গ্রিসে জনমোহিনী ‘পপুলিজম'-এর সমাপ্তি
১৫ জুলাই ২০১৫সংকটে জর্জরিত গ্রিসের মানুষকে আত্মসম্মান ও গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জনমোহিনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বামপন্থি পপুলিস্ট নেতা আলেক্সিস সিপ্রাস৷ এভাবে তিনি জানুয়ারির শেষে আয়োজিত আগাম নির্বাচনে নিজের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন৷ তারপর চটজলদি গণভোটের আয়োজন করে বিপুল সমর্থন পেয়ে তিনি আন্তর্জাতিক দাতাদের ‘ইমপ্রেস' করতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তাতে কোনো ফল হলো না৷ শেষে গ্রিসের বিরুদ্ধে প্রায় সবাই যেভাবে একজোট হয়ে পড়লো যে, আলেক্সিস সিপ্রাস-এর স্বপ্ন এক জাতীয় বিপর্যয়ে পরিণত হলো৷ গ্রিস সংক্রান্ত ইউরোজোনের সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলন নাটকীয় মাত্রা অর্জন করেছিলো৷ দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টার এই সম্মেলনে সিপ্রাস শেষরক্ষার জন্য অনেকটা পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন৷ গ্রিস ইউরো এলাকায় টিকে গেলো বটে, কিন্তু কড়া শর্তের বেড়াজাল সে দেশকে ঘিরে রইলো৷
দেশ শাসন করা অত সহজ নয়
গত সোমবার থেকে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী সেই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, যার জন্য রাজনীতিকদের আদৌ নির্বাচিত করা হয় – অর্থাৎ দেশ শাসন করার জন্য৷ দেশে ব্যাংকগুলি বন্ধ রয়েছে – এই অবস্থায় শুধু মানুষের সম্মান নিয়ে বুলি আওড়ানো আর যথেষ্ট নয়৷ বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে শুধু বিদেশকে গালি দিলেও চলে না৷
এখন দেখা যাচ্ছে, দেশ চালানো মোটেই সহজ কাজ নয়৷ সিপ্রাস-এর মন্ত্রিসভার কমপক্ষে দু'জন সদস্য ইইউ-সহযোগীদের সঙ্গে বোঝাপড়ার চরম বিরোধী৷ সিরিসা পার্টির প্রায় ৪০ জন সংসদ সদস্য বুধবার চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেবেন বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন৷ চরম দক্ষিণপন্থি জোটসঙ্গি দলের নেতা ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী কামেনস অবশ্য সংসদে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন৷ তবে ভবিষ্যতে সংস্কারের অন্য কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে পারেন বলে হুমকিও দিয়ে রেখেছেন তিনি৷
গ্রিসের কাছে অস্তিত্বের প্রশ্ন
কমপক্ষে গত সপ্তাহান্তেই সিপ্রাস পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, এটা ধরে নেওয়া যায়৷ গ্রিসের অবক্ষয় রুখতে তিনি নিজস্ব শিবিরে বিদ্রোহ দমিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন৷ ব়্যাডিকাল মন্ত্রীদের বিদায় করতে হবে৷ অর্থাৎ তাঁকে মন্ত্রিসভা আরও ছোট করে সাজাতে হবে৷
তবে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী যেটা সম্ভবত এখনো বুঝতে পারছেন না, সেটা হলো সংস্কারের পদক্ষেপগুলি অনুমোদিত হলে কিছুই হবে না৷ সেগুলির বাস্তবায়ন করার সময়েই তাঁর আসল কাজ শুরু হবে৷ তখন তাঁর পার্টি বাস্তববাদী ও আদর্শবাদী শিবিরে ভাগ হয়ে গেলে তাঁর কোনো লাভ হবে না৷ সামাজিক ভাতার অভাব মেটাতে রাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা, একদিকে ধনীদের শয়তান হিসেবে তুলে ধরা ও একই সঙ্গে তাদের আড়াল করা এবং বিশাল অকেজো আমলাতন্ত্রকে উজ্জ্বল ঐতিহ্য হিসেবে গণ্য করা – সিরিসা দলের এমন পশ্চাদবর্তী রাজনৈতিক আদর্শেরও কোনো মূল্য থাকবে না৷ ইউরো এলাকার সদস্য হিসেবে আধুনিক ও প্রতিযোগিতার বাজারে দক্ষ এক গ্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে এমন ভাবাদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই৷ মোটকথা বুধবার সংসদে ভোটাভুটির পরেও দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না৷ নতুন সূচনার জন্য এটা একেবারেই সুখবর নয়৷