ঘোষণা অনুযায়ী বদলি কার্যকর হোক, প্রত্যাশা শিক্ষকদের
১ ফেব্রুয়ারি ২০২০বহুদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল৷ এক ধরনের বদলি নীতি কার্যকরও রয়েছে৷ কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ৷ অবশেষে এই সংক্রান্ত নতুন ঘোষণা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর সিদ্ধান্ত, এবার থেকে স্কুল শিক্ষকরা নিজের জেলাতেই নিয়োগ পাবেন৷ অর্থাৎ তাদের বাড়ি ছেড়ে বহু দূরের কোনো জেলায় থাকতে হবে না৷
মুখ্যমন্ত্রী টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের জন্য গর্বিত৷ সমাজ ও দেশ গড়তে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নেতৃত্ব দিতে ছাত্রছাত্রীদের তৈরি করতে শিক্ষকরা অভিভাবকের ভূমিকা নেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘সব শিক্ষককে নিজের জেলায় পোস্টিং দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষকরা নিজেদের পরিবারের দেখাশোনা করতে পারবেন৷ তাঁরা শান্ত মনে, পূর্ণ একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন৷''
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর বিকাশ ভবনে তৎপরতা শুরু হয়েছে৷ এই ভবন থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালিত হয়৷ বিকাশ ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। তিনি জানান, ''মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে নীতিগত পরিবর্তনের কথা বলেছেন, সে ব্যাপারে আমি স্কুল শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। নয়া নীতিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু নতুন শিক্ষকরা সুবিধা পাবেন তা নয়, এখন যে শিক্ষকরা বাড়ি থেকে দূরে চাকরি করছেন, তাঁরা নিজেদের জেলায় নিয়োগের আবেদন জানাতে পারবেন। ভবনের একটি সূত্র বলছে, নয়া নীতি কার্যকর করার রূপরেখা অনেকটাই স্থির হয়ে গিয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হবে অনলাইনে। প্রাথমিক, উচ্চপ্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মরত শিক্ষক বদলির জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। এ ব্যাপারে শিক্ষা দপ্তর একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। তারপর শিক্ষকরা আবেদন করার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় পাবেন। শুধু বদলি নয়, প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নিয়োগের পদ্ধতিতে রদবদল আসতে চলেছে।''
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় শিক্ষকরা ভীষণ উচ্ছ্বসিত এমন নয়। অতীতে একাধিকবার এই ধরনের ঘোষণা হয়েছিল। শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, বছরখানেক আগে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষিকাদের বাড়ির কাছাকাছি নিয়োগের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। তারও আগে মিউচুয়াল ট্রান্সফার বা আপস বদলি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল। এই বদলি নিয়ে শুনানি হয়ে গেলেও কবে পছন্দ অনুযায়ী স্কুলের শিক্ষকরা যেতে পারবেন, তা তাঁদের জানা নেই। অনেকেই মনে করছেন, বাড়ির কাছাকাছি পড়ানোর সুযোগ পেলে শিক্ষকরা নিজেদের কাজে অনেক বেশি মন দিতে পারবেন। তবে একাংশের মত, বাড়ির কাছে থাকলে শিক্ষকদের ছুটি নেওয়ার প্রবণতাও বাড়তে পারে৷
চলতি নিয়ম অনুযায়ী, কাউন্সেলিং-এর পর যে ব়্যাংক শিক্ষকরা পান, সেই অনুযায়ী পছন্দের স্কুল বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। যাঁদের ব়্যাংক নীচের দিকে থাকে, তাঁরা বাধ্য হন দূরের কোনো জেলায় পড়াতে যেতে। নয়া ঘোষণায় পরিস্থিতির পরিবর্তনে কতটা আশাবাদী শিক্ষকরা?
শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নতুন কোনো ঘোষণা করেননি। এখন যে বদলির পদ্ধতি চালু রয়েছে, তাতে কেউ আবেদন করলে নিজের জেলা বা বাড়ির কাছে কোনো স্কুলে পড়ানোর সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু, সেই প্রক্রিয়াই সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। মিউচুয়াল ট্রান্সফার যেমন হচ্ছে না, তেমনই স্পেশাল গ্রাউন্ডে যে বদলি হচ্ছে তাতে অনিয়ম রয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়াটা জরুরি।''
তাই শিক্ষকরা এখন তাকিয়ে বিকাশ ভবনের দিকে, কবে শিক্ষা দপ্তর এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। এ নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে, এটা তাঁদের স্বস্তিতে রেখেছে।