1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একটি কবিতা

সঞ্জীব বর্মন৭ এপ্রিল ২০১২

একটি কবিতা লিখে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন জার্মানির নোবেলজয়ী লেখক গ্যুন্টার গ্রাস৷ তাঁর বিরুদ্ধে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ আনা হয়৷ অবশ্য শেষে কবিকে মুখ খুলেতে হয়৷

https://p.dw.com/p/14Z33
ছবি: picture-alliance/dpa

সংবাদপত্রে কবিতা

বিতর্কের সূত্রপাত হয় একটি কবিতাকে ঘিরে৷ তাও আবার সংবাদপত্রে প্রকাশিত কবিতা৷ দৈনিক স্যুডডয়চে সাইটুং-এ সেটি প্রকাশিত হয়েছিল৷ ‘যা বলার, তা বলতে হবে' এই শিরোনামে জার্মানির নোবেলজয়ী লেখক গ্যুন্টার গ্রাস কলম ধরেন৷ বিষয়বস্তু অত্যন্ত রাজনৈতিক এবং স্পর্শকাতর৷ ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি ও সেদেশের হুমকির মুখে ইসরায়েল সেদেশের উপর আগাম হামলার বিষয়ে যে ভাবনা-চিন্তা করছে, সেই মনোভাবের তুমুল সমালোচনা করেছেন গ্রাস৷ ইসরায়েলের হাতে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে এবং সেদেশ ইরানের মানুষকে মুছে ফেলতে পারে, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি৷ সেইসঙ্গে জার্মানি ইসরায়েলকে যে অত্যাধুনিক সামরিক ডুবোজাহাজ সরবরাহ করছে, সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও কড়া কথা শুনিয়েছেন গ্রাস৷

তীব্র প্রতিক্রিয়া

বলা বাহুল্য কবিতাটি তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছে৷ ইসরায়েলের তুলনায় জার্মানিতেই গ্রাসের বিরুদ্ধে সমালোচনার সুর অনেক কড়া৷ লেখক, শিল্পী, রাজনীতিক থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম – সবারই বক্তব্যের সুর মোটামুটি এক৷ প্রথমত কবিতায় ইসরায়েলের সমালোচনা বড়ই একপেশে৷ ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ বিশ্বের মানচিত্র থেকে ইসরায়েলকে মুছে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন৷ সেদেশ পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে, এমন সন্দেহও মোটেই অমূলক নয়৷

এই অবস্থায় ইরানকে ছেড়ে শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তোপ দাগা কতটা যুক্তিযুক্ত? সমালোচকরা সেইসঙ্গে গ্যুন্টার গ্রাস'এর নিজের অতীতের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন৷ কবিতায় তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যে অনেক কাল অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলতে হয়েছে তাঁকে৷ অথচ গ্রাস নিজে ১৭ বছর বয়সে হিটলারের এসএস গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন৷ সেই তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করতে তাঁর কয়েক দশক সময় লেগেছে৷

Günter Grass
গ্যুন্টার গ্রাসছবি: dapd

গ্রাস'এর প্রতিক্রিয়া

এমন সমালোচনার ঝড়ের মুখে প্রথম দিন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টাই করেননি৷ বলেছিলেন, যা লেখার তা কবিতায়ই লেখা আছে৷ এরপর বৃহস্পতিবার রাতে জার্মানির দু'টি টেলিভিশন চ্যানেলে তাঁর সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়৷ ইহুদি বিদ্বেষী বা ইসরায়েল বিরোধীর তকমা গ্রাস'কে আহত করেছে৷

তিনি নিজে বলেন, ‘‘বিতর্ক যে হবে, সেটা তো জানাই ছিল৷ আর আমি তো ঠিক সেটাই চেয়েছিলাম, কারণ বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা কথা বলার সময় এসে গেছে৷ কিন্তু তারপরের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়৷ গোটা সংবাদ মাধ্যম যেন একই সুরে কথা বলছে৷ কোনো বিকল্প কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে না৷ আমি অনেক মানুষের কাছ থেকে প্রচুর ই-মেল পাচ্ছি, যারা আমার সঙ্গে এবিষয়ে একমত৷ এই কথাটা কিন্তু সবার কাছে পৌঁছচ্ছে না৷ অন্য যে বিষয়টি চোখে পড়ছে, তা হলো যে মূল কবিতাটাই একেবারে উপেক্ষা করা হচ্ছে, যেমনটা করা হচ্ছে তথ্যের ক্ষেত্রে৷ সেই তথ্যে কোনো ভুল থাকলে মানুষ সেটা বলুক৷ যেমন ইসরায়েল যে অনেক কাল ধরে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র, তা নিয়ে খোলামেলা কথা বলা সম্ভব হয়নি৷ সবরকম নিয়ন্ত্রণের কাঠামোর বাইরে রয়েছে দেশটি৷''

সমালোচনার জবাবে গ্রাস আরও বলেছেন, তিনি তাঁর কবিতায় ইচ্ছা করে ইরান, সেদেশের পরমাণু কর্মসূচি, অধিকৃত এলাকায় ইসরায়েলের বসতি নীতির মতো বিষয়কে স্থান দেননি৷ কারণ এ সব বিষয় নিয়ে যথেষ্ট চর্চা চলে আসছে৷ তিনি শুধু অনুচ্চারিত বিষয়গুলিকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন৷ ইসরায়েলের বন্ধু হিসেবেই তিনি সেদেশের আচরণে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন৷ তাছাড়া দুটি বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিশাল দায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি বড় যুদ্ধে জার্মানির সরবরাহ করা সামরিক সরঞ্জামের ব্যবহারের আশঙ্কা নিয়ে তাঁর তীব্র আপত্তি রয়েছে৷

বিতর্কের ইতিকথা

লেখক কখনো বিতর্কের ভয়ে মুখ বন্ধ রাখেননি৷ বিদেশি বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা থেকে শুরু অনেক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তিনি সোচ্চার হয়েছেন, অপ্রিয় কথা শুনিয়েছেন৷ তাই অনেকে তাকে ‘জাতির বিবেক' হিসেবেও গণ্য করেন৷ তিন তিনবার কলকাতা গিয়েছেন গ্রাস৷ শহরের আবর্জনা, দারিদ্র্যের ছাপ, হিন্দু দেবী কালী, তার লম্বা জিহ্বা – এসব খণ্ডচিত্রের সমন্বয়ে তিনি তৈরি করেছেন নিজের কল্পনার জগত৷ সেই বইয়ের নাম ‘সুঙে সাইগেন' – অর্থাৎ ‘জিব কাটো লজ্জায়'৷ বিতর্ক তখনো হয়েছে, এখনো হচ্ছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য