‘কেয়ামতের পূর্বলক্ষণ’
২ সেপ্টেম্বর ২০১২এক বছর আগে গাড়ি চালানো শিখেছেন আঞ্জেলা শরিফি৷ তিনি জানালেন, এখন তিনি বেশ ভালোই গাড়ি চালান, বিশেষ করে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়াদি তিনি ভালোভাবে রপ্ত করে ফেলেছেন৷ হাস্যোজ্জ্বল আঞ্জেলা বলেন, ‘শুরুতে কেউ একজন গাড়ি চালানোকে যত কঠিন মনে করে, কার্যত বিষয়টি ততটা কঠিন নয়৷'
বিশ্বের অন্যান্য দেশে গাড়ির চালকের আসনে নারীর উপস্থিতি তেমন বিস্ময়কর কোন ব্যাপার হয়তো নয়, তবে আফগানিস্তানের বাস্তবতা ভিন্ন৷ সেদেশের পুরুষরা চালকের আসনে কোন নারীকে দেখলে এখনো হতভম্ব হয়ে পড়েন৷ ভাবখানা এমন যে, তারা ‘ভূত' দেখেছেন৷ আঞ্জেলা এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কোন নারী গাড়ি চালালে রাস্তায় থাকা পুরুষরা তা হাঁ করে দেখতে থাকে৷ মনে হয় তারা যেন ভূত দেখছেন৷ কিছু পুরুষ আবার বলে বসেন, এসব হচ্ছে কেয়ামতের পূর্বলক্ষণ৷''
আঞ্জেলা গয়ড় প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদের একজন সদস্য৷ পুরুষশাসিত সমাজে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়ে সেটা জানেন তিনি৷ আফগান সমাজে মেয়েদের সামাজিক যোগাযোগের পরিধি ঐতিহ্যগতভাবেই সীমাবদ্ধ৷ অধিকাংশ নারীই বোরকা ছাড়া বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে পারেন না৷ এই বাস্তবতার মাঝেও আঞ্জেলাকে সৌভাগ্যবান বলতে হবে৷ কেননা, তাঁর স্বামীই তাঁকে গাড়ি চালাতে উৎসাহ যুগিয়েছেন, সহায়তা করেছেন৷
সমমূল্যায়ন
গয়ড় প্রদেশের রাজধানী চেকচেরন তেমন একটা উন্নত কোন শহর নয়৷ তবে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী শহর এবং সেখানে বর্তমানে দু'কিলোমিটারেরও কম বাঁধানো রাস্তা আছে৷ গোটা আফগানিস্তানে বাঁধানো রাস্তা রয়েছে ১২,৩৫০ কিলোমিটার৷ চেকচেরনের রাস্তায় কোন ‘স্ট্রিট সাইন' নেই৷
গয়ড় প্রদেশের চালক এবং গাড়ির লাইসেন্স বিষয়ক সংস্থার প্রধান সাইদ মোহাম্মদ হাসিন খান এই বিষয়ে বলেন, ‘‘শরৎকালের মধ্যে আরো দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকা করা হবে৷ এছাড়া রাস্তায় বিভিন্ন সংকেতও যোগ করা হবে৷''
হাসিন খান আশা প্রকাশ করে বলেন, গয়ড় প্রদেশে শীঘ্রই গাড়ি চলাচলের উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে৷ সেটা সম্পন্ন হলে ট্রাফিক আইন বিষয়ে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষারও আয়োজন করা হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই একইভাবে ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স টেস্ট' গ্রহণ করা হবে৷ তাদেরকে সামানভাবেই মূল্যায়ন করা হবে৷''
সামাজিক অভ্যুত্থান
গয়ড় প্রদেশে চালকের আসনে নারীর উপস্থিতি এখন এক নতুন ধারা৷ কেউ কেউ মনে করেন, এটা হচ্ছে কেয়ামতের পূর্বলক্ষণ, আবার কারো মতে, এটা হচ্ছে পশ্চিমা সংস্কৃতি আয়ত্ত্বের চেষ্টা৷ গয়ড়ের মানবাধিকার পরিষদের নারী অধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা ড. আকিল শরিফি এই বিষয়ে বলেন, ‘‘দীর্ঘ সময় পর আফগান নারীরা তাদের এক নতুন পরিচয় সৃষ্টি করতে চলেছেন৷ গত দশকে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে আমাদের সমাজের উন্নতি ঘটিয়েছে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে৷ আর সেই পরিবর্তনের সুবাতাস বইছে আমাদের প্রদেশেও৷''
শরিফি জানান, নারীদের মধ্যে গাড়ি চালানোর প্রবণতা বাড়ছে এবং এদের মধ্যে অনেকের নিজের গাড়িও রয়েছে৷
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার হার অত্যন্ত কম৷ এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের আশায় বর্তমান হামিদ কারজাই সরকার মেয়েদেরকে স্কুলে পাঠানোর চেষ্টা করছে৷ এক্ষেত্রে বিদেশি দাতাসংস্থাগুলো সহায়তা করছে৷
প্রতিবেদন: আবু জামাল / ওয়াসলেত হযরত-নাজিমি / এআই
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই