সবার উপরে ভারত, বাংলাদেশ ১০ম
১০ আগস্ট ২০১৭অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন' চলতি বছরের যে গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স প্রকাশ করেছে, তাতে এ ধরনের দুর্দশনায় পড়া মানুষের সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম৷ যাঁরা কারখানা, খনি বা খামারে নামমাত্র মজুরিতে দাসের মতো শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন, দালালের খপ্পরে পড়ে বাধ্য হচ্ছেন যৌনকর্মীর জীবনযাপনে, এ যুগেও যাঁদের ঋণ শোধ করতে না পেরে কাটাতে হচ্ছে দাসত্বে জীবন, অথবা বাবা-মায়ের ঋণের দায় মাথায় নিয়ে যাঁদের জন্ম হচ্ছে ক্রীতদাসের মতো – তাঁদের সংখ্যা ধরেই এ সূচক তৈরির কথা জানিয়েছে গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স৷
আধুনিক দাসত্বের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে উত্তর কোরিয়া, উজবেকিস্তান, কম্বোডিয়া, ভারত ও কাতারের কথা৷ বলা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ায় এমন অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, যা থেকে জানা যায়, বন্দিশিবিরগুলোতে জোর করে কাজ করানো হয় বন্দিদের দিয়ে, সেখানে কোনো নিয়মকানুন নেই৷ অন্যদিকে দেশটিতে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে এবং চীনে যৌনদাসী হিসেবে পাঠানো হয়৷ উজবেকিস্তানে সেখানকার নাগরিকদের তুলা মৌসুমে মাঠে কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷
এছাড়া ভারত, চীন, পাকিস্তান আর বাংলাদেশেও আধুনিক দাসত্বের চিত্রটা ভয়াবহ৷
বাংলাদেশ
জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে জোরপূর্বক বিয়ের হার যদি হয় ২০ শতাংশ, সেখানে জোরপূর্বক শ্রমের হার ৮০ শতাংশ৷ অর্থাৎ ৮০ শতাংশ মানুষকে কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷ এর মধ্যে রয়েছে হাতে-কলমে কাজ বা ম্যানুয়েল লেবার, নির্মাণ কাজ, ওষুধ শিল্প এবং কৃষিকাজ৷
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে বাংলাদেশের পোশাকখাতেও আধুনিক দাসত্বের প্রভাব রয়েছে৷ এছাড়া চিংড়ি চাষ এবং শুটকি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এটা লক্ষ্য করা যায়৷ যৌনকর্ম, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রেও দাসত্বের ছাপ স্পষ্ট৷ জরিপে দেখা যাচ্ছে, জোরপূর্বক যৌনকর্মে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে ৩ লাখ ৯০ হাজার মানুষের ক্ষেত্রে৷ এদের মধ্যে অনেক মেয়েরই বয়স ছিল ৯ থেকে ১০ বছর৷
ভারত
ইনডেক্সে বলা হয়েছে, ভারতে বর্তমান জনসংখ্যা ১৩১ কোটি৷ এর মধ্যে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৫৪ হাজার মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকার৷ এখানকার ২৭ কোটি মানুষের মাথাপিছু আয় দিনে দুই ডলারেরও কম৷ ২০১৬ সালে গ্যালাপ দেশটির ১৫ রাজ্যের মানুষের উপর জরিপ করেছে৷ যা থেকে ভারতে ৮০ ভাগ মানুষের একটা সার্বিক চিত্র পাওয়া যায়৷ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যা ১ দশমিক ৪ ভাগ অর্থাৎ ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ আধুনিক দাসত্বের শিকার৷ গৃহকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, যৌন কর্মী, কৃষক, জেলে, শিল্পকর্মী এমকি ভিক্ষাবৃত্তি রয়েছে এগুলোর মধ্যে৷
আধুনিক এই দাসদের দুই তৃতীয়াংশই এশিয়ার বাসিন্দা
জরিপে আরও দেখা যাচ্ছে আধুনিক এই দাসদের দুই তৃতীয়াংশই এশিয়ার বাসিন্দা৷ এদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থা বেশ খারাপ৷ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথমেই ভারতের অবস্থান, তৃতীয় অবস্থানে পাকিস্তান এবং চতুর্থ অবস্থানে বাংলাদেশ৷ সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন এই তালিকায় আছে দ্বিতীয় অবস্থানে৷
বিভিন্ন স্থানে মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং বিশ্বজুড়ে দেশান্তরি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তুলনায় বেশি মানুষ আধুনিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷
এপিবি/ডিজি (গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স)