গ্রিক সংসদে ভোট পাশ হলো
২৩ জুলাই ২০১৫পাঁচ মাস ধরে গড়িমসি, এগোই-পিছোই ট্যাকটিক্সের পর ১৩ই জুলাই ব্রাসেলসে শেষমেষ যে আপোশটি গৃহীত হয়, তার একটি মূল শর্ত ছিল, উত্তরোত্তর ঋণের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শুরু হওয়ার আগে গ্রিসকে দেখাতে হবে, সংস্কারের ক্ষেত্রে এথেন্স আন্তরিক: অর্থাৎ গ্রিক সরকার ও সংসদকে একাধিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে নতুন আস্থা সৃষ্টি করতে হবে৷
তার পর পরই সিপ্রাসের পাশাপাশি যিনি সর্বাধিক মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করছিলেন, বামপন্থি সিরিজা দলেরই সেই ফায়ারব্র্যান্ড রাজনীতিক তথা গ্রিক অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিসকে বিদায় নিতে হয়৷ কাজেই গত সপ্তাহে তথাকথিত প্রথম সংস্কার প্যাকেজ নিয়ে ভোটে ভারুফাকিসকে সংস্কারবিরোধীদের দলেই দেখা গেছে৷ এবার কিন্তু তিনি সংস্কারের সপক্ষেই ভোট দিয়েছেন৷
শুধু ভারুফাকিস একাই নন, সব আশঙ্কা সত্ত্বেও বুধবার ভোররাতে সিরিজা দলের মোট ৩৬ জন সাংসদ দ্বিতীয় সংস্কার প্যাকেজের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন – এর আগে যে সংখ্যা ছিল ৩৮৷ তবুও, সংসদে সিপ্রাস সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এখন মাত্র পাঁচ আসনের৷ অর্থাৎ সিপ্রাসকে এখনই নতুন নির্বাচনের কথা ভাবতে হচ্ছে না৷ ওদিকে সরকারি মুখপাত্রী ওলগা গেরোভাসিলি মঙ্গলবারেই ঘোষণা করেছিলেন যে, বুধবারের ভোটের পর পরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হবে৷
প্রথম সংস্কার ভোটের পরই গ্রিস ইইউ-এর কাছ থেকে সাত বিলিয়ন ইউরোর কিছু বেশি জরুরি অর্থসংস্থান পায় এবং সোমবার ইসিবি ও আইএমএফ-এর বকেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারে৷ এথেন্স সরকার এবার চান, ২০শে আগস্টের মধ্যে চুক্তি, কেননা সেটা হলো ইসিবি-কে তিন বিলিয়ন ইউরোর কিছু বেশি পরিমাণ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার শেষ তারিখ৷
বুধবার রাতে ভোর চারটে অবধি চলা অধিবেশনে গ্রিক সাংসদরা ২৩০ বনাম ৬৩ ভোটে যে সংস্কার কর্মসূচিটি অনুমোদন করেন, তার উপজীব্য ছিল বিচারবিভাগীয় সংস্কার, সরকারি সম্পত্তির নিলেম এবং জাতীয় ব্যাংকগুলির লিকুইডিটি – অর্থাৎ নগদ পরিস্থিতি – জোরদার করার পন্থা৷ মনে রাখতে হবে, গ্রিসের ব্যাংকগুলি তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকার পর গত সোমাবার প্রথমবার খুলেছে৷ এছাড়া কোনো ‘ব্যাংক রান' না হলেও, গ্রাহকরা গত ডিসেম্বর মাস যাবৎ ৪০ বিলিয়ন ইউরো পরিমাণ জামানত তুলে নিয়েছেন৷ কাজেই ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই বুধবারেই গ্রিক ব্যাংকগুলির নগদ পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য আরো প্রায় এক বিলিয়ন ইউরো দিতে হয় – নয়ত এটিএম থেকে নগদ তোলাই ভার হতো৷
বুধবারের ভোটে সিপ্রাস জিতলেন – অথবা সাময়িকভাবে রেহাই পেলেন৷ কিন্তু ঐ বুধবারেই রাজধানী এথেন্সের কেন্দ্রে যে ন'হাজার বিক্ষোভকারী জমায়েত হয়েছিলেন, তাঁদের কথা ভুললেও চলবে না৷ শুধু অসন্তুষ্ট কমিউনিস্টরাই নন, নিশান হাতে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন পাবলিক সেক্টরের নানা শ্রমিক সংগঠন৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এপি, এএফপি, রয়টার্স)