1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গানের কথায় ‘অ্যায় খুদা’, মঞ্চ ছাড়তে বলা হলো গায়ককে

২৯ জানুয়ারি ২০২৪

উত্তর ভারত নয়, এমন ঘটনা ঘটেছে খোদ পশ্চিমবঙ্গে। গায়ক স্নিগ্ধজিৎ ভৌমিক। নিজের ফেসবুক পোস্টে এনিয়ে নিজের হতাশার কথা লিখেছেন স্নিগ্ধজিৎ।

https://p.dw.com/p/4bmWf
কলকাতার তিন নারী নামাজ পড়ছেন
পশ্চিমবঙ্গে এক অনুষ্ঠানে ‘অ্যায় খুদা’ গান গাওয়ায় শিল্পী স্নিগ্ধজিৎকে স্টেজ থেকে নেমে যেতে বলা হয় (প্রতীকী ছবি)ছবি: Sudipta Bhoumik/DW

উত্তর ২৪ পরগনায় একটি ক্লাবের অনুষ্ঠান ছিল গত ২২ জানুয়ারি। ঘটনাক্রমে ওই দিনই অযোধ্যায় রামমন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। যা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কয়েক লাখ মন্দিরে পুজোপার্বণ হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় গান গাইতে উঠে রামের ভজন গেয়েছেন স্নিগ্ধজিৎ। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই অরিজিৎ সিংয়ের গাওয়া বিখ্যাত গান অ্যায় খুদা গাইতে শুরু করেন তিনি। আর সেখানেই কাটে তাল। দর্শক এবং আয়োজকদের একাংশ তাকে স্টেজ থেকে নেমে যেতে বলেন। অভিযোগ, রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার দিনে তিনি ‘খুদা’র নাম করছেন।

অনুষ্ঠান শেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের হতাশা, ক্ষোভ ব্যক্ত করেন স্নিগ্ধজিৎ। তিনি লিখেছেন, একজন শিল্পী হিসেবে তিনি কখনো ধর্মের সীমানা টানেন না। একই মঞ্চে তিনি যেমন রামের ভজনও গান আবার সুফি-সাঁইদের গানও করেন। সেখানে কখনো নবির কথা আসে, কখনো খুদা। এর মধ্যে তিনি কোনো অপরাধ দেখতে পান না। পশ্চিমবঙ্গে এমন ঘটনা ঘটায় তিনি রীতিমতো আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন।

এর ঠিক উল্টো ঘটনাও ঘটেছে এই পশ্চিমবঙ্গেই। কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ান আইডল বিজেতা এক গায়ক পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন। সেখানে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি জয় শ্রীরাম বলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়োজকেরা এসে তাকে বলেন, তাকে ‘জয় বাংলা’ বলতে হবে। কারণ, বাংলায় এই স্লোগানই প্রচলিত।

বস্তুত, ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি জয় শ্রীরাম ধ্বনিটিকে কার্যত রাজনৈতিক স্লোগানের মতোই ব্যবহার করছে। তার পাল্টা তৃণমূলের স্লোগান জয় বাংলা। কিন্তু শিল্প-সংস্কৃতির মঞ্চে এই ধরনের স্লোগানের আধিপত্য কখনোই দেখা যায়নি। গানে ‘খুদা’ শব্দটি আছে বলে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলা হয়েছে, এমন ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে এর আগে কখনো ঘটেনি।

দুইটি ঘটনা নিয়েই পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীমহলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। লোপামুদ্রা মিত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘রীতিমতো বিচলিত বোধ করছি। পশ্চিমবঙ্গের মতো জায়গায় এমন যে হতে পারে কল্পনাও করতে পারি না। আমার তো কত গানে মুসলিম পার্বণের কথা আছে। তাহলে কি সে সব গান গাইতে গেলে ভাবতে হবে এখন?’’

লোপামুদ্রার মতোই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গায়ক তীর্থ ভট্টাচার্য। ডয়চে ভেলেকে তিনি লালন ফকিরের গানের কথা বলেছেন-- যদি হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান জাতি, জাতি-গোত্র নাহি রবে, এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে। তীর্থের বক্তব্য, ‘‘এসব যত বরদাস্ত করা হবে, ততই সমস্যা বাড়বে। মঞ্চে দাঁড়িয়েই এর বিরোধিতা করা দরকার।’’

বিজেপি নেতা সৌরভ সিকদার অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘যে কোনো দিনের সঙ্গে ২২ জানুয়ারি দিনটিকে গুলিয়ে ফেললে মুশকিল। ওই দিন রাম মন্দিরে মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। ৫০০ বছর পর রাম ঘরে ফিরেছেন। তা-ই মানুষ অন্য ভাবাবেগে ছিলেন।’’

নামপ্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে ওই অনুষ্ঠানের এক উদ্য়োক্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এমন যে ঘটতে পারে আমরা বুঝতে পারিনি। দর্শকদের একাংশ একাজ করেছে। রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন বলেই হয়তো অনেকের ভাবাবেগে লেগেছে।’’

কিন্তু সত্যিই কি এর সঙ্গে ভাবাবেগের কোনো সম্পর্ক আছে? নাকি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মেরুকরণই স্পষ্ট হয়েছে এই ঘটনাগুলির মাধ্যমে? প্রবীণ সাংবাদিক মিলন দত্তের বক্তব্য, ‘‘এর থেকেই স্পষ্ট তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমবঙ্গ কোন পথে হাঁটছে। আর এর দায় রাজ্যের শাসকদলকেও নিতে হবে। তারা এই জায়গা তৈরি করে দিয়েছে।’’

বস্তুত, মিলন মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাংলার অন্যতম চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন কিছদিন আগে বাংলা ভাষায় পানি, আব্বার ব্যবহার নিয়ে খোঁচা দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সে কথাকে গুরুত্ব দেননি। মঞ্চে দাঁড়িয়েই শুভাপ্রসন্নের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে শিল্পমহলে বার বার এই ঘটনা ঘটছে। আর থেকেই স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় রাজনৈতিক মেরুকরণ কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷