1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ঘেন্নার বিশেষজ্ঞ’

২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩

লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের এক পরিচালক ভ্যালেরি কার্টিস নিজেই নিজেকে বলেন ‘ডিসগাস্টোলজিস্ট’৷ নোংরায় গা ঘিন ঘিন করাই হল তাঁর গবেষণার বিষয়৷ গবেষণার কাজে বাংলাদেশেও গিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/19puM
ফাইল ফটোছবি: picture-alliance/dpa

ভ্যালেরি কার্টিস বমি, পুঁজ, প্রস্রাব, পচন, এ সবের ব্যাপারে আগ্রহী৷ এটা তাঁর কোনো মানসিক রোগ নয়৷ এ ধরনের বস্তু থেকে সাধারণ মানুষের মনে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জাগে, সেটা নিয়েই ভ্যালেরির কৌতূহল৷

ভ্যালেরি কার্টিস আসলে নৃতত্ত্বে ডক্টরেট করেছেন এবং স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও আচরণ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ৷ তিনি বলেন, দৈনন্দিন জীবনে ঘেন্নাই আমাদের চালাচ্ছে৷ আমরা কী খাই, পরি, কিনি, এমনকি আমরা কাকে ভোট দিই এবং কাকে আমাদের ভালো লাগে, এ সবই নির্ভর করে ‘ঘেন্নার' উপর৷

বিজ্ঞান কিন্তু মানুষের এই বুনিয়াদি অনুভূতিটিকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দেয়নি৷ ঘেন্নাকে এককালে বলা হতো, ‘মনঃচিকিৎসার বিস্মৃত অনুভূতি'৷ অপরদিকে ভয়, প্রেম, ক্রোধ ইত্যাদি অনুভূতিগুলো চিরকালই গুরুত্ব পেয়েছে৷

কিন্তু ভ্যালেরি কার্টিস এবং তাঁর মতো আরো কিছু বিজ্ঞানী এখন প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, যৌনতা থেকে সমাজ বা স্রেফ বেঁচে থাকার জন্য ‘ঘেন্নার বিজ্ঞান' খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ ‘‘মানুষ নানা জিনিসকে ঘেন্না করে এটা না জেনেই যে, সেই ঘেন্না আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে কতোভাবে প্রভাবিত করে,'' বলেছেন কার্টিস৷

যে সব বস্তু বা দৃশ্য দেখে মানুষ নাকে কাপড় দেয়, সে সব জিনিসে কার্টিসের আগ্রহের সূচনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার ফলে৷ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও সেই সংক্রান্ত আচরণ নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো, চীন, ভারত. উগান্ডা, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও কিরগিজস্তানে গেছেন৷

ত্রিশ বছর ধরে গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে কার্টিস দেখেছেন যে, সারা বিশ্বে মানুষের একই রকম বস্তু দেখলে ঘেন্না হয়: শরীরের নানা বর্জ্য, পচে যাওয়া খাবারদাবার, যৌনতা সংক্রান্ত পদার্থ৷ যার অর্থ, আমাদের পূর্বপুরুষরা রোগ, পঙ্গুত্ব অথবা মৃত্যু এড়ানোর জন্য ঘেন্নার অনুভূতির সাহায্য নিতেন৷ যেমন ঘেন্নার ফলেই মানুষ অনেক কিছু খায় না এবং সেই পন্থায় রোগভোগ এড়ায়৷

ঘেন্না হল চোখ-কানের মতোই একটা ইন্দ্রিয়৷ তার থাকার একটা কারণ আছে, উদ্দেশ্য আছে৷ ঘেন্নাই বলে দেয়, কোন জিনিস ছোঁয়া উচিত নয়৷ আবার যাদের সঙ্গে আমরা সমাজে মেলামেশা করতে চাই, তাদের যাতে ঘেন্নার উদ্রেক না হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্যই আমরা সৌজন্যমূলক নানা সামাজিক বিধি ও রীতিনীতির আশ্রয় নিই৷ কাজেই ঘেন্না, অথবা ঘেন্না এড়ানো থেকেই মনুষ্যসমাজের সৃষ্টি, এ কথা বলতেও বাধা নেই৷

সবচেয়ে বড় কথা, ল্যাবোরেটরিতে এক্সপেরিমেন্ট করতে গেলে, ভয় কিংবা প্রীতির মতো অনুভূতি বাস্তবে উদ্রেক করা খুব সহজ কথা নয়৷ ঘেন্নার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা: একটা প্লেটের ওপর খানিকটা (‘বলতেও ঘেন্না লাগছে!') রেখে দিলেই হল৷

এসি/এসবি (রয়টার্স)