অপরাধীর কাছ থেকে শিক্ষা
৭ অক্টোবর ২০১৫ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কাস্টারের বাসিন্দা নাটালিকে গত বছর সে দেশের সেরা শিক্ষার্থীর খেতাব দেয়া হয়৷ এছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সে ‘পুলিশিং, তদন্ত ও অপরাধবিজ্ঞান' বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় (ছবিতে এই ডিগ্রি হাতে তাকে দেখা যাচ্ছে)৷ এখন ‘লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স'-এ পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন করছে নাটালি৷
অথচ এই নাটালির বয়স যখন ১২ তখন তাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল৷ এরপর একের পর এক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সে৷ ফলে শুরু হয় শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্র ও জেলে নিয়মিত যাতায়াত৷ ২০ বছর বয়স পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৫০টিরও বেশি অভিযোগ আনা হয়৷ বয়স ১৮ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে অপরাধের শাস্তি হিসেবে শিশু-কিশোর কেন্দ্রে থাকতে হয়েছে৷ তারপর সে জেলখানায় অন্য অপরাধীদের সঙ্গে কাটায়৷
এরপরই নিজেকে পাল্টে ফেলে নাটালি৷ প্রথমে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ৷ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়৷
কিন্তু কীভাবে সম্ভব হলো? নাটালি বলেছে, বছরের পর বছর জেলে কাটানোর পর একটা সময় নাকি তার উপলব্ধি হয়, অনেক হয়েছে, এভাবে আর নয়৷ এই অবস্থা থেকে মুক্তি দরকার৷ তখন সে প্রথমে চাকরির কথা ভাবে৷ কিন্তু একজন অপরাধীকে কে চাকরি দেবে? তাই সে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করে, পরে লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়৷
অপরাধী থেকে এই যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সেটা সম্ভব হয়েছে সেই সময় তার আশেপাশে থাকা মানুষদের জন্য, যাঁরা তাকে সমর্থন যুগিয়েছে৷ নাটালি পরে বলেছেনও যে, ঐ মানুষগুলোর সমর্থন না থাকলে তার পক্ষে নাকি আজকে এই সফলতা পাওয়া সম্ভব ছিল না৷
এতক্ষণ ধরে এই সত্য কাহিনিটি শোনানোর উদ্দেশ্য একটাই৷ নাটালির জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া৷ সেটা যেমন নিতে হবে কিশোর অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের, তেমনি আমাদের সবার৷
নাটালির কাহিনির দুটো বিষয়ের দিকে পাঠকদের একটু মনোযোগ দিতে অনুরোধ করবো৷ প্রথমত, নাটালির উপলব্ধি৷ অর্থাৎ সে যে জীবনে পরিবর্তন চেয়েছিল সেই উপলব্ধি৷ আর পরেরটি হলো, আশেপাশের সবার তাকে সমর্থন দেয়া৷
দুটি বিষয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ যেসব শিশু-কিশোর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তাদের একটা সময় উপলব্ধি করতে হবে যে, তারা যে কাজ করছে সেটা ঠিক নয়৷ এক্ষেত্রে শুভাকাঙ্খীদের কাজ হবে শিশু-কিশোরদের সহায়তা করা যেন তাদের মধ্যে উপলব্ধিটি তাড়াতাড়ি আসে৷ আর যখনই সেটা আসবে তখনই শুভাকাঙ্খীদের কাজ দ্বিগুণ হয়ে যাবে৷ তাদের তখন ঐ শিশু-কিশোরের উপলব্ধিটি তাড়াতাড়ি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে, পাছে দেরি হয়ে না যায়৷
আমরা জানি কী কী কারণে একজন শিশু বা কিশোর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে৷ তাই বলে তারা একেবারে উৎসন্নে গেছে বলে ছেড়ে দিলে হবে না৷ চেষ্টা করতে হবে তাদের সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার৷ তাহলে যেমন সেই শিশু বা কিশোরের উপকার হবে, তেমনি সমাজ হয়ে উঠবে আরও সুন্দর, আরও বাসযোগ্য৷
শেষ করছি নাটালিরই আরেকটি মন্তব্য দিয়ে৷ টুইটারে করা তার এই বক্তব্যটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ চলুন, মনোযোগ দিয়ে পড়ি আর বোঝার চেষ্টা করি সে কী বলতে চেয়েছে৷
জাহিদুল হকের মন্তব্যের সঙ্গে আপনি কি একমত? মতামত জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷