চীন হামলা করলে রাশিয়া আসবে না: দিল্লিকে অ্যামেরিকা
১ এপ্রিল ২০২২মার্কিন ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসার দলীপ সিং দিল্লি এসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সহ ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করলেন। সেখানে তিনি কার্যত চীনা-জুজুর কথা বলেছেন। দলীপ সিং ভারতীয় কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে এখন 'নো লিমিট পার্টনারশিপ' হয়েছে। তাই চীন যদি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরোয়, তাহলে রাশিয়া ভারতের পক্ষে আসবে না। এই সহজ সত্য যেন দিল্লি মাথায় রাখে।
দলীপ সিং বলেছেন, ''রাশিয়া ও চীনের মধ্যে নো লিমিট পার্টনারশিপ হয়েছে। রাশিয়া জানিয়েছে, চীন তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। ভারতের কাছে এই ঘোষণার আলাদা তাৎপর্য আছে।'' তার দাবি, ''এই অংশীদারিত্বে রাশিয়া জুনিয়ার পার্টনার। আর এই পার্টনারশিপ ভারতের স্বার্থবিরোধী। চীন যদি আবার এলএসি পেরোয়, তাহলে রাশিয়া ভারতের পক্ষ নিয়ে দৌড়ে আসবে না।''
দলীপ সিং আরেকটা কথা ভারতকে জানিয়ে দিয়েছেন। ভারত যে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, তাতে অ্যামেরিকার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেটা সীমার মধ্যে থেকে যেন কেনা হয়। সীমার মধ্যে মানে অন্যান্য বছর যে পরিমাণ তেল রাশিয়া থেকে ভারত কেনে, তার মধ্যে থাকা। সামান্য কম-বেশি হলে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু রাশিয়া থেকে ভারত যেন বিপুল পরিমাণ তেল না কেনে। আর রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে যেন কোনো লেনদেন না করা হয়।
দলীপ সিং-এর বার্তা
দলীপ সিং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এটা জানিয়ে দিয়েছেন, রাশিয়া নির্ভরযোগ্য তেল সরবরাহকারী নয়। অ্যামেরিকার শরিক ও বন্ধু দেশগুলি রাশিয়ার উপর থেকে তেল নিয়ে নির্ভরতা কম করছে। অ্যামেরিকা রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ভারত যেন সেই নিষেধাজ্ঞা না ভাঙে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার অন্যতম কারিগর এই দলীপ সিং।
দলীপ সিং বলেছেন, ''আমি ভারতে এসেছি বন্ধুত্বের পরিবেশে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করতে। ভারতের তেল ও প্রতিরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা পূরণ করতে অ্যামেরিকা তৈরি।''
অ্যামেরিকার দাবি
হোয়াইট হাউসের ডিরেক্টর কমিউনিকেশন কেট বেডিংফিল্ড জানিয়েছেন, ''দলীপ সিংয়ের সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তাদের আলোচনা খুবই ভালো হয়েছে। আমি জানি আলোচনা সফল হয়েছে।''
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ''ভারত বা অন্য দেশের ক্ষেত্রে আমরা যা চাই, তা হলো, আন্তর্জাতিক দুনিয়া যেন একসুরে কথা বলে। তারা যেন অন্যায্য, উসকানিহীন, আগে থেকে ঠিক করে নেয়া আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং সহিংসতা বন্ধ করতে বলে। এই সব দেশের রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আছে এটা ঠিক, তার জন্য তাদের আরো বেশি করে এই কথা বলা দরকার।''
নেড প্রাইস জানিয়েছেন, ''আমরা চাই না, রাশিয়া থেকে ভারত তেল বা অন্য জিনিস প্রচুর পরিমাণে আমদানি করুক। অ্যামেরিকা যে সব জিনিসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা যেন রাশিয়া থেকে কেনা না হয়।''
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লিতে
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও এখন দিল্লিতে। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলবেন। দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে।
রাশিয়া এখন ভারতকে বিপুল ডিসকাউন্টে তেল দিতে চাইছে। ইউক্রেন-সংঘাত শুরু হওয়ার আগের দামের থেকেও ব্যারেল প্রতি ৩৫ ডলার ডিসকাউন্ট দিতে চাইছে রাশিয়া। তারা চাইছে, ভারত অবিলম্বে এই বছরের জন্য নির্ধারিত ১৫ মিলিয়ান ব্যারেল তেল কিনে নিক।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে। তাই দেশগুলি যে নিজের মানুষের স্বার্থে অন্য বাজারের খোঁজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। জয়শঙ্কর বলেছেন, ''আমি একটা ব্যাপারে নিশ্চিত, আমরা যদি আরো দুই তিন মাস অপেক্ষা করতাম, তাহলে দেখতাম, রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কেনার জন্য বড় বড় ক্রেতারা দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তো সেই তালিকায় প্রথম দশেও থাকব না।''
জয়শঙ্কর যখন এই কথা বলছেন, তখন তার পাশে ছিলেন যুক্তরাজ্যের ফরেন সেক্রেটারি লিজ ট্রুস।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এপি, রয়টার্স)