গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে জার্মানির আরো উদ্যোগ
১৫ জুন ২০২২রাশিয়া থেকে ধাপে ধারে কয়লা ও তেল আমদানি কমাতে পারলেও প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশ এখনো অসহায় অবস্থায় রয়েছে৷ পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহের রাতারাতি কোনো বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মতো দেশ থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে হলে এলএনজি টার্মিনাল ও পাইপলাইন নেটওয়ার্কের ব্যাপক রদবদল করতে হবে৷ সরকারের সদিচ্ছা ও দ্রুত পদক্ষেপ সত্ত্বেও স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে এত বড় পরিবর্তন বেশ কঠিন৷
প্রবল চাপ সত্ত্বেও জার্মানি ও ইউরোপের অনেক দেশ সে কারণে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি এখনই বন্ধ করতে পারছে না৷ কিন্তু বিপুল আয় সত্ত্বেও খোদ রাশিয়াই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ অথবা কমিয়ে দিচ্ছে অথবা শুধু রুবলের মাধ্যমে মাসুল আদায়ের দাবি করে ইউরোপের দেশগুলিকে বিড়ম্বনায় ফেলছে৷ মঙ্গলবার সে দেশের গাজপ্রম কোম্পানি বাল্টিক সাগরের নীচে ‘নর্ড স্ট্রিম ১' পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ কমানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে৷ জার্মানির সিমেন্স কোম্পানি পাইপলাইন মেরামতির কাজে বিলম্ব ঘটাচ্ছে বলেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে৷ সিমেন্স জানিয়েছে, রাশিয়ার উপর ক্যানাডার নিষেধাজ্ঞার কারণে পাইপলাইনের পুরানো টার্বাইন মেরামতি সম্ভব হচ্ছে না৷
একদিকে চলমান সংকট সত্ত্বেও গ্যাস আমদানি নিশ্চিত করা, অন্যদিকে দেশের মধ্যে সেই গ্যাস বণ্টন চালু রাখতে চায় চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সরকার৷ মঙ্গলবারই সরকার জার্মানিতে রাশিয়ায় গাজপ্রমের শাখা কোম্পানিকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে বেলআউটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে৷ সম্ভবত ৯০০ থেকে এক হাজার কোটি ইউরো সরকারি ঋণের মাধ্যমে ‘গাজপ্রম গ্যারমানিয়া' কোম্পানি আপাতত টিকে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ সেটা সম্ভব হলে জার্মানির গ্রাহকদের জন্য গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন এড়ানো যাবে৷
উল্লেখ্য, ১লা এপ্রিলের পর ‘গাজপ্রম গ্যারমানিয়া' রাশিয়ার গাজপ্রম কোম্পানির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে৷ তার কয়েকদিন পরেই জার্মান সরকার কোম্পানিটিকে রাষ্ট্রীয় ট্রাস্টিশিপের অধীনে নিয়ে আসে৷ মে মাসের মাঝামাঝি রাশিয়া ‘গাজপ্রম গ্যারমানিয়া' কোম্পানির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ফলে আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠান৷ বেলআউটের মাধ্যমে জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি অবকাঠামোর এই অংশের উপর প্রভাব বজায় রাখতে পারবে বসে সরকার আশা প্রকাশ করেছে৷ সরকার অদূর ভবিষ্যতে কোম্পানিটির নাম বদলে ‘সিকিয়োরিং এনার্জি ফর ইউরোপ' রাখতে চলেছে৷ সেপ্টেম্বর মাসে সরকারি তত্ত্বাবধানের মেয়াদ শেষ হবার পরেও দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে জার্মান সরকার এই কোম্পানির অংশীদার হবার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করছে৷
বর্তমান সংকট সত্ত্বেও জার্মান সরকার গ্যাস সরবরাহ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ দেখছে না৷ আপাতত শীতের মাসগুলিতে গ্যাসের বণ্টন নিশ্চিত করতে জার্মানিতে গ্যাসের ট্যাংক ভরে রাখার জোরালো উদ্যোগ চলছে বলে সরকার জানিয়েছে৷ আপাতত সেই স্টোরেজ প্রায় ৫৫ শতাংশ ভরা সম্ভব হয়েছে৷ ‘গাজপ্রম গ্যারমানিয়া' কোম্পানিই সেগুলির মালিক৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)