ভারতের রাজনীতিতে অনশন, পালটা অনশন
১৩ এপ্রিল ২০১৮লোকে বলে, নরেন্দ্র মোদী নাকি কখনোই প্রথাগত রাজনৈতিক ব্যকরণ মানেন না৷ সত্যিই কি তাই? আসলে নিজের মত ও বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছে দিতে পছন্দ করেন তিনি৷ ১২ এপ্রিল দেশজুড়ে ভারতীয় জনতা পার্টি ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ কর্মসূচি পালন করলো৷ দেশবাসীকে কিছু বার্তা দিতে চাইলেন নরেন্দ্র মোদী৷ অতীতে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকালীন রাজ্যে ভয়ানক দাঙ্গার বেশিরভাগ দায়টাই তাঁর ঘাড়ে এসে পড়েছিল৷ তারপর থেকেই তিনি নানা সময়ে চেনা পথের বাইরে গিয়ে রাজনীতি করেছেন৷ কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরেই সংসদ ভবনে ঢোকার সময় সিঁড়িতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে সবাইকে অবাক করেছিলেন৷ তারপর গত ৪ বছরে কখনো নোটবাতিল করেছেন, কখনও মধ্যরাতে সংসদের যৌথ অধিবেশন ডেকে পণ্য ও পরিষেবা কর চালু করেছেন৷ আবার রেডিওতে ‘মন কি বাত’ চালু করেছেন৷ এবার নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের আচরণের বিরুদ্ধে অনশনে৷
সংসদের সদ্য সমাপ্ত বাজেট অধিবেশনে অচলাবস্থা তৈরি করার প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীর অনশন নিয়ে বিস্তর আলোচনা ও সমালোচনা চলছে দেশে৷ মোদীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তাঁর দল ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ নির্বাচনি প্রচারে তিনি রয়েছেন কর্নাটকে৷ সেখানকার হুবলিতে অনশন পালন করেছেন তিনি৷ নেতা-মন্ত্রী ও দলের সাংসদরা প্রত্যেকে নিজেদের কেন্দ্রে অনশন পালন করেছেন৷ অনশনে থাকাকালীনই মোদী চেন্নাই শহরে ‘প্রতিরক্ষা এক্সপো-২০১৮’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্ঘাটন করেছেন৷
কংগ্রেস নিজেরাই নতুন করে অনশন-রাজনীতি শুরু করলেও নরেন্দ্র মোদীর অনশনকে ‘নাটক’ আখ্যা দিয়েছে৷ দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী, মোদীকে মুখ খোলার পরামর্শ দিয়েছেন৷ কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি ও তার সহযোগী দলগুলিই বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে সংসদে কাজকর্ম হতে দেয়নি৷ সংসদের ২৫০ ঘণ্টা এমনিই নষ্ট করে নিজেরাই দায় এড়াতে অনশনে বসছে৷ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা তো প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহর বিমানে যাতায়াতের সূচি-সহ টুইট করে তাঁদের প্রাতঃরাশের কথা লিখেছেন৷ পুরো অনশনকে ‘নাটক’ বলেছেন৷ বিজেপির অনশন সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘লোকদেখানো অনশন করেছে বিজেপি৷ স্কুল সার্ভিস কমিশন ও সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে অনশন করুন প্রধানমন্ত্রী৷ দলিত, পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়া উচিত ওঁর৷’’
যদিও, কংগ্রেসও কিছু কম যায় না৷ ৯ এপ্রিল দিল্লির রাজঘাটে অনশন কর্মসূচি ছিল সকাল ১১টা থেকে৷ রাহুল পৌঁছান দুপুর ১টায়৷ তাঁর আগে আসা কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন, অমরিন্দর সিং লাভলি ও হারুন রশিদরা তো সকাল সকাল ভরপেট ‘ছোলে-ভটুরে’ খেয়ে ‘অনশনে’ যোগ দিয়েছিলেন৷ সম্ভবত, এটাই ভারতের ভবিষ্যত রাজনীতি৷
বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাওড়েকর কংগ্রেসের অনশনের নিন্দা করে নিজেদের অনশনের পক্ষে বলেছেন, ‘‘আমাদের অনশন আসল৷ ছোলে-ভটুরের অনশন নয়৷’’
প্রবীণ সাংবাদিক গৌতম হোড় বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী প্রথাগত রাজনৈতিক ব্যাকরণ মানেন না৷ তাই যে কাজটা অন্য কেউ করেননি, তিনি সেটি অনায়াসেই করতে পারেন৷ কোনও সন্দেহ নেই যে, নরেন্দ্র মোদী যবে থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তার আগে থেকেই কংগ্রেস নানা ছুতোয় সংসদ অচল করে এসেছে৷ রাজ্যসভা, লোকসভায় এবার বিষয় ছিল ব্যাংব জালিয়াতির পান্ডা নীরব মোদীসহ আরও কয়েকটি ইস্যু৷ পরবর্তীকালে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সরব ছিল কংগ্রেস৷ অনশন করে মোদী যখন কংগ্রেসের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়েছেন৷ তখন কোথাও না কোথাও কংগ্রেসের ওপর দায় এসে পড়েই৷ একে সংসদের ঘটনার প্রতিবাদ বলা যেতে পারে৷ প্রশ্ন উঠতেই পারে, একজন প্রধানমন্ত্রী এমনভাবে অনশন করতে পারেন কিনা৷ রাজনীতি করার অধিকার সবারই আছে৷ আজকের দিনে সাধারণ মানুষের মনে ধারণা তৈরি করা রাজনীতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে৷ মোদী এবং তাঁর দলের পক্ষ থেকে সফল প্রয়াস হিসেবে দেখা যেতে পারে৷’’
বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেসের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপেই বাজেট অধিবেশন ব্যাহত হয়েছে৷ তাই দেশব্যাপী ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ উপোসের কর্মসূচি তাদের৷ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা, কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিং, গিরিরাজ সিং, সাংসদ আর কে সিনহাসহ অনেকেই মোদীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন৷ অনশনের পর মোদী বলেছেন, ‘‘একদিনও সংসদ সচল হতে দেয়নি ওরা৷ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে৷ অনশনে বসে বিশ্বের সামনে ওদের অপরাধ ফাঁস করবো৷ অনশন করলেও আমার কাজে ব্যাঘাত হবে না৷’’