গ্রিক সংকটের সমাপ্তি না সূচনা?
১৫ জুলাই ২০১৫গ্রিসকে ঘিরে সংকটকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স ও জার্মানির মতপার্থক্য এক সার্বিক চিত্রের প্রতিফলন৷ একদিকে সর্বশেষ সমাধানসূত্রের বিশ্লেষণ চলছে, অন্যদিকে দোষারোপের প্রশ্নে গ্রিসের পক্ষে ও বিপক্ষে দু'টি শিবির সোচ্চার হয়ে উঠছে৷
সোমবার সকালেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক-এর টুইট কূটনৈতিক বাক্যের মধ্যে এমন একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন, যার মাধ্যমে গ্রিসের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ পায়৷ তাতে সংস্কার শব্দটির আগে ‘সিরিয়াস' শব্দটি স্থান পেয়েছে৷
জার্মানির স্যুডডয়চে সাইটুং-এর সংবাদভাষ্যে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘‘ইউরোপ ও তার ইউরোজোন এক রাজনৈতিক ও আইনভিত্তিক গোষ্ঠী৷ এই গোষ্ঠী তখনই সচল থাকবে, যখন নিয়ম মানা হবে এবং সহযোগীর রাজনৈতিক সীমারেখার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হবে৷ গ্রিস এই দুই মৌলিক বিষয় অমান্য করেছে এবং তার ফলে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে৷ সবাই যে আস্থাভঙ্গের অভিযোগ করছে, সেটা তো আছেই৷
রাষ্ট্রীয় আর্থিক নীতির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় রবিন হুড হিসেবে আলেক্সিস সিপ্রাস নিজেকে ঘিরে যে গল্প রচনা করেছিলেন, তা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য ছিলো না৷ তার বদলে দেখা গেছে এমন এক চরিত্রকে, যিনি ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা ছাড়াই স্নায়ুযুদ্ধে নেমেছেন, সম্পূর্ণভাবে আস্থা হারিয়েছেন এবং যে মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন, তাদের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি সাধন করেছেন৷ প্রথমে চরম ক্রোধ দেখিয়ে দেনাদারদের শর্ত অমান্য করতে, তারপর গণভোটে ৬০ শতাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে মাত্র ৩ দিন পর প্রায় একই শর্তগুলিকে নিজস্ব প্রস্তাব হিসেবে তুলে ধরতে মাত্রাতিরিক্ত আত্মসচেতনতা লাগে৷'' – লিখেছে স্যুডডয়চে সাইটুং৷
বলা বাহুল্য, এমন মূল্যায়ন বিশেষ করে বামপন্থি চিন্তাধারার মানুষদের পছন্দের হতে পারে না৷ বেলজিয়ামের শ্রমিক সংগঠনের এরিক মাস মনে করেন, এটা কোনো চুক্তিই নয়৷ ব্ল্যাকমেলই সঠিক শব্দ৷ ইইউ-কে থামাতে হবে৷
কিলজোয়া দ্য ভিভ্র নামের টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘‘এটা গ্রিসের জন্য মারাত্মক বোঝাপড়া৷ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে যেভাবে জার্মান ব্যাংকগুলির জিম্মি করা হলো, তার জন্য ইউরোপকে আক্ষেপ করতে হবে৷
সোমবার সকালে যে বোঝাপড়া হলো, তার ফলে ইউরো এলাকায় গ্রিসের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হলো কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক পেদ্রো ডা কস্টা৷
সুইজারল্যান্ডের ‘নয়ে স্যুরশার সাইটুং' মনে করে, ‘‘গ্রিস ইউরোপীয় মুদ্রা ইউনিয়ন ছেড়ে গেলে আবার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আরও ভালো সুযোগ পেতো৷ তখন দেশ দেউলিয়া হয়ে যেতো এবং ইউরো এলাকার নেতাদের বাধ্য হয়ে ভোটারদের বলতে হতো, ঋণ মুকুব অনিবার্য হয়ে পড়েছে৷ তারা অনেককাল ধরে অপাত্রে দান করেছে৷ কোনো না কোনো সময়ে তা মেনে নিতেই হতো৷ গ্রিস ও ইইউ এই উপলব্ধির সবচেয়ে কাছাকাছি এসে গিয়েছিল৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে চরম ভীতি গ্রাস করে ফেললো৷ ফলে তারা এই ট্র্যাজেডির আরও গভীরে চলে যাবে৷ সপ্তাহান্তে ‘হ্যাপি এন্ড'-এর বদলে আরও বড় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে পড়লো৷
সোমবার সকালের বোঝাপড়া গ্রিসের সংসদ মেনে নেবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কাটেরি কিরিয়াজোপুলোস৷
সংকলন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: জাহিদুল হক