চীন-মিয়ানমার
৩ জুন ২০১২মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তেইন সেইন প্রথম যে কাজটি করেন সে'টি হল, মায়িতসোনে বাঁধ প্রকল্পটি বাতিল করা৷ ওদিকে ঐ বাঁধ প্রকল্প ছিল মিয়ানমারে চীনের বৃহত্তম বিনিয়োগ প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি৷ ইরাবতী নদীর এই বাঁধ থেকে দক্ষিণ চীনের প্রদেশগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবার কথা ছিল৷
তেইন সেইন বাঁধ প্রকল্প বাতিল করে এক ঢিলে দুই পাখি মারেন: প্রথমত পশ্চিমকে জানান দেন যে, মিয়ানমার পশ্চিমি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত; দ্বিতীয়ত, তিনি মিয়ানমারের জনগণের সহানুভূতি পান, কেননা মিয়ানামারের মানুষ চীনকে বিশেষ ভালো চোখে দেখে না৷
চীন নব্বই'এর দশকের গোড়া থেকে মিয়ানমারে বিনিয়োগ করে আসছে প্রায় বিনা প্রতিযোগিতায়৷ কিন্তু ২০১০ সাল থেকে মিয়ানমারে যে পরিবর্তনের জোয়ার এসেছে, তা'তে চীনকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে৷ অপরদিকে বাঁধ প্রকল্প বাতিল হওয়ায় চীন কিছুটা ক্ষুণ্ণ হলেও, তাদের মিয়ানমারে একাধিক অন্য প্রকল্প রয়েছে, যেমন একটি পাইপলাইন প্রকল্প ও একটি রেলপথ প্রকল্প৷
এছাড়া মিয়ানমারের উন্মোচন ও বিকাশের ফলে অর্থনৈতিক বিচারে চীনের লাভ বৈ ক্ষতি হবার কোনো কারণ নেই৷ মিয়ানমারের এই পরিবর্তন যদি দেশটিতে আরো বেশি স্থায়িত্ব আনে, তা'তেও চীনের লাভ৷ চীন চায় তার সীমান্তে স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা৷ কাজেই মিয়ানমারে গণতন্ত্র কিংবা অন্য কোনো ধরণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে, চীনের তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই৷
অপরদিকে চীন এ'অঞ্চলের মুখ্য অর্থনৈতিক শক্তি৷ চীনে এখন যে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক বিকাশ চলেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে লাভবান হতে আগ্রহী হবে৷ তফাতটা শুধু এই: অতীতে মিয়ানমারের ওপরতলার মানুষরাই শুধু চীনা সহযোগিতা থেকে উপকৃত হয়েছে৷ এবার হয়তো দেশের বাকি মানুষরাও তার উপকার পাবে৷
প্রতিবেদন: ক্রিস্টফ রিকিং/রডিয়ন এবিংহাউজেন/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন