1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোডশেডিং : রিচার্জেবল লাইট আর ফ্যানের লাগামছাড়া দাম

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৭ জুলাই ২০২২

জ্বালানি তেলের মূল্য সারা বিশ্বেই বেড়েছে৷ এ কারণে এখন পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে না বাংলাদেশ ৷ ঘোষণা দিয়ে শুরু হয়েছে লোডশেডিং৷ দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে রিচার্জেবল ফ্যান এবং লাইট কিনছেন অনেকে৷

https://p.dw.com/p/4EiSf
রিচার্জেবল ফ্যান এবং লাইটের দামও বাড়ছে হু হু করে
রিচার্জেবল ফ্যান এবং লাইটের দামও বাড়ছে হু হু করেছবি: S.Hossain/DW

গত কয়েক বছরে খুব বেশি লোডশেডিং না থাকায়বিকল্প লাইট বা ফ্যানের তেমন প্রয়োজন পড়েনি৷ কিন্তু এখন লোডশেডিংয়ের সময় বিশেষ করে প্রবীণ ও শিশুদের খুব কষ্ট হচ্ছে৷ তাই মানুষ রিচার্জেবল লাইট আর  ফ্যান কিনছেন৷ এই চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন৷

বুধবার দুপুরে স্টেডিয়াম মার্কেটে ডয়চে ভেলের কথা হয় আজিজুল হাকিম নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে৷ বাসাবো এলাকায় তার বাসা৷ তিনি এসেছেন একটি রিচার্জেবল ফ্যান কিনতে৷ বাড়িতে ৮ মাস বয়সি একমাত্র ছেলে৷ মঙ্গলবার তার এলাকায় চারবার বিদ্যুৎ গেছে৷ বড় মানুষ গরমের কষ্ট সহ্য করতে পারলেও শিশুটি পারছে না৷ তাই ফ্যান কিনতে এসেছেন৷ দু'টি মার্কেট ঘুরে তখনও কিনতে পারেননি৷ একেক দোকানি একেক রকম দাম চাচ্ছেন৷ দামের পার্থক্যও অনেক৷ আর এই পণ্যটির সরবরাহ কম থাকায় পছন্দও করতে পারছেন না৷ আরো দু-একটি মার্কেট ঘুরে তবেই কিনবেন৷

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোডশেডিংয়ের সময় গরম ও রাতের অন্ধকার থেকে বাঁচতে বিকল্প ব্যবস্থা করছেন অনেকে৷ পরিবারের লোকজন নিয়ে যাতে কষ্ট করতে না হয় সেজন্য রিচার্জেবল ফ্যান, লাইট, আইপিএস ও সোলারের সাহায্যে চলে এমন যন্ত্রের খোঁজ করছেন অনেকে৷ এ কারণে হঠাৎ করেই এসব পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা৷

‘‘বড় মানুষ গরমের কষ্ট সহ্য করতে পারলেও শিশু পারে না’’

স্টেডিয়াম মার্কেটের ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, "চার্জার লাইট ও ফ্যানের চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি৷ এসব পণ্য এখন পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফলে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে৷'' কেমন দাম বেড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আগে যে ফ্যানের দাম ছিল ৭৫০ টাকা, এখন সেটা এক হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো, জিনিসই তো পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফলে যে যেমন দামে পারছেন বিক্রি করছেন৷ আমরা এসব মালামাল আনি নবাবপুর থেকে৷ তাদের কাছ থেকে যে দামে কিনি, তার থেকে একটু লাভ করেই আমরা বিক্রি করি৷''

সরকার লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দেয়ারপরই নবাবপুরে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ গত ১৯ জুলাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে ইলেকট্রনিক্সের পাইকারি মার্কেটে অভিযান চালায়৷ এ সময় ‘দ্য লাকি ইলেকট্রিক এজেন্সি'কে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়৷ প্রতিষ্ঠানটি ২০ শতাংশের বেশি মুনাফা করছিল৷ ওই দোকানে একটি চার্জার ফ্যানের দাম চাওয়া হয়েছে তিন হাজার ৫০ টাকা৷ এ দামের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রয় মূল্যের পাকা রসিদ পরীক্ষা করেন ভোক্তা অধিপ্তরের কর্মকর্তারা৷ রসিদ দেখাতে না পারলেও ওই ব্যবসায়ী জানান, দুই হাজার ৭০০ টাকায় ক্রয় করেছেন তিনি৷ কিন্তু এ বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমান দেখাতে পারেননি৷ এক পর্যায়ে ওই ব্যবসায়ী যেখান থেকে পণ্যটি পাইকারি কিনেছেন, সে দোকানে যান কর্মকর্তারা৷ সেই পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, যে পণ্যটির দাম তিন হাজার ৫০ টাকা চাওয়া হয়েছে সেটির পাইকারি মূল্য দুই হাজার ৫০০ টাকা৷

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে অসহায় পাকিস্তানের মানুষ

অভিযানে অংশ নেওয়া ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) রজবী নাহার রজনী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ধরনের অভিযানের সঙ্গে ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা পরিচিত ছিলেন না৷ আমরা নবাবপুর ইলেকট্রনিক্স মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতাদের ডেকে আনি৷ সবাইকে সতর্ক করতে টোকেন মানি হিসেবে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি৷ পরে ইলেকট্রনিক্স মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতাদের আমাদের অফিসে ডেকে সতর্ক করা হয়৷ এর দুই দিন পর আমরা আবার ওই দোকানে অভিযান চালাই৷ আসলে তারা সংশোধন হয়েছেন কিনা সেটা দেখার জন্যই এই অভিযান৷ পরের অভিযানেও একই চিত্র পাওয়া যায়৷ পরে ওই দোকানিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে৷ এখন পুরো নবাবপুরের সব ব্যবসায়ী সতর্ক হয়ে গেছেন৷ আবারও ব্যত্যয় দেখলে অভিযান চালানো হবে৷ ''

শ্যামলীর রিংরোডের বেস্ট ইলেকট্রনিক্সের ম্যানেজার মোহাম্মদ নোমান ডয়চে ভেলেকে বলেন,  ‘‘আগে যেখানে মাসে দুই-তিনটা চার্জার ফ্যান বিক্রি হতো, এখন সেখানে প্রতিদিন ১০-১২ জন আসেন৷ আমরা এখনও মূল্য বৃদ্ধি করিনি৷ কারণ, আমাদের এই পণ্যগুলো আগের কেনা৷ তবে নতুন পণ্য এলে দাম বেড়ে যাবে৷ সব ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে৷ ডলারের কারণেও এখন বাইরে থেকে পণ্য আমদানিতে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে৷''

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে রিচার্জেবল ফ্যান কিনতে আসা শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা লতিফুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে বাসার বৃদ্ধ ও শিশুদের বেশি সমস্যা হচ্ছে৷ আমার বাসায় বয়স্ক বাবা রয়েছেন৷ গরমে তিনি থাকতে পারেন না৷ আবার আমার বাচ্চার বয়স চার বছর৷ সে এখন স্কুলে যাচ্ছে৷ তাদের দুই জনের জন্য দু'টি রিচার্জেবল ফ্যান ও লাইট কিনতে এসেছি৷ আগে আমরা বিদ্যুৎ না থাকলে মোমবাতি ব্যবহার করতাম৷ কিন্তু এখন মোমবাতি তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না৷ কারণ খুব কম টাকা দিয়েই চার্জার লাইট পাওয়া যায়৷''

‘‘চার্জার লাইট ও ফ্যানের চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি’’

বাগেরহাট শহরের মামা-ভাগ্নে ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী ফেরদৌসুর রহমান রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এখানে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না৷ ফলে মানুষের মধ্যে চার্জার লাইট ও ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে৷ আমরা কোনো দাম বৃদ্ধি করিনি৷ আগের দামেই বিক্রি করছি৷ তবে ঢাকা থেকে এখন খুব বেশি পন্য পাওয়া যাচ্ছে না৷ এই অবস্থা চললে দাম বেড়ে যাবে৷''

শনির আখড়ার বেস্ট ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ক্রোকারিজ গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী হানিফ মৃধা বলেন, "এখন কোনো শোরুমেই চার্জার ফ্যান নেই৷ হাতে গোনা দু'য়েকটাতে আছে৷ সেখানে ফ্যানের দাম বেড়েছে৷ ১২ ইঞ্চি ফ্যানের আগের পাইকারি রেট ছিল ২ হাজার ৫৫০ টাকা, সেটা এখন ২ হাজার ৯৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে৷ আর শোরুমে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২৫০ টাকায়৷ ১২ ইঞ্চি শরীফ স্মার্ট ফ্যান বিক্রি করেছি ২ হাজার ৭০০ টাকায়৷ সেটা মাঝে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম৷ এখন ৩ হাজার ২৯০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে৷ প্রতিদিন শতাধিক মানুষ চার্জার ফ্যান খুঁজতে আসছেন৷ কিন্তু ফ্যান মার্কেটে নেই৷ যারা ইমপোর্ট করেন, তাদের কাছেই ফ্যান নেই৷”

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ীরা যেটা বলছেন, সেটা পুরো অযৌক্তিক৷ তারা আমাদের কাছে বলেছেন, সারা বছর তারা ব্যবসা করতে পারে না, এখন তাদের ব্যবসার সময়৷ এই কারণে একটু বেশি মুনাফা তাদের করতে হয়৷ করোনা আর অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন৷ কিন্তু মানুষকে ঠকিয়ে তো তারা সেই টাকা তুলতে পারে না৷ আমরা এর মধ্যে কয়েকটি অভিযান চালিয়েছি, প্রয়োজনে আরো অভিযান চালানো হবে৷''