গ্রিড বিপর্যয়ে বিদ্যুৎহীন বাংলাদেশ, কারণ জানেন না কর্তারা
৫ অক্টোবর ২০২২মঙ্গলবার দুপুর দুইটা বেজে চার মিনিট নাগাদ গ্রিড বিপর্যয় হয়। জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলের (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ) বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ চরম কষ্টের মধ্যে পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় ঢাকায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা ছিল অন্ধকারে।
যারা জেনারেটর দিয়ে কাজ চালাচ্ছিলেন, তাদেরও অনেকের তেল ফুরিয়ে যায়। এর ফলে পানির সংকট দেখা দেয়। এটিএম থেকে টাকা তোলা যাচ্ছিল না। আলো জ্বলছিল না। অন্ধকারে ঢেকে যায় শহর থেকে গ্রাম। ডিডাব্লিউর নিউজ পার্টনার বিডিনিউজ২৪ডটকম জানাচ্ছে, বিদ্যুৎ বিভাগেও আলো ছিল না।
আগেও গ্রিড বিপর্যয়
গত ৭ সেপ্টেম্বর গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল। তখন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগ-সহ দেশের বিশাল এলাকা ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল।
তবে এবারের গ্রিড বিপর্যয় ছিল আরো ব্যাপক।
বিদ্যুৎমন্ত্রীর খতিয়ান
দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজের ফেসবুক পাতায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি তিনি শেষতম অবস্থার কথাও জানাচ্ছিলেন। তিনি জানান, সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ফিরে আসে।
রাত আটটা নাগাদ তিনি জানান. টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ এবং ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জে আংশিকভাবে বিদ্যুৎ চালু করা সম্ভব হয়েছে। রাত দশটা নাগাদ ঢাকার অধিকাংশ এলাকাতে বিদ্যুৎ ফেরে।
তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পাতায় রাত সোয়া ১০টার দিকে জানানো হয়, রাত নয়টার দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন আট হাজার ৪৩১ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। উৎপাদন বাড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাবাবিক করার কাজ চলছে। রাত নয়টা ৪০ মিনিট নাগাদ ঢাকায় এক হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তখন চাহিদা ছিল দুই হাজার তিনশ মেগাওয়াট। ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, মেঘনাঘাট, হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি চালু করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া হয়।
কেন বিপর্যয়?
কেন এই বিপর্যয় তা নিয়ে মুখ খুলছেন না বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তারা।
বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, , "যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই সমস্যা হয়েছে। এক এলাকায় সমস্যা হলে সেটা অন্য এলাকাকেও ছড়িয়ে যায়। তবে আজকের ক্ষেত্রে কোথায় কী হয়েছে, তা আমরা এখনও বুঝতে পারিনি।”
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "জাতীয় গ্রিড লাইন বিপর্যয়ের কোনো কারণ রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। এটা নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা ও তদন্ত করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। বিভিন্ন কারণে গ্রিড বিপর্যয় হতে পারে। আমরা এখনও স্মার্ট গ্রিড চালু করতে পারিনি। কোথায় সমস্যা হয়েছে সেটা বলতে পারি না।”
রাতে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমানও বলেন, "আজকে কী ঘটেছে, সেটা আমরা এখনও বুঝতে পারিনি।”তিনি বলেন, "আমরা প্রাথমিকভাবে ঘোড়াশালে একটা লোকেশন আইডেন্টিফাই করেছি। কিন্তু আসলে কী ঘটেছে, সেটা গভীর তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।”
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ খুঁজে বের করার জন্য পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
জিএইচ/এসজি(বিডিনিউজ২৪ডটকম, এএফপি, রয়টার্স)