একবিংশ শতাব্দীতেও ‘দাসত্ব' নির্মূল হয় নি
২৭ অক্টোবর ২০১১অর্থনৈতিক মন্দা দরিদ্র মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই৷ হন্যে হয়ে সবাই কাজ খুঁজছে৷ যে কোন ধরণের কাজ তারা বেছে নিচ্ছে৷ এর ফলে অনেকেই বিভিন্ন ধরণের অপরাধ চক্রের পাল্লায় পড়ছে৷
মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব মানুষদের উদ্ধার করার চেষ্টা করছে৷ তারা জানিয়েছে, অনেকেই বাধ্য হয়ে এ ধরণের কাজ করছে৷ আবার অনেককেই বাধ্য করা হচ্ছে নিম্ন মজুরিতে এসব কাজ করার জন্য৷ এর পাশাপাশি রয়েছে মানুষ পাচার৷ তবে যারা মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করছে, প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে তারা জানিয়েছে, ইদানিং আর মানুষদের ধরে আনতে হয় না ব্রিটেনে৷ মানুষরা নিজেই চলে আসে এবং এরা এসব অপরাধ সংগঠনের শিকার হয়৷
তারা জানিয়েছে অনেক বিদেশি নাগরিকের চাকরি নেই৷ তাদের থাকার জায়গা নেই৷ তারা পথে পথে ঘুরে বেড়ায়, সেখানেই রাত কাটায়৷ আর এদের দিকেই এগিয়ে আসে অপরাধ সংগঠনগুলো৷ পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের দেখা যায় সবচেয়ে বেশি৷ বিভিন্ন জব সেন্টারেও এদের ভিড় সবচেয়ে বেশি৷
এ্যাডাম রিস স্ট্রিট এ্যান্ড কমিউনিটি আউটরিচ সংগঠনের প্রধান৷ সংগঠনটি গৃহহীনদের সাহায্য করে থাকে৷ তিনি বললেন, ‘‘যাদের অপরাধ সংগঠনগুলো বেছে নেয়, তাদের সাধারণত পরিবার বা নিকট কোন আত্মীয় স্বজন এখানে নেই৷ তাদের চাকরি চলে গেছে৷ এদের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত বা মদ্যপানে আসক্ত৷ তারা হন্যে হয়ে কাজ খুঁজছে৷ তাই কেউ যদি কোন ধরণের কাজের সন্ধান নিয়ে আসে, কোন ধরণের প্রশ্ন না করেই এরা রাজি হয়ে যায়৷ এদের ‘না' বলার ক্ষমতা নেই৷ অনেক বলে, ‘‘আমি তোমাকে কাজ দেব, রাতে থাকার জায়গা দেব৷ তোমাকে আর রাস্তায় রাত কাটাতে হবে না৷'' এই লোভে অনেকেই রাজি হয়ে যায়৷''
এদের বেশির ভাগকেই নেয়া হয় বিভিন্ন কন্সট্রাকশনের কাজের জন্য৷ কোন কোন সময় রাস্তা মেরামত বা কৃষিকাজেও এদের নিয়োগ করা হয়৷ কিন্তু বেতন হয় খুবই সামান্য৷ কোন কোন সময় বেতনই দেয়া হয় না৷ থাকার জায়গা হয় প্রায় ১০-১৫ জন একটি কামরায়৷ এবং খাবার যা দেয়া হয়, তা কখনোই একজন প্রাপ্তবয়স্কর জন্য যথেষ্ট নয়৷ এমনও দেখা গেছে, কুকুর যেখানে থাকে সেখানে এদের রাখা হয়েছে৷
যেসব সংগঠন এসব চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তারা জানিয়েছে বেডফোর্ডশায়ারে এ ধরণের ঘটনা দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি৷ কিন্তু কখনোই কেউ তা নিয়ে কোন কথা বলেনি৷ সেখান থেকে প্রায় ১৫ জন ব্রিটিশ নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে৷ এদের ক্রীতদাসের মত খাটানো হয়৷ এদের অনেকেই মদ্যপানে আসক্ত বা মানসিক রোগী৷ চিকিৎসা তো দূরের কথা, এদের দিয়ে রাত-দিন আমানবিক পরিশ্রম করানো হয়৷
এ্যান্টি স্লেভারি ইন্টারন্যাশনালের ক্লারা স্ক্রিভানকোভা জানান, ‘‘এটা নতুন কিছু নয়৷ এ ধরণের ঘটনা আগে আরো ঘটেছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ এসবে আগ্রহ দেখায় না৷ এমনকি সরকারও নীরব থেকেছে৷ নিজের দেশের নাগরিক ক্রীতদাসের মত খেটেছে, তাদের পাচার করে অন্য শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে – এসব কখনোই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি৷ এখানে এসব সহজ, কারণ হল অন্য কোন দেশ থেকে এদের আনতে হয় না৷ সীমানা পার হওয়া মত ঝামেলা নেই৷ কাজ নেই, কাজের অভিজ্ঞতা নেই, থাকার জায়গা নেই – এসব সমস্যার সুযোগ নেয় অপরাধ চক্রগুলো৷''
তবে ব্রিটেন একা নয়৷ গত মাসে ফ্রান্সের একটি সংবাদ পত্র জানিয়েছে, শ্যাম্পেন প্রদেশে অল্প মজুরিতে লোক নেয়া হয়েছে৷ তাদের কাজ হবে শ্যাম্পেন তৈরির জন্য আঙুর তোলা৷
নেদারল্যান্ডসে একজন কৃষককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ কারণ তার ক্ষেতে যারা কাজ করছে, তাদের সবাইকে পাচার করে আনা হয়েছে নেদারল্যান্ডসে৷ তাদের পাসপোর্ট আটক করা হয়েছে, তাদের কোথাও যাওয়ার অনুমতি নেই৷ তাদের বেতনও খুবই সামান্য৷
একটি জরিপে জানানো হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে গোটা ইউরোপে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ রয়েছে, যাদের জোর করে কাজে নিয়োগ করা হয়েছে, যাদের বেতন খুবই সামান্য৷ এরা খাটছে ক্রীতদাসের মত৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন