টেলিমেডিসিন
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ইরানি বংশোদ্ভূত মসুদ করিমির মাথায় নতুন আইডিয়া এসেছে৷ কোনো প্রতিকূলতাই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারে না৷ দার্শনিক শোপেনহাউয়ার-এর একটি উক্তি তাঁর কানে বাজে৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি উদ্ভাবনের তিনটি ধাপ রয়েছে৷ প্রথম পর্যায়ে সবাই হাসাহাসি করে, দ্বিতীয় পর্যায়ে সবাই বিরোধিতা করে৷ তৃতীয় ধাপে গিয়ে সেই উদ্ভাবনকে অবশ্যম্ভাবী হিসেবে দেখা হয়৷''
মসুদ করিমি তাঁর ইন্টারনেট হাসপাতালের স্বপ্ন নিয়ে ঠিক সেই পর্যায়েই যেতে চান৷ এমন এক সফটওয়্যার, যা বিশাল এক তথ্যভাণ্ডার তৈরি করবে৷ রোগীরা নিজেরাই বাসায় বসে রক্তচাপ ও ইসিজি মাপে দেখবেন৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল এক পোর্টালে চলে যাবে৷ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বিশ্লেষণ করা হবে৷ কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লেই তা ডাক্তারের কাছে পাঠানো হবে৷ করিমি বলেন, ‘‘৫০ থেকে ৬০ শতাংশ স্বাভাবিক চিকিৎসা প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সফটওয়্যারের মাধ্যমে খরচ অনেক কমে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস৷''
কোলোন শহরে তাঁর কোম্পানিতে ৭০ জন কর্মী কাজ করেন৷ মূল কাজ বিভিন্ন কোম্পানির জন্য তথ্য-প্রযুক্তি সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া৷
টেলিমেডিসিন ব্যবসা বেশ লাভজনক হতে পারে৷ হৃদযন্ত্র বা সার্কুলেশন সংক্রান্ত রোগের চিকিৎসায় শুধু জার্মানিতেই বছরে প্রায় ৪,০০০ কোটি ইউরো ব্যয় করা হয়৷ বার বার ডাক্তারের কাছে ছুটতে হয়, ওষুধের দামও কম নয়৷ করিমির পোর্টাল ওয়েবসাইট এক ধরনের নিয়ন্ত্রকের কাজ করবে৷ হৃৎস্পন্দনে কোনো গোলমাল দেখা দিলেই অ্যালার্ম বেজে উঠবে৷ হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না৷
গড় আয়ু বেড়ে চলার ফলে এমন পরিষেবা বাজারের চাহিদা পূরণ করবে৷ বিশেষ করে হাসপাতালগুলি এই সফটওয়্যার কিনবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ করিমি বলেন, ‘‘যেমন কোনো স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানি তার গ্রাহকদের বলতে পারে, তারা যদি এমন কোনো পোর্টালে নিজেদের নথিভুক্ত করে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে তাদের বিমার মাশুল কমানো যেতে পারে৷ এটা বিমা কোম্পানির অর্থ সাশ্রয়ের এক বড় সম্ভাবনা৷''
হাসপাতালগুলিরও ব্যয় কমবে বলে তাঁর ধারণা৷ টেলিমেডিসিনের বাজার বিশাল – অঙ্কটা ১০,০০০ কোটি ইউরো ছুঁতে পারে৷ তবে সেই বাজারে প্রবেশ করা মোটেই সহজ নয়৷ কারণ এই হাসপাতালে প্রধান চিকিৎসক ও নির্বাহী পরিচালক খোলামনে এমন আইডিয়া গ্রহণ করেছেন বটে৷ কিন্তু করিমি এমন ডাক্তারেরও দেখা পান, সফটওয়্যার এলে তাঁদের আর প্রয়োজন থাকবে না বলে যাঁদের মনে ভয় রয়েছে৷
রেডিওলজি বিভাগের প্রধান টেলিমেডিসিনের সুবিধা সম্পর্কে সচেতন৷ তিনি এর মধ্যেই অন্যান্য হাসপাতালের সঙ্গে কাজ শুরু করে দিয়েছেন৷ কম্পিউটার টোমোগ্রাফির ছবির আদান-প্রদান চলছে৷ ফলে অনেক ব্যয়বহুল পরীক্ষার ব্যয় কমে যাচ্ছে৷ মেয়ারহাইম হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান ড.আক্সেল গসমান বলেন, ‘‘কোনো রোগী এক ডাক্তারের কাছ থেকে আরেক ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক তথ্য হারিয়ে যায়৷ এত তথ্যের অপচয় বন্ধ করতে হবে৷ একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার থাকলে আমরা এই সব তথ্য হারিয়ে যাওয়া বন্ধ করতে পারবো৷''
কিন্তু করিমি বিলক্ষণ জানেন, জার্মানিতে আবার তথ্য-সংরক্ষণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ বিনিয়োগকারীরা এখনো তাঁর দরজায় কড়া নাড়েননি৷ করিমি বলেন, ‘‘প্রতিরোধের মাত্রা যে বেশি, তা বেশ টের পাওয়া যায়৷ গেমিং, প্রযুক্তি বা সোশাল নেটওয়ার্কের তুলনায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক বেশি বাধা রয়েছে৷ তা সে সচেতন বা অসচেতন, যে ভাবেই হোক না কেন৷''
তা সত্ত্বেও তিন থেকে চার বছরের মধ্যে তাঁর প্রডাক্ট প্রস্তুত হয়ে যাবে৷ ফিটনেস বা খেলাধুলার মতো লাভজনক ক্ষেত্রেও এটি বিক্রি করা যেতে পারে৷ প্রোটোটাইপ নিয়ে পরীক্ষা চলছে৷ ইসিজি রিডিং ঠিকই আছে৷ চিফ টেকনিকাল অফিসার আন্দ্রেয়াস কুম্ফ বলেন, ‘‘অবশ্যই সেন্সরে আরও কিছু উন্নতি করা যেতে পারে, যাতে পরে থাকলেও তা কেউ টের না পায়৷ এমনকি টানা ৪৮ ঘণ্টা পরে থাকলেও নয়৷ অবশ্যই সফটওয়্যারেও অনেক উন্নতি করতে হবে, তথ্য বিশ্লেষণের কাজ আরও ভালোভাবে করতে হবে৷''
ভবিষ্যতের দিকে এক পা বাড়িয়েই রয়েছেন করিমি৷ এমনই তাঁর ব্যবসা-বুদ্ধি৷ করিমি বলেন, ‘‘৫০ বছরে থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি৷ প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যের দিকে আরও ভালো করে নজর রাখা যাবে৷ থ্রিডি প্রিন্টার থেকে যকৃৎ? ভাবা যেতেই পারে৷ স্টেম সেল ও থ্রিডি প্রিন্টারের প্রযুক্তি তো আমাদের হাতে এসেই গেছে৷''
নিজের কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে যেতে চান কারিমি৷ এর সাফল্য সম্পর্কে তিনি বেশ আশাবাদী৷