চাপের শহর ঢাকা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংস্থা জিপজেট মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, ট্রাফিক জ্যাম, লৈঙ্গিক সমতাসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে এই তালিকা তৈরি করেছে৷ তাঁদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে কম চাপের শহর জার্মানির স্টুটগার্ট৷
১৫০টি শহরের উপর করা বৈশ্বিক এই তালিকায় ঢাকার অবস্থান ১৪৪, যা এশিয়ার মধ্যে খুব খারাপ৷ তবে ঢাকার চেয়েও বেশি চাপের মধ্যে আছে ইরানের তেহরান, আফগানিস্তানের কাবুল, নাইজেরিয়ার লাগোস৷ তালিকার সবশেষে, মানে সবচয়ে বেশি চাপের শহর হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইরাকের রাজধানী বাগদাদ৷
তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চাপের শহর বাগদাদ৷ তারপরই রয়েছে যথাক্রমে কাবুল, লাগোস, ডাকার, কায়রো এবং তেহরান৷ ঢাকা রয়েছে সপ্তম স্থানে৷ সবচেয়ে চাপের শহরের সেরা দশের তালিকায় অষ্টম, নবম ও দশম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে করাচি, মুম্বাই ও ম্যানিলা৷
ঢাকার চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে ভারতের দিল্লি ও মুম্বাই৷ তাদের অবস্থান যথাক্রমে ১৪২ ও ১৩৮৷ পাকিস্তানের করাচি আছে ঠিক ঢাকার উপরে, ১৪৩তম স্থানে৷ ঢাকা বিশ্বের অন্যতম চাপগ্রস্থ শহর হওয়ার পিছনে ছিল মূলত ট্রাফিক জ্যাম, ঘন জনবসতি ও দুষণ৷ এছাড়া ঢাকাবাসীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের র্যাংকিংও খুব ভালো নয়৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ মালেক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা যানজট৷ গাড়ি বেশি, সড়ক কম৷ ঢাকা একটা মেগাসিটি৷ এখানে অনেক লোকের বসবাস৷ এখানে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, তা নেই৷ মার্কেটগুলো শহরে আরো চাপ তৈরি করছে৷ এর একটা প্রভাব আছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘দুযোর্গ দুই ধরনের৷ একটা প্রাকৃতিক এবং আরেকটা মানুষের সৃষ্টি৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা অভ্যস্ত৷ এটা আমরা জানি কখন কী করতে হবে৷ কিন্তু মানুষের সৃষ্টি দুর্যোগের জন্য আমরা প্রস্তুত থাকি না সব সময়৷ তাই চাপ সৃষ্টি করে৷ আমরা এই শহরে যা আশা করি, তা পাই না৷ আবার একটি সমস্যার সমধান যত দ্রুত চাই, তা হয় না৷ এগুলো হতাশ করে৷ তাপরও মানুষ আশাবাদী৷ ঢাকা শহরের মানুষ আশা করে এসব সমস্যার সমাধান হবে৷’’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘ঢাকা শহর নানা দিক দিয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে৷ এটা বড় ধরণের মানসিক চাপে রাখছে ঢাকার অধিবাসীদের৷ তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে৷ বাসা থেকে কর্মস্থলে যেতে যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় পথে থাকতে হয়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘নাগরিকরা অনেক সুযোগ-সুবিধাই পায়না৷ তারপরও গ্যাস, বিদ্যুত, পানির দাম বাড়ছে, বাড়ছে হোল্ডিং ট্যাক্স৷ নগরবাসীর জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠছে৷’’
এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এর ফলে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে৷ ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে৷ অল্পতেই রেগে যাচ্ছে৷ রগচটা হয়ে পড়ছে৷ সামাজিক আচরণে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে৷ তরুণ বা কমবয়সিরা এই মানসিক চাপ বা হতাশা থেকে মাদকাসক্ত হতে পারে, অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে৷’’
চাপ কম এমন বিবেচনায় শীর্ষ পাঁচটি শহরের তিনটি শহরই জার্মানির৷ স্টুটগার্ট প্রথম, হানোফার তৃতীয় এবং মিউনিখ রয়েছে পঞ্চম অবস্থানে৷ অস্ট্রেলিয়ার সিডনি রয়েছে তালিকার ৮ নম্বরে৷ শীর্ষের বেশিরভাগ শহরই ইউরোপের৷ এশিয়ার মধ্যে কম চাপের শহর সিঙ্গাপুর৷ তাদের অবস্থান ৪২৷ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রয়েছে তালিকার ৮৪ নম্বরে৷ মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের অবস্থান ১১০ তম৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
গত বছরের ১৮ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন৷