পরিবেশ
২৪ আগস্ট ২০১২প্রতিটা গাছ বেড়ে উঠে, গুঁড়ির চক্রই সেটার প্রমান৷ প্রতি বছর গাছগুলো বাড়ে আর নতুন করে একটি চক্রের সৃষ্টি হয়৷ কারণ প্রতি বছর গাছের ছাল বাড়ছে৷ আর সেই ছালগুলো এইসব চক্রের সৃষ্টি করে৷ চক্রগুলো দেখে বোঝা যায় তাপমাত্রা সেবছর কেমন ছিল৷ আরও জানা যায় বৃষ্টিপাত, দাবানল কিংবা অগ্নুৎপাত সম্পর্কে৷ যেমন তাপমাত্রা বেশি হলে গাছের গুঁড়ির চক্রের সেই অংশটি শক্ত হবে৷ আবার বৃষ্টিপাত হবে যে বছর, সেই বছর গুঁড়িটি বেশি করে বাড়বে৷ তার মানে সে'বার গাছের ছালটি মোটা হবে৷ জার্মানির মাইন্স ইউনিভার্সিটির বৃক্ষ গবেষণা বিভাগের পরিচালক ইয়ান এসপার৷ অনেক দিন ধরেই তিনি গাছের এই বৃদ্ধি এবং তার ওপর পরিবেশের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি জানান, গুঁড়ির ভেতরের এই চক্রগুলোকে আরও ভালো করে বোঝা যায় যখন সেগুলো পাহাড়ি অঞ্চলে বাড়ে৷
ইয়ান এসপার'এর কথায়, ‘‘উদাহরণ স্বরূপ উঁচু পাহাড়ি এলাকায় খুব ঠান্ডার মধ্যে গাছগুলো বেড়ে ওঠে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই গাছের গুঁড়ির ভেতরের চক্রগুলো খুব চিকন হয়ে থাকে৷ এবং এটা একটি নয়, পাহাড়ের গায়ে বৃক্ষের সারিগুলোর অনেক গাছের গুঁড়িতেই এই ধরণের প্যাটার্ন দেখা যায়৷''
গবেষকরা গাছের গুঁড়ির ভেতরের পার্থক্য নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন ফিনল্যান্ডের উত্তরে, যেটা মূলত পাহাড়ি অঞ্চল এবং যেখানে খুব ঠান্ডা৷ এমনকি শীতকালে একটা গোটা নদীও সেখানে জমে যায়৷ আর সেখানকার সুবিধা হলো, কেবল জীবিত গাছ নয় মৃত গাছ নিয়েও তারা গবেষণা করতে পারছেন, জানালেন ইয়ান এসপার৷ বললেন, ‘‘ফিনল্যান্ডে অনেক লেক আছে৷ কোনো গাছ যখন সেই লেকে পড়ে যায়, তখন সেটা হাজার বছর ধরে সেখানে অবিকৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে৷''
এই কারণে এসপার আর তাঁর সহকারীরা এইখানকার গাছের ওপর গবেষণা করে গত দুই হাজার বছরের জলবায়ু সম্পর্কে তথ্য জানতে পেরেছেন৷ তাঁদের একজন মার্কুস কোখবেক, যিনি মাইন্স ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারের প্রধান৷ তিনি একটি গাছের গুঁড়িকে করাত মেশিন দিয়ে কাটলেন৷ যন্ত্রচালিত এই করাতটি দেখতে পেন্সিলের মতো চোখা আর দেড় সেন্টিমিটার চওড়া৷ গুঁড়ির ভেতর থেকে কাটা টুকরোটা তিনি পরীক্ষা করছেন৷ তার আগে টুকরোটি মসৃণ করে নিলেন৷ গুঁড়ির টুকরোটির ভেতরের প্রতিটি চক্র মানে একেকটি করে বছর৷ চক্রগুলো বেশ স্পষ্ট৷ এবার টুকরোটিকে মাইক্রোস্কোপের নীচে রেখে পরীক্ষা করে দেখছেন৷ গুঁড়ির ভেতরের চক্রগুলোর যে বাঁক রয়েছে সেগুলো নানা তথ্য বহন করছে৷ যেমন যে বছরটি বেশি ঠান্ডা ছিল, সেই সময় গাছটি তুলনামূলকভাবে চিকন হয়ে বেড়েছে৷ এভাবে অনেকগুলো গাছের টুকরো তারা পরীক্ষা করে দেখলেন৷
এ ব্যাপারে মার্কুস কোখবেক বললেন, ‘‘এই যে বাঁকগুলো দেখা যাচ্ছে গুঁড়ির ভেতরে, এর ওপর ভিত্তি করে নানা বিষয় বোঝার চেষ্টা করা হয়৷ চিকন চক্রের ওপর নির্ভর করে এই বাঁকগুলোকে সুপারইম্পোজ করা হয়৷ এই পরীক্ষণ খালি চোখেও যেমন করা যায়, তেমনি গাণিতিকভাবেও করা হয়৷
এইভাবে গবেষকরা গত সাত হাজার বছরের জলবায়ুর একটি ধারণা পেয়েছেন৷ তবে ইয়ান এসপার আপাতত দুই হাজার বছরের ধারাণা দিতে চাচ্ছেন৷ তিনি গুঁড়ির ভেতরে চক্রগুলোর পাশাপাশি কাঠের ঘনত্বও পরীক্ষা করে দেখেছেন৷ তিনি জানান, ‘‘গুঁড়ির চক্রের ঘনত্বের মাধ্যমে কাঠের ঘনত্ব মাপা যায়৷ আর কাঠের ঘনত্ব পরীক্ষা করে বোঝা যায় তাপমাত্রা কেমন ছিল৷ এভাবে দেখা যাচ্ছে যে, খ্রিষ্টের জন্মের পর ২০ শতক পর্যন্ত প্রতি হাজার বছরে তাপমাত্রা ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে৷ আর তারপর থেকেই গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ শুরু হয়েছে৷
গবেষক এসপর জানান, গত কয়েক হাজার বছর ধরে জলবায়ুতে উষ্ণায়নের পর শীতলীকরণ হয়ে আসছে৷ গাছের ওপর গবেষণার মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতের জলবায়ু সম্পর্কেও ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছেন৷
প্রতিবেদন: ফাবিয়ান শ্মিড্ট / আরআই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ