কামারুজ্জামানের ছেলে ‘পাগলের প্রলাপ' বকছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল
১০ নভেম্বর ২০১৪এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়াকে ‘ত্রুটিপূর্ণ' দাবি করে মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে৷
ময়মনসিংহের শেরপুরের নালিতাবাড়ি এলাকার সোহাগপুরে একাত্তরে গণহত্যার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখেছেন৷ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল বলেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, সোহাগপুরের ঘটনার সঙ্গে আমার বাবার দূরতম সম্পর্ক নেই৷ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ৷ অন্যায়ভাবে সাজানো অভিযোগে তাঁকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে৷ আমার বাবা কখনো সোহাগপুরে যাননি৷ এমনকি রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা ফরমাল চার্জেও সোহাগপুর গণহত্যার সময় সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন মর্মে কোনো অভিযোগ নেই৷''
কামারুজ্জামানের ছেলের দাবি, ‘‘এই মামলায় মূল সাক্ষীর তালিকায় ৪৬ জনের নাম ছিল৷ তাদের মধ্যে ১০ জন সাক্ষী ট্রাইবুন্যালে সাক্ষ্য দেয়ার পর নতুন করে তিনজন মহিলাকে অতিরিক্ত সাক্ষী করার মাধ্যমে এসব অভিযোগে আনা হয়েছে৷ ২০১১ সালে সোহাগপুরের গণহত্যা নিয়ে সাংবাদিক মামুন-উর রশিদ ওই এলাকা পরিদর্শন করে ‘সোহাগপুরের বিধবা কন্যারা' নামে একটি বইপ্রকাশ করেন৷ সেখানে অনেক সাক্ষীর সাক্ষাৎকার আছে৷ তাতে কেউ একবারের জন্যও বলেননি যে আমার বাবা এ ঘটনায় যুক্ত ছিলেন৷ এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তালুকদারের ২০১১ সালের অনুপম প্রকাশনী'র ‘মুক্তিযুদ্ধে নালিতাবাড়ী' বইতেও আমার বাবার সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়নি৷''
বিচার ‘ত্রুটিপূর্ণ'
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ রবিবার এক বিবৃতিতে কামারুজ্জামানের বিচার প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ অভিহিত করে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অবিলম্বে স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে৷
সংস্থাটির এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেন, ‘‘মৃত্যুদণ্ড অসংশোধনযোগ্য, মর্যাদাহানিকর এবং নির্মম শাস্তি হওয়ায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সকল পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী৷ আর যখন বিচার প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষ বিচারের মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় না এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ আদালতে আপিল করার অধিকার থাকে না, তখন এটা বিশেষভাবে ত্রুটিযুক্ত৷''
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, ‘‘কামারুজ্জামানের মামলাটিসহ আইসিটির মামলাগুলো ত্রুটিপূর্ণ৷ কামারুজ্জামানের মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সাক্ষ্যগুলোতে থাকা অসামঞ্জস্যতা আদালত প্রত্যাখ্যান করে, আসামিপক্ষকে প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে অস্বীকার করে৷''
এইচআরডাব্লিউ-র মতে, ‘‘অন্যান্য মামলায়ও এই ধরনের বিশৃঙ্খলার নজির দেখা গেছে৷ ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লাকে তাড়াহুড়া করে পূর্ববর্তী সময় থেকে কার্যকর বিধানে ফাঁসি দেয়া হয়, যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ৷ আরেক অভিযুক্ত দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের হাতে এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে অপহরণ করার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উপেক্ষতি হয়েছে৷''
অ্যাডামস বলেন, ‘‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংস অপরাধের বিচার ও জবাবদিহিতাকে সমর্থন করে৷ তবে এসব বিচার অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানে নিরপেক্ষভাবে হতে হবে৷''
‘পাগলের প্রলাপ'
কামারুজ্জামানের ছেলের বক্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ' বলে আখ্যায়িত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম৷ তিনি বলেন, ‘‘কামারুজ্জামানের ছেলে যে কথাগুলো এখন বলেছেন, এসব বক্তব্য তাঁর আইনজীবীরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আদালতে উপস্থাপন করেছেন৷ এসব বক্তব্য বিবেচনা করেই আদালত তার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন৷''
মাহবুবে আলম বলেন, ‘‘অনেক সময় মানুষ পাগলের প্রলাপ বকে৷ সব পাগলকেতো আর আদালতের সামনে নিয়ে যাওয়া যায় না৷ সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ব্যাপারে ক্ষোভ থাকলে তার প্রকাশ এই ধরনের হওয়া উচিত না৷''
তিনি দণ্ড কার্যকরের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘মৃত্যু পরোয়ানা হলে সরকারের সিদ্ধান্তে দণ্ড কার্যকর হবে৷ সরকার যেভাবে সময় প্রদান করবে সেইভাবেই কার্যকর হবে৷ রিভিউ যদি কেউ করেও সেই রিভিউ'র জন্য দণ্ড স্থগিত থাকবে না৷ আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ দেয়ার আগ পর্যন্ত দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া কারা কর্তৃপক্ষ চলমান রাখবে৷''
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘আমি সবসময় বলেছি, রিভিউ চলবে না৷ সংবিধান পড়ে আমি যা বুঝেছি, এটা আমার বক্তব্য৷''
উল্লেখ্য, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পর তা কার্যকরে আইনমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়৷ তাঁদের কথায় তখন প্রতীয়মান হয় যে সাতদিন পরই রায় কার্যকর হবে৷ কিন্তু সেই বক্তব্য থেকে তাঁরা এখন সরে এসেছেন৷ তাঁরা বলছেন সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷