এই মুহূর্তে আলোচনা করছেন৷ তবে প্রশ্নটা শুধু নিরাপত্তার নয়৷ অ্যাকুস্টিক মনোবিদ ক্লাউস গেনুইট বলেন, ‘‘প্রায় ১২৫ বছর ধরে আমরা সাধারণ কম্বাসচান ইঞ্জিনের উন্নতি করে চলার পর জানতে পেরেছি, এমন ইঞ্জিনে কী ভাবে রদবদল করলে বিশেষ এক সাউন্ড তৈরি হয়৷ ফলে এবার ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ কোনো বিবর্তন নয়, বরং বিপ্লব বলা চলে৷ ক্রেতা ঠিক কী চায়, আমরা তা জানি না৷ ক্রেতা কি আদৌ কিছু শুনতে চায়? নাকি শব্দহীন গাড়ি পেয়েই সে খুশি?''
‘পর্শে ৯১১'-এর ফ্যানরা সাউন্ড ছাড়া মডেল পছন্দ করবেন, এমনটা ভাবাই যায় না৷ তবে এই গাড়িটি তো ঠিক দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য নয়৷