ইউক্রেন সংকট সামলাতে তৎপর জার্মানি
৫ মে ২০২২ইউরোপের বুকে যুদ্ধের মাঝে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে জার্মানিকে একইসঙ্গে একাধিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ একদিকে হামলার মুখে ইউক্রেনকে আরও সহায়তার জন্য বেড়ে চলা চাপ, অন্যদিকে সংকটের মাঝেও দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালাতে হচ্ছে জার্মানির জোট সরকারকে৷ বৃহত্তর পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করতে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের মন্ত্রিসভার সদস্যরা দুই দিন ধরে মিলিত হয়েছিলেন বার্লিনের কাছে মেসেব্যার্গ কেল্লায়৷
পাঁত মাস আগে তিন দলের জোট সরকার যখন জার্মানির ক্ষমতাকেন্দ্রের হাল ধরেছিল, তখন ম্যার্কেলের আমলের জড়তা কাটিয়ে একাধিক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছিল৷ কিন্তু ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা রাতারাতি পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে৷ এমন ‘যুগান্তকারী' পরিবর্তনের উল্লেখ করে চ্যান্সেলর শলৎস নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতির ক্ষেত্রে সত্যি আমূল পরিবর্তনের ঘোষণা করেন৷ যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র সরবরাহ থেকে শুরু করে জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য বিশাল ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার সরকার৷ ইউক্রেনের সৈন্যদেরও জার্মানিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
ইউক্রেনের জন্য আরও ভারি অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের ব্যবস্থা কথা ভাবছে জার্মানি৷ তবে বিচ্ছিন্নভাবে নয়, আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমেই এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার৷ মন্ত্রিসভার দুই দিনের বৈঠকের পর চ্যান্সেলর শলৎস সাংবাদিকদের সামনে তাঁর সরকারের ইউক্রেন-নীতির কার্যকারিতা তুলে ধরেন৷ এ ক্ষেত্রে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, অস্পষ্টতা ও বিলম্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, সংকটের শুরু থেকেই পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে জার্মানির সরকার৷
ভাইস চ্যান্সেলর রোব্যার্ট হাবেক ও অন্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারও চ্যান্সেলর শলৎসের সঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন৷ তিন শরিক দলের শীর্ষ প্রতিনিধিরা সংকটের মুখেও জোট সরকারের ঐক্য নিয়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ রাখতে চান নি৷ হাবেক বলেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন সংকটের কারণে সরকারের মূল পরিকল্পনা ধামাচাপা পড়লেও এমন ঐতিহাসিক সময়কালে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে আরও দ্রুত সেই পথেই অগ্রসর হতে হচ্ছে৷ যেমন রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমাতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার আরও তরান্বিত করতে হচ্ছে৷ সেই লক্ষ্যে দেশের দুই শতাংশ জমি বায়ুশক্তি উৎপাদনের জন্য ধার্য করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ করোনা ও ইউক্রেন সংকটের কারণে রাষ্ট্রের উপর যে অস্বাভাবিক আর্থিক চাপ পড়েছে, আগামী বছরেই তা সামলে নেবার আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী লিন্ডনার৷ তিনি বলেন, তখন রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের মাত্রা অনেক স্বাভাবিক হয়ে উঠবে৷
ঘরে-বাইরে ইউক্রেন সংকট সামলানোর সার্বিক প্রস্তুতি সত্ত্বেও ইউক্রেনের সরকারের সঙ্গে জার্মানির ‘শীতল' সম্পর্ক এখনো দূর হচ্ছে না৷ ইউক্রেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারের কিয়েভ সফরের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করায় শলৎসও আপাতত সেখানে যাবার কোনো প্রয়োজন বোধ করছেন না৷ বার্লিনে ইউক্রেনের বিতর্কিত রাষ্ট্রদূত বিষয়টি নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করলেও শলৎস এখনো সেই শীতল সম্পর্ক কাটাতে নারাজ৷ তাঁর মতে, দেশের সব প্রধান রাজনৈতিক দলের ভোট পেয়ে স্টাইনমায়ার তাঁর দ্বিতীয় কার্যকাল শুরু করেছেন৷ ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণ প্রত্যাহারের ঘটনা অবশ্যই একটা সমস্যা৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)