1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একবিংশ শতাব্দীতেও ‘দাসত্ব' নির্মূল হয় নি

২৭ অক্টোবর ২০১১

সম্প্রতি ব্রিটেনে প্রায় ২৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে ‘দাসত্ব'র হাত থেকে৷ আজকের দিনে এমন খবর বিশ্বাস করা কঠিন৷ অর্থনৈতিক মন্দার ফলে অনেক বিদেশি তুলে নিয়েছে সর্বনিম্ন মজুরির বিনিময়ে কাজ৷ লন্ডনের আশেপাশে এ ধরণের ঘটনা ঘটছে বেশি৷

https://p.dw.com/p/12zyL
ইটালির ক্ষেতে সস্তার শ্রমিকছবি: LAIF

অর্থনৈতিক মন্দা দরিদ্র মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই৷ হন্যে হয়ে সবাই কাজ খুঁজছে৷ যে কোন ধরণের কাজ তারা বেছে নিচ্ছে৷ এর ফলে অনেকেই বিভিন্ন ধরণের অপরাধ চক্রের পাল্লায় পড়ছে৷

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব মানুষদের উদ্ধার করার চেষ্টা করছে৷ তারা জানিয়েছে, অনেকেই বাধ্য হয়ে এ ধরণের কাজ করছে৷ আবার অনেককেই বাধ্য করা হচ্ছে নিম্ন মজুরিতে এসব কাজ করার জন্য৷ এর পাশাপাশি রয়েছে মানুষ পাচার৷ তবে যারা মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করছে, প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে তারা জানিয়েছে, ইদানিং আর মানুষদের ধরে আনতে হয় না ব্রিটেনে৷ মানুষরা নিজেই চলে আসে এবং এরা এসব অপরাধ সংগঠনের শিকার হয়৷

Lampedusa Migration
দলে দলে মানুষ আফ্রিকা থেকে উন্নত জীবনযাত্রার আশায় ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছবি: picture-alliance/dpa

তারা জানিয়েছে অনেক বিদেশি নাগরিকের চাকরি নেই৷ তাদের থাকার জায়গা নেই৷ তারা পথে পথে ঘুরে বেড়ায়, সেখানেই রাত কাটায়৷ আর এদের দিকেই এগিয়ে আসে অপরাধ সংগঠনগুলো৷ পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের দেখা যায় সবচেয়ে বেশি৷ বিভিন্ন জব সেন্টারেও এদের ভিড় সবচেয়ে বেশি৷

এ্যাডাম রিস স্ট্রিট এ্যান্ড কমিউনিটি আউটরিচ সংগঠনের প্রধান৷ সংগঠনটি গৃহহীনদের সাহায্য করে থাকে৷ তিনি বললেন, ‘‘যাদের অপরাধ সংগঠনগুলো বেছে নেয়, তাদের সাধারণত পরিবার বা নিকট কোন আত্মীয় স্বজন এখানে নেই৷ তাদের চাকরি চলে গেছে৷ এদের বেশির ভাগই মাদকাসক্ত বা মদ্যপানে আসক্ত৷ তারা হন্যে হয়ে কাজ খুঁজছে৷ তাই কেউ যদি কোন ধরণের কাজের সন্ধান নিয়ে আসে, কোন ধরণের প্রশ্ন না করেই এরা রাজি হয়ে যায়৷ এদের ‘না' বলার ক্ষমতা নেই৷ অনেক বলে, ‘‘আমি তোমাকে কাজ দেব, রাতে থাকার জায়গা দেব৷ তোমাকে আর রাস্তায় রাত কাটাতে হবে না৷'' এই লোভে অনেকেই রাজি হয়ে যায়৷''

Destination Europe – Kapitel-Nr. 13
শীতের দিনে মাথার উপর ছাদ নেই অনেক বিদেশিরছবি: LAIF

এদের বেশির ভাগকেই নেয়া হয় বিভিন্ন কন্সট্রাকশনের কাজের জন্য৷ কোন কোন সময় রাস্তা মেরামত বা কৃষিকাজেও এদের নিয়োগ করা হয়৷ কিন্তু বেতন হয় খুবই সামান্য৷ কোন কোন সময় বেতনই দেয়া হয় না৷ থাকার জায়গা হয় প্রায় ১০-১৫ জন একটি কামরায়৷ এবং খাবার যা দেয়া হয়, তা কখনোই একজন প্রাপ্তবয়স্কর জন্য যথেষ্ট নয়৷ এমনও দেখা গেছে, কুকুর যেখানে থাকে সেখানে এদের রাখা হয়েছে৷

যেসব সংগঠন এসব চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার, তারা জানিয়েছে বেডফোর্ডশায়ারে এ ধরণের ঘটনা দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি৷ কিন্তু কখনোই কেউ তা নিয়ে কোন কথা বলেনি৷ সেখান থেকে প্রায় ১৫ জন ব্রিটিশ নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে৷ এদের ক্রীতদাসের মত খাটানো হয়৷ এদের অনেকেই মদ্যপানে আসক্ত বা মানসিক রোগী৷ চিকিৎসা তো দূরের কথা, এদের দিয়ে রাত-দিন আমানবিক পরিশ্রম করানো হয়৷

এ্যান্টি স্লেভারি ইন্টারন্যাশনালের ক্লারা স্ক্রিভানকোভা জানান, ‘‘এটা নতুন কিছু নয়৷ এ ধরণের ঘটনা আগে আরো ঘটেছে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ এসবে আগ্রহ দেখায় না৷ এমনকি সরকারও নীরব থেকেছে৷ নিজের দেশের নাগরিক ক্রীতদাসের মত খেটেছে, তাদের পাচার করে অন্য শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে – এসব কখনোই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি৷ এখানে এসব সহজ, কারণ হল অন্য কোন দেশ থেকে এদের আনতে হয় না৷ সীমানা পার হওয়া মত ঝামেলা নেই৷ কাজ নেই, কাজের অভিজ্ঞতা নেই, থাকার জায়গা নেই – এসব সমস্যার সুযোগ নেয় অপরাধ চক্রগুলো৷''

Destination Europe – Kapitel-Nr. 8
ইউরোপে পৌঁছে স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা বিরল নয়ছবি: LAIF

তবে ব্রিটেন একা নয়৷ গত মাসে ফ্রান্সের একটি সংবাদ পত্র জানিয়েছে, শ্যাম্পেন প্রদেশে অল্প মজুরিতে লোক নেয়া হয়েছে৷ তাদের কাজ হবে শ্যাম্পেন তৈরির জন্য আঙুর তোলা৷

নেদারল্যান্ডসে একজন কৃষককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ কারণ তার ক্ষেতে যারা কাজ করছে, তাদের সবাইকে পাচার করে আনা হয়েছে নেদারল্যান্ডসে৷ তাদের পাসপোর্ট আটক করা হয়েছে, তাদের কোথাও যাওয়ার অনুমতি নেই৷ তাদের বেতনও খুবই সামান্য৷

একটি জরিপে জানানো হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে গোটা ইউরোপে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ রয়েছে, যাদের জোর করে কাজে নিয়োগ করা হয়েছে, যাদের বেতন খুবই সামান্য৷ এরা খাটছে ক্রীতদাসের মত৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য