‘গুন্ডে’ সংশোধনের দাবি
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার রবিবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘গুন্ডে'-তে ইতিহাস বিকৃত করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে৷ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার ব্যাপারে আমরা কৃতজ্ঞ, কিন্তু সেটি মূলত সহায়ক শক্তি হিসেবেই ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার কথা, মূল যোদ্ধা হিসেবে নয়৷''
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিনগুলো সম্পর্কে ইমরান লিখেছেন, ‘‘...নয় মাসের মরণপণ যুদ্ধ করে যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ঢাকা ঘেরাও করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন নিশ্চিত পরাজয় জেনেই ইয়াহিয়া খান ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববাসীর নজরকে সরিয়ে নেয়ার কূটকৌশল গ্রহণ করে৷''
ইমরান লিখেছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে যে ২২ নভেম্বর থেকেই বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী একযোগে আক্রমণ চালানো শুরু করে এবং পাকিস্তানিদের উপর চূড়ান্ত আক্রমণে তাদের দিশেহারা করে তোলে৷ অবশ্যম্ভাবী বিজয়ের মাত্র ১৩ দিন আগে, ৩ ডিসেম্বর ভারত পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্তে আক্রমণের শিকার হয়ে যুদ্ধে জড়ায় এবং বাংলাদেশ অঞ্চলে এই যুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর সঙ্গে মিলে যুদ্ধে অংশ নেয়৷''
গুন্ডে সিনেমায় ‘ইতিহাস বিকৃতির অংশটুকু' প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার বিকেল চারটায় ঢাকার শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ৷ ইমরান এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘‘সিনেমাটির প্রযোজক সংস্থা এক বিবৃতির মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে কিন্তু ইতিহাস বিকৃতির অংশটুকু প্রত্যাহার করেনি৷ এর ফলে এ ব্যাপারে আরো শক্ত প্রতিবাদ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে৷''
এদিকে, বাংলা ব্লগেও ‘গুন্ডে' নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে৷ আমার ব্লগ ডটকমে ব্লগার আরিফ এ চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘আমি মনে করি এমন আপত্তিকর চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত যে ভারত যাতে আর কোন দিন আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখাতে সাহস না পায়৷''
একই বিষয়ে সামহয়্যার ইন ব্লগে মিজানুর রহমান মিলন লিখেছেন, ‘‘ভারত যে কারণেই আমাদের সহযোগিতা করুক, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আছে - আমরা কেউ (তা) অস্বীকার করব না৷ এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ৷ কিন্তু তাই বলে দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আমরা বিকৃতি বা অবমূল্যায়ন করতে দিতে পারি না৷ এটা ঠিক ভারতীয়রা তাদের বীরত্ব দেখবে বা দেখাবে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসেরও যাতে প্রতিচ্ছবি ও প্রতিধ্বনিত হয় সেটাও থাকতে হবে৷''
উল্লেখ্য, ‘গুন্ডে' ছবির কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এর প্রদর্শন বন্ধে ভারতের কাছে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শামীম আহসান রবিবার এই প্রসঙ্গে জানান, বর্তমান আঙ্গিকে গুন্ডের প্রদর্শন অবিলম্বে বন্ধে ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে৷
সংকলন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন