ছাত্র রাজনীতি কী প্রমাণ করে?
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, দাবি আদায়ে ছাত্রনেতারা আন্দোলন না করে উলটো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নানাভাবে বাধা দিচ্ছেন৷ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি আন্দোলনের সময় তারা আন্দোলনকারী ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল মন্তব্য করেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷ এই ঘটনার এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে সেখান থেকে মুক্তি পেতে তিনি ছাত্রলীগের সহায়তা চান বলে অভিযোগ উঠেছে৷
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ছাত্রনেতাদের ব্যবহারের এমন অভিযোগ আগেও উঠেছে৷ কয়েকদিন আগে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ফি কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন৷ কিন্তু তাতে বাধা দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা৷ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিতে কলেজের অধ্যক্ষই নাকি ছাত্রলীগের কিছু কর্মীকে ডেকে নিয়েছিলেন৷
এবার একটু বড় ঘটনাগুলোর দিকে তাকাবো৷ ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে রাতের অন্ধকারে সাধারণ ছাত্রীদের উপর হামলা চালিয়েছিল পুলিশ৷ সেই ঘটনার প্রতিবাদে বড় আন্দোলন গড়ে উঠেছিল৷ সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেটি শুরু করেছিলেন৷ মনে পড়ে, সেই সময় বৃষ্টিতে ভিজে রোকেয়া হলের সামনে গড়ে তোলা ‘মুক্তাঞ্চল'-এ বসে থাকার কথা৷ মনে পড়ে, আমাদের প্রতিবাদ-মিছিলে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ আর লাঠিচার্জের কথা৷ মনে পড়ে, আন্দোলন ভণ্ডুল করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর তৎকালীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাপুষ্ট ছাত্রদল আর ছাত্রশিবিরের হামলার কথা৷ অবশ্য কোনো কিছুই সেই আন্দোলনকে আংশিক সফল হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি৷ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী৷ তবে এখনও সেদিন রাতে ছাত্রীদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচার করা যায়নি৷ সাধারণ শিক্ষার্থীদের শুরু করা এই আন্দোলনে পরে যোগ দিয়েছিলেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা৷
এবার পাঁচ বছর পরের আরেকটি আন্দোলনের কথা৷ সময়টা ছিল ২০০৭৷ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখন ক্ষমতায়৷ ঐ বছর আগস্টের ২০ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ফুটবল খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেনা সদস্যদের বিরোধ লেগেছিল৷ ঐ ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হলে আন্দোলন গড়ে ওঠে৷ পরবর্তীতে তা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আটককৃত শিক্ষকদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷
এখানে চারটি আন্দোলনের কথা উল্লেখ করলাম৷ এর মধ্যে শেষের দু'টি (শামসুন্নাহার ও তত্ত্বাবধায়ক আমলের আন্দোলন) ঘটনা বেশ বড়৷ দুটোই শুরু করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷ বিশেষ করে, সেনাসমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে এমন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিলেন, যখন বেশিরভাগ রাজনীতিবিদই ভয়ে চুপসে ছিলেন৷
আর বাকি দুই আন্দোলন ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা৷
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ পড়ার পর আপনার হয়ত মনে হতে পারে, ছাত্র রাজনীতিকে খারাপ প্রমাণ করার জন্যই আমি নির্দিষ্ট ঐ ঘটনাগুলো বেছে নিয়েছি, আর ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল অতীতের কথা এড়িয়ে গেছি৷ আসলে কিন্তু তা নয়৷ আমি শুধু বলতে চেয়েছি, গত দুই দশকে ছাত্র রাজনীতির যে গতিপ্রকৃতি দেখা যাচ্ছে তাতে কিছুদিনের জন্য হলেও তা বন্ধ রাখা যেতে পারে৷ তাহলে রাজনীতিবিদদের মধ্যে যাঁরা এখন প্রয়োজনে ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের ব্যবহার করছেন, তাঁরা এরকম চর্চা ছাড়াই চলাফেরা শিখে যাবেন৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছাত্র সংগঠনের দ্বারস্থ না হয়ে অন্য সমাধান বের করা শিখে যাবে৷
আর এ সব কিছু হওয়ার পর চাইলে আবারও ছাত্র রাজনীতি শুরু করা যেতে পারে৷ তখন হয়ত ছাত্র রাজনীতির একটি সুস্থ ধারা আমরা আশা করতে পারি৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷