গির্জায় যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
১৯ জুলাই ২০১৭‘ডোমস্পাৎসেন' কথাটির অর্থ ‘ক্যাথিড্রালের চড়ুইপাখির দল'৷ হাজার বছরের বেশি পুরনো এই কয়্যারটি বিশ্বের প্রাচীনতম কয়্যার৷ ক্যাথলিক যাজক ও শিক্ষকদের হাতে কোয়ারের কিশোরদের যৌন অপব্যবহারের অভিযোগ বহুদিনের৷ শেষমেষ এক আইনজীবীকে দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করানো হয়, যার রিপোর্ট সদ্য প্রকাশিত হয়েছে৷
৪৫০ পাতার রিপোর্ট পেশ করার সময় অ্যাটর্নি উলরিশ ওয়েবার বলেছেন যে, তিনি শারীরিক নির্যাতনের ৫০০টি ঘটনা ও যৌন নির্যাতনের ৬৭টি ঘটনার হদিশ পেয়েছেন৷ এই সব ঘটনা প্রায় ছয় দশক ধরে ঘটেছে৷
গির্জার ৪৯ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা কয়্যারের সদস্যদের নিপীড়নে অংশ নিয়েছেন, বলে রিপোর্টে সাব্যস্ত করা হয়েছে – তাদের মধ্যে ন'জন দৃশ্যত যৌন নির্যাতনেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন৷ গির্জার কর্মকর্তাদের তরফে ‘‘নীরবতার সংস্কৃতির'' ফলে দশকের পর দশক ধরে এ ধরনের নির্যাতন চলে আসতে পেরেছে, বলে ওয়েবার মন্তব্য করেছেন৷ অপরদিকে নির্যাতনের শিকাররা রেগেন্সবুর্গ কয়্যারে তাদের অভিজ্ঞতাকে ‘‘কারাগার, নরক ও নাৎসি বন্দিশিবির''-এর সমান, বলে বর্ণনা করেছেন৷
‘নাৎসি বন্দিশিবিরের মতো'
অতীতের নিপীড়িত কিশোররা গির্জার স্কুল ও কয়্যারে তাদের দিনগুলিকে ‘‘তাদের জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়'' বলে অভিহিত করেছেন, ‘‘যার মূলমন্ত্র ছিল ভয়, সহিংসতা আর আশাহীনতা'' – বলে ওয়েবার জানান৷
২০১০ সালে প্রথম হাজার বছরের পুরনো কয়্যারটিতে ব্যাপক যৌন অপব্যবহারের অভিযোগ তোলেন কয়্যারের সাবেক সদস্যরা৷ ২০১৩ সালে ৪০০-র বেশি নিপীড়িত প্রকাশ্যে সাক্ষ্য দেন ও ক্যাথলিক গির্জার প্রাপ্তবয়স্কদের হাতে তাদের দুর্দশার বিশদ বিবরণ দেন৷
অধিকাংশ অপব্যবহারের ঘটনা ঘটে ১৯৬৪ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে, সাবেক পোপ বেনেডিক্টের ভাই গেয়র্গ রাৎসিঙ্গার যখন কোয়ারটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন৷ ওয়েবার বার বার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, রাৎসিঙ্গার নিশ্চয় কিছু কিছু ঘটনার কথা জানতেন – কিন্তু রাৎসিঙ্গার তা বরাবর অস্বীকার করে এসেছেন৷
নিপীড়িতদের সংখ্যা অনেক বেশি
ওয়েবারের রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, গোড়ায় যা ভাবা গিয়েছিল, নিপীড়িতদের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি৷ ১৯৪৫ সাল থেকেই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে, যদিও সর্বাধিক ঘটনা ঘটেছে ষাট ও সত্তরের দশকে৷ কিশোরদের উপর শারীরিক নির্যাতনের সর্বশেষ ঘটনাগুলি দৃশ্যত নব্বই-এর দশকের গোড়ার দিকে ঘটেছে৷
এই রিপোর্টের কোনো আইনগত ফলশ্রুতি নেই, কেননা মামলা করার তারিখ পার হয়ে গেছে৷ তবে নিপীড়নের শিকাররা শৈশবের সেই বিভীষণ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে মানসিক শান্তি লাভ করার মতো সাহস খুঁজে পাবেন, বলে রিপোর্টের রচয়িতারা আশা প্রকাশ করেছেন৷
ক্যাথলিক গির্জা গতবছর নিপীড়িতদের মাথাপিছু পাঁচ থেকে বিশ হাজার ইউরো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়৷ ওয়েবারের রিপোর্টের পর এবার একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করবে৷
এসি/ডিজি (কেএনএ, ডিপিএ, এএফপি)