1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী মুক্তিযোদ্ধা

৬ জুন ২০১২

ময়মনসিংহের সন্তান হলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে চাঁদপুরের মানুষের দুঃখ-কষ্টের সঙ্গী ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ১১টি অঞ্চলে নৌকায় করে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/158bC
Freiheitskämpferin Dr Sayeda Badrun Nahar Chowdhury nimmt die Medaille von Sheikh Hasina, Premier Ministerin von Bangladesch Datum: 27.03.2012 Eigentumsrecht: Abdul Karim, Dhaka, Bangladesch
প্রধানমন্ত্রীসহ অতিথিদের পাশে নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী (দাঁড়িয়ে ডান থেকে দ্বিতীয়)ছবি: DW

১৯৫০ সালের ১৫ই জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্ম গ্রহণ করেন সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী৷ পিতা সৈয়দ দরবেশ আলী এবং মা সৈয়দা হোসনে আরা বেগম৷  ১৯৬৯ সালে ঢাকা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে পড়ার সময় সমমনা রাজনৈতিক আদর্শের অন্যতম নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র তোফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বদরুন নাহার৷ ফলে স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে একাত্ম ছিলেন৷ এছাড়া শ্বশুড় বাড়ির এলাকা হিসেবে চাঁদপুরকে ঘিরেই কেটেছে ডা. বদরুন নাহারের বাকি জীবন ও কর্মকাণ্ড৷

১৯৭১ সালে এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন বদরুন নাহার৷ মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী ডিডাব্লিউ'কে জানান, ‘‘বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি৷ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য আমি এবং আমার স্বামী ২৫শে মার্চ ঢাকা থেকে চলে আসি৷ আমরা চাঁদপুরে এসে সেখানে প্রথম গঠিত স্থানীয় সরকারে যোগ দেই৷ এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১২০৪ সাব-সেক্টরের অধীনে জহিরুল হক পাঠানের নেতৃত্বাধীন মধুমতী কোম্পানিতে আমি মেডিকেল কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করি৷ ঐ অঞ্চলের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এটিএম হায়দার৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ওলিপুর গ্রামের প্রশিক্ষণ শিবিরে আমি অস্ত্র চালনা এবং আত্মরক্ষা কৌশলের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পুরো নয় মাস আমি বাইরে ছিলাম৷ এসময় আমি অধিকাংশ সময় নৌকায় করে সাথী যোদ্ধাদের সেবা শুশ্রূষা করেছি৷''

For online Dr Syeda Bodrun Nahar Chowdhury Part 1 - MP3-Mono

দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধক্ষেত্রে বিচরণ করে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ১১টি অঞ্চলে আহত মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করেছেন বীর সাহসী নারী ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী৷ ফলে এই ভয়াবহ সংকটের দিনে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং কষ্টকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি৷

সেসব ঘটনার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেদিন ছিল ২৯শে সেপ্টেম্বর৷ আশ্বিন মাসের শেষ দিন৷ হাজীগঞ্জের অফিস চিতোষী এলাকায় একটি বিদ্যালয়ে পাক সেনাদের ঘাঁটি ছিল৷ আমি তো নৌকায় দূরে ছিলাম৷ আমার কাছে কমান্ডার জহিরুল হক পাঠান খবর পাঠালেন যে, ঐ বিদ্যালয়ে পাক সেনারা বেশ কিছু মহিলাকে আটকে রেখেছে এবং তাদের উপরে পাশবিক নির্যাতন করেছে৷ খবর পেয়ে আমি রওয়ানা দিলাম৷ পাঠান বাহিনী ইতিমধ্যে পাক বাহিনীর ঐ ঘাঁটি আক্রমণ করে৷ দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলার পর পাকিস্তানি সেনারা কিছু লাশ এবং কিছু মহিলাকে সেখানে রেখে পালিয়ে যায়৷  আমি মনে করি, নয় মাসের যুদ্ধের অনেক ঘটনার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে হৃদয় বিদারক৷ আমি সেই বিদ্যালয়ের ভেতরে গিয়ে দেখলাম, ১২ থেকে ১৩ টি মহিলা৷ পাক সেনাদের পাশবিক অত্যাচারের প্রতিটি চিহ্ন তাদের গায়ে৷ তারা সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় সেখানে ছিল৷ সেই স্মৃতি এখনও আমার চোখের সামনে ভাসে এবং তাদের কথা স্মরণ করলে এখনও আমি কান্না ধরে রাখতে পারি না৷ এ অবস্থায় আমার কিছু কাপড়-চোপড়, আমাদের সাথীদের কাপড়-চোপড় এবং আশেপাশের মানুষদের সহায়তায় তাদেরকে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ফেলি৷ এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা দিই৷ শুধু তাই নয়, আমি যে নৌকায় থাকতাম এবং বিভিন্ন জায়গায় যেতাম, সেই নৌকায় করে তাদের নিয়ে আসি৷ সেসময় আমার কাছেও খুব বেশি ওষুধ-পত্র ছিল না৷ তবু সেসব দিয়েই তাদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলি৷ পরে তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে তাদের পৌঁছে দেই৷ আমার কাছে এখনও মনে হয়, আমার চিকিৎসা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো যে, আমি সেই নির্যাতিত মহিলাগুলোকে চিকিৎসা সেবা দিতে পেরেছি৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য