1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌ছাত্র-ছাত্রীদের কথা কে ভাবে!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

কোভিড সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেই সর্বভারতীয় যৌথ প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসতে বাধ্য হচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রীরা৷ বিচার বিভাগ বা প্রশাসন, কেউই ওঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভাবল না৷

https://p.dw.com/p/3iKYy
রবিবার মেডিকেল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাছবি: DW/P. Samanta

পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের একাধিক রাজ্যের সরকার চায়নি যে, এই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে দেশ জুড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারির যৌথ প্রবেশিকা পরীক্ষা হোক৷ কিন্তু পরীক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হবে, ইঞ্জিনিয়ারিং আর মেডিকেল কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা দ্বিতীয় বর্ষে চলে গেলে নতুন শিক্ষার্থীর অভাবে প্রথম বর্ষের ক্লাস ফাঁকা যাবে, ইত্যাদি নানা দিক বিবেচনা করে নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা নেওয়ার বিধান দিয়েছিল আদালত৷ অথচ অভিভাবকরা অনেকেই চাননি যে তাঁদের ছেলে-মেয়েরা এই সংকট পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দিতে গিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ুক৷ তাঁরা ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কাছে ফের সিদ্ধান্ত বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিলেন৷ যে সব রাজ্য সরকার এই সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিরুদ্ধে, তারাও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল৷ কিন্তু সব পক্ষকে নিরাশ করে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দেয়, পরীক্ষা হবে৷

কিন্তু এমন মারাত্মক এক সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার কোনও পরিকল্পনাই নজরে পড়ল না৷ এবারও যথারীতি বিভিন্ন জেলার পরীক্ষার্থীরা এই লকডাউনের মধ্যেই উজিয়ে কলকাতা এবং সংলগ্ন মফস্‌সলে যাচ্ছেন রবিবার মেডিকেল জয়েন্ট এন্ট্রান্সের পরীক্ষা দিতে৷ তার আগে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষাও একই ভাবে দিতে আসতে হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের৷ পশ্চিমবঙ্গে আগামী রবিবারের পরীক্ষা যাতে দিতে পারে সবাই, সে জন্য শনিবারের ঘোষিত লকডাউন বাতিল করেছে রাজ্য সরকার৷ পরীক্ষার্থীদের জন্যেই বিশেষ ভাবে কলকাতায় মেট্রো রেল চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷

কলকাতা নামটা শুনলেই একটা ফোবিয়া: সুমন গোস্বামী, শিক্ষক

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, একটা শহর মানেই তো গোটা রাজ্য নয়৷ জেলার ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষা দিতে শহরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন৷ যেখানে কোভিড সংক্রমণের হার গ্রামাঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি৷ লকডাউনের ভয়ে অনেকেই আগে থেকে এসে হাজির হয়েছেন৷ থাকছেন আত্মীয়দের বাড়ি কিংবা হোটেলে৷ বলা বাহুল্য, সর্বত্রই সংক্রামিত হওয়া, এবং সংক্রমণ নিয়ে ফিরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা৷ অথচ পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, কেন্দ্রপিছু পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমানো, এবং সেই ভাবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা একটু উদ্যোগী হলেই করা যেত৷ যেমন বললেন বর্ধমানের শিক্ষক সুমন গোস্বামী৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌কলকাতা নামটা শুনলেই একটা ফোবিয়া হচ্ছে! ‌কলকাতায় গিয়ে থাকব! কিন্তু তা সত্ত্বেও একটা বছরের ব্যাপার যখন, চলে যাই, এমন মনে হচ্ছে অনেকের৷ অনেকে যায়নি৷ সব মিলিয়ে একটা বিশৃঙ্খলা৷’’

‌জরুরি প্রশ্ন তুলেছেন‌ সুমনবাবু৷ পরীক্ষা দিতে জেলার ছেলে-মেয়েদের কেন কলকাতাতেই যেতে হবে? ‌তাঁর বক্তব্য, ‘‌‘‌বিভিন্ন জায়গায় যদি (‌পরীক্ষা কেন্দ্র)‌ ছড়িয়ে দেওয়া যেত, তা হলে একই জায়গায় যে গ্যাদারিং, সেটা কম হতো৷ ফলে সংক্রমণের প্রবণতাও এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয় যে অনেক কম হতো৷ এখন একাধিক বিএড কলেজ হয়ে গেছে, সেগুলোকে ব্যবহার করা যেতে পারত৷’’

‌কিন্তু পরীক্ষার নিয়ামক যাঁরা, তাঁরা নিয়ম মেনে চলতে যতটা দড়, দেখাই যাচ্ছে যে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থ রক্ষায় আদৌ ততটা নন৷ ফলে শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হল না, এই সাফল্যেই তাঁরা খুশি৷ কতজনের ভবিষ্যৎ নষ্ট হলো, বা হতে পারে, সেই ভাবনায় তাঁরা মোটেই ভাবিত নন৷