রেলযাত্রীদের জন্য নিরামিষ খাবার!
২৩ মে ২০১৮মহাত্মা গান্ধী নিজে নিরামিষ খেতেন৷ ফলে গোটা দেশ নিরামিষ খাবার খেয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে! হ্যাঁ, বিজেপি এবং আরএসএস-কে খুশি করতে এমন আজগুবি ও অবাস্তব প্রস্তাব পেশ করেছিল ভারতীয় রেল বোর্ড৷
ভারতে প্রতিদিন গড়ে দু'হাজার ট্রেন চলাচল করে৷ গড়ে প্রতিদিন আড়াই কোটি যাত্রীর ভরসা ভারতীয় রেল৷ দূরপাল্লার ট্রেন যাত্রীদের চলন্ত ট্রেনে খাবার পরিবেশন করে রেলেরই অন্য একটি সংস্থা আইআরসিটিসি৷ রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ রেলবোর্ড ক'দিন আগে আচমকা গান্ধীর ১৫০ তম জন্মজয়ন্তী পালনের উদ্যোগ নেয়৷
একগুচ্ছ প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে পাঠায় রেলবোর্ড৷ তাতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বলা হয়, চলতি ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর রেলভবনের মতো রেলের অধীন অন্যান্য ভবন এবং সমস্ত ট্রেনে শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার পরিবেশন করা হবে৷ দেশজুড়ে সমস্ত রেল স্টেশনে শুধু নিরামিষ খাবারই মিলবে৷ এখানেই শেষ নয়, চলতি বছরের মতো আগামী তিন বছর, অর্থাৎ ২০২০ পর্যন্ত এই নিয়ম চলবে৷ যার নাম হবে, ‘ভেজিটেরিয়ান ডে’৷ কিন্তু দেশের স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলিতে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়৷ ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়াতেও৷ শেষমেষ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পিছু হটতে বাধ্য হয় রেলবোর্ড৷
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, গুজরাটের সবরমতী থেকে একটি ট্রেন চালু হবে৷ এর নাম হবে ‘স্বচ্ছতা এক্সপ্রেস’৷ ট্রেনটি গান্ধীজির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি এলাকা ছুঁয়ে গোটা দেশ পরিক্রমা করবে৷ আরও একটি ট্রেন ‘বিশেষ লবণ ট্রেন’ নাম নিয়ে দেশ পরিক্রমা করবে৷ গান্ধীজির ‘ডান্ডি অভিযান’-এর স্মরণে আগামী বছরের ১২ মার্চ ট্রেনটি চালু হবে৷ এছাড়া একটি বিশেষ ডাক টিকিট চালুর প্রস্তাবও দিয়েছে রেলবোর্ড৷
ভারতীয় রেলের শীর্ষ কর্মকর্তা আর ডি বাজপেয়ী বলেন, ‘‘কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রচার করছে যে, ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীর দিন নিরামিষ দিবস পালন হবে৷ এ খবর ঠিক নয়৷ আমিষ খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে এমন কোনো নির্দেশিকা জারি করা হয়নি৷ যাত্রীরা ঐ দিন নিরামিষ ও আমিষ যে কোনো খাবার পেতে পারেন৷’’
প্রথমে খবর আসে ভারতীয় রেল ‘ভেজিটেরিয়ান ডে’-র মোড়কে গান্ধী জয়ন্তী পালনের প্রস্তাব দিয়েছে৷ ঐ দিন রেলে কোনো আমিষ জাতীয় খাবার পরিবেশন করা হবে না৷ আর ২রা অক্টোবর থেকে লাগাতার তিন বছর পালিত হবে দিনটি৷ চলতি মাসের প্রথম দিকে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এ বিষয়ে প্রথম মিটিং করেন৷ রেলমন্ত্রীও ছাড়পত্র দেন৷ যদিও তা অস্বীকার করেছেন রেলবোর্ডের কর্তারা৷
বিগত কয়েক দশক ধরে একটি প্রথম সারির হিন্দি দৈনিকের জন্য ভারতীয় রেলের সংবাদ সংগ্রহ করেন গুলশন খাতরি৷ আচমকা আমিষ-নিরামিষ বিতর্কে ব্যক্তিগত ভাবে বেশ বিরক্ত তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, ‘‘রেলওয়ে বোর্ড ঠিক করেছিল আগামী তিন বছর গান্ধীজির জন্মজয়ন্তী পালন করবে৷ এতে কারও কোনো আপত্তি ছিল না৷ কিন্তু সরকারের অপর মন্ত্রককে পাঠানো প্রস্তাবের এক জায়গায় বিতর্কিত বিষয়টি লেখা ছিল৷ সেটা হলো, চলতি বছরে তো বটেই, আগামী পরপর তিন বছর ২ অক্টোবর সমস্ত ট্রেন এবং রেলের অধীনে থাকা ভবনগুলিতে কোথাও আমিষ খাবার পরিবেষন হবে না৷ পাওয়া যাবে শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার৷ সম্ভবত নরেন্দ্র মোদী সরকারকে খুশি করার উদ্দেশ্যে এমন উদ্ভট প্রস্তাব এনেছিলেন রেলের কর্তারা৷ তবে খবরটা প্রথমে সাংবাদিকরা পান৷ আর সঙ্গে সঙ্গেই ওঠে নিন্দার ঝড়৷ ফলে তড়িঘড়ি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি স্থগিত করতে হয় রেল কর্তৃপক্ষকে৷’’
রেলের এই প্রস্তাব আপাতত স্থগিত করা হয়েছে৷ অর্থাৎ ভবিষ্যতে আবারও এই নিয়ম চালু করা হতেই পারে৷ কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, আগামী ২ অক্টোবরের আগে নতুন নির্দেশিকা জারি হয়৷ এ বিষয়ে খাতরি মনে করেন, এমন ঘটনা আসলে সাধারণ মানুষের ওপর রেল কর্তৃপক্ষের ‘মরাল পুলিশিং’ ছাড়া আর কিছুই নয়৷ কারণ গান্ধীজিকে সম্মান দেখানোর পাশাপাশি রেলযাত্রীদেরও সম্মান দেখানো উচিত৷