ছাত্রদেরই জয়, শেষ হলো অনশন
২৩ জুলাই ২০১৮রবিবার ছিল মেডিকেল কলেজে অনশনরত ছাত্রদের সমর্থনে গণ কনভেনশন৷ মাত্র একদিনের নোটিসে ডাকা সেই কনভেনশনে যোগ দিয়েছিলেন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও সমাজের বহু স্তরের মানুষ৷ এবং সর্বত্র মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেল পাওয়ার ন্যায্য দাবির সমর্থনে জনরব জোরদার হচ্ছিল৷ কবি শঙ্খ ঘোষ, অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, গীতিকার-গায়ক কবীর সুমন, এবং আরও অনেক বিশিষ্টজন খোলাখুলি ছাত্রদের সপক্ষে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছিলেন৷ পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক নেতারাও সরব হয়েছিলেন ছাত্রদের পক্ষে৷ সিপিএম সাংসদ সুজন চক্রবর্তী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভায় প্যান্ডেল ভেঙে পড়ে আহতদের দেখতে আপনি হাসপাতাল যাওয়ার সময় পেয়েছেন, কিন্তু মেডিকেল কলেজের অনশনরত ছাত্রদের কাছে যাওয়ার দরকার মনে করেননি! একদা তৃণমূল এবং মমতা ব্যানার্জির অতি বিশ্বস্ত, এখন বিজেপি নেতা মুকুল রায় চিঠি দেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা এবং জাতীয় মেডিকেল কাউন্সিলের সভানেত্রী জয়শ্রী মেহতাকে এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজের এই অচলাবস্থায় হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান৷ তার আগে মুকুল রায় অনশনরত ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করতে মেডিকেল কলেজেও গিয়েছিলেন৷ কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা তখনই তাঁকে জানিয়ে দেন, তাঁদের আন্দোলনে কোনো রকম রাজনৈতিক রঙ লাগুক, তা তাঁরা চাইছেন না৷ বস্তুত শুরু থেকেই এই অবস্থানে স্থির থেকেছেন মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীরা, যে এ তাদের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা এবং তার সমাধানের জন্য তাঁরা কলেজ কর্তৃপক্ষের দিকেই তাকিয়ে আছেন৷
তখনও কিন্তু রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের তরফ থেকে অনমনীয় মনোভাব দেখানো হচ্ছিল৷ কখনো বলা হচ্ছিলো যে, এই সিদ্ধান্ত নেবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য দপ্তর৷ কাজেই নবান্ন, অর্থাৎ রাজ্য সচিবালয়ের দিকে তাকিয়েই অপেক্ষা করতে হবে৷ কখনো রাজ্যের ডিরেক্টর অফ মেডিকেল এডুকেশন ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিচ্ছিলেন যে, ছাত্ররা যে প্রতীকি অনশন করছে, তা যেন তারা তুলে নেয়৷ এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির গোটা ঘটনা সম্পর্কে নীরব এবং নির্বিকার থাকা অনিশ্চয়তা আরো বাড়িয়ে তুলেছিল৷ শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর নীরব হস্তক্ষেপেই সমস্যার সমাধান হলো সোমবার৷ মেডিকেল কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলো, নতুন ১১তলা হোস্টেলবাড়িতে আপাতত সব বর্ষের ছাত্রদেরই জায়গা হবে৷ প্রথমে মৌখিক, তারপর লিখিতভাবে এই আশ্বাস পেয়ে অনশন তুলে নিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা৷ মেডিকেল কলেজের বর্তমান প্রিন্সিপাল ডা. অশোক ভদ্রের হাত থেকে জল খেয়ে নির্জলা উপবাস সাঙ্গ হলো৷ সবাইকেই তারপর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হলো৷ এবং প্রিন্সিপাল সংবাদ মাধ্যমকে জানালেন, নতুন হোস্টেলের দু’টো তলা বরাদ্দ থাকবে প্রথম বছরের মেডিকেল ছাত্রদের জন্য, এবং দুটো তলা সিনিয়র ছাত্র এবং দুটো তলা স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রদের জন্য৷ হোস্টেল দেওয়ার প্রক্রিয়া হবে স্বচ্ছ এবং কাউন্সেলিংয়ের ভিত্তিতে৷ তবে এটা অস্থায়ী ব্যবস্থা৷ মেডিকেল কলেজের আরো একটি নতুন ছাত্রাবাস তৈরি হচ্ছে৷ ৫০০ আসনের ওই ছাত্রাবাস তৈরি হয়ে গেলেই সিনিয়র ছাত্রদের সেখানে স্থানান্তরিত করা হবে৷
এদিন অনশন উঠে যাওয়ার পর যখন উচ্ছ্বসিত সবাই, এই অনশন আন্দোলনের অন্যতম মুখ যিনি, সেই অনিকেত চট্টোপাধ্যায় শ্রান্ত গলায় সংবাদ মাধ্যমকে বললেন, এটাই তাঁরা প্রথম থেকে চাইছিলেন৷ যদি শুরুতেই এটা মেনে নিতো কর্তৃপক্ষ, তা হলে এত অশান্তিই হতো না!