ঘৃণা প্রতিরোধে ক্যাথলিক সমাজ
২৭ জুলাই ২০১৬এটা এমন এক বর্বর কাণ্ড, যা গোটা বিশ্বের মানুষকে আতঙ্কিত করেছে৷ গির্জার মধ্যে ‘মাস' বা প্রার্থনা পরিচালনার সময় একজন বৃদ্ধ যাজককে নৃশংসভাবে হত্যা করে মানব ইতিহাসের আদিম রীতি-নীতিকে বিদ্রুপ করা হয়েছে৷ ধর্মাচরণের জায়গাগুলোকে – প্রাচীনকালে যা ছিল টেম্পেল, পরিবর্তীতে সিনাগগ বা চার্চ – অবশ্যই পবিত্র রাখতে হবে এবং এগুলোকে আশ্রয়, নিরাপত্তা দেবার স্থান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে৷
এই বর্বর হত্যাকাণ্ড যেন ইতোমধ্যে ভীত, সন্ত্রস্ত ফ্রান্সের ভিতকে আরো নাড়িয়ে দিয়েছে৷ যদিও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, তারপরও ফ্রান্স আদতে গড়ে উঠেছে ক্যাথলিসিজমের ভিত্তিতে৷
সন্ত্রাস ও সহিংসতা বনাম প্রার্থনা
স্যাঁতেতিয়েন দ্যু রুভ্রের বয়োজ্যেষ্ঠ যাজক ছিলেন জাক আমেল৷ তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৮৬ বছর এবং যাজক হিসেবে কাজ করেছেন ৫৮ বছর৷ এমনকি দশ বছর আগে অবসরে যাওয়ার পরও স্থানীয় গির্জায় প্রার্থনা পরিচালনা করতেন তিনি৷ তাঁর পরিচিতরা তাঁকে সংবেদনশীল, সহজসরল এবং বন্ধুভাবাপন্ন একজন মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ তাঁকে স্থানীয় কমিউনিটির মানুষরা সত্যিই ভালোবাসতেন৷ ফ্রান্সের আরো অনেক যাজকের মতো তিনিও ছিলেন গরিব এবং নম্র৷
কিন্তু সেই দুই জঙ্গি গির্জার মধ্যে জোর করে প্রবেশ করে জাক আমেলকে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেছিল৷ বৃদ্ধ মানুষটি নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তারা তাঁর গলা কেটে দেয়৷ গির্জার ভেতরে বেদির সামনে তাঁকে হত্যা করে তারা৷ ‘শাহাদাত' শব্দটির প্রকৃত অর্থ ঘোলা করে দিয়েছে ইসলামি উগ্রপন্থিরা৷ অন্যদের হত্যা করা তো বটেই, নিজেরা ‘শহিদ' হতেও প্রস্তুত তারা৷ কিন্তু তারা আসলে অপরাধী, মানবতাকে ঘৃণা করে তারা – এটাই সত্য৷
তবে ফাদার জাক আমেল প্রকৃত অর্থেই একজন শহিদ৷ একজন নিরপরাধ ব্যক্তি তিনি, যাঁকে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ও প্রার্থনা করার জন্য খুন করা হয়েছে৷ সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা সত্ত্বেও ফ্রান্স এ ঘটনায় মর্মাহত, শোকস্তব্ধ৷
রুয়্যাঁর আর্চবিশপ দোমিনিক লেব্র্যাঁকে এমন এক সময় যাজককে হত্যার খবর দেয়া হয়েছিল, যখন তিনি ক্রাকাউয়ে ওয়ার্ল্ড ইউথ ডে উদযাপন করছিলেন৷ তিনি এ খবর শুনে মর্মাহত এবং হতবাক হয়ে যান৷ তারপরেও তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এক বার্তা দিয়েছেন৷ বলেছেন, ‘‘ক্যাথলিক চার্চ প্রার্থনা এবং মানবজাতির প্রতি ভ্রাতিত্ববোধ ছাড়া অন্য কোনো অস্ত্রের কথা জানে না৷'' ফ্রান্সের গির্জাগুলো তাই এ দিনটিতে প্রার্থনা এবং উপবাসের মাধ্যমে কাটাচ্ছে৷
ঘৃণা এবং তার অনুসারী
এই বার্তার অর্থ হচ্ছে, ‘চোখের-বিনিময়ে-চোখ’ ধরনের প্রতিশোধস্পৃহা না রাখা৷ জার্মান বিশপ সম্মেলনের নেতা রাইনহার্ড মার্ক্স-ও একই ধরনের বক্তব্যই দিয়েছেন৷ আরো সহিংসতা যাতে না ঘটে তার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি৷
কিন্তু হত্যাকারীদের অন্ধ ঘৃণা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ আর প্রশ্নটা হচ্ছে, ইসলাম যেখানে শান্তির কথা বলে, সেখানে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট'-এর এই হত্যালীলা, মৃত্যুকে উদযাপন করার এহেন কর্মকাণ্ডকে আমরা ঠিক কীভাবে নেব? কী বুঝবো আমরা এর থেকে? জার্মানির মুসলমানরা অবশ্য ফাদার আমেল হত্যার নিন্দা জানিয়েছে, যেমনটা তারা জানিয়েছিল অন্যান্য সন্ত্রাসী হামলার সময়৷
ইউরোপে, তথা বিশ্বে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলার পর, রিয়াদের তরফ থেকে প্রতিক্রিয়া অনেক দিন ধরেই প্রত্যাশিত ছিল৷ কিন্তু এ ঘটনার পরও তারা নিশ্চুপ৷ প্রশ্ন হলো, সৌদি ওয়াহাবি মতাদর্শকে নাড়া দেয় এমন কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কি আদৌ আছে? সৌদি আরবের অর্থায়নে পরিচালিত মসজিদ এবং স্কুলগুলোতে খুতবার সময় কখনও কি ‘প্রকৃত' ইসলাম কায়েমের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিষ্কারভাবে নিন্দা জানানো হবে?
এ ধরনের ঘৃণা এবং বর্বরতার অনেক মদদদাতা রয়েছে৷ আবার অনেকে আছে যারা এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে শুধু আতঙ্ক ছড়াতে চায়৷
আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷