টয়লেট আর ঋণ
৪ জুলাই ২০১৫বাংলাদেশে নারী শিক্ষার হার বাড়ছে৷ ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সি নারীর স্বাক্ষরতার হার ৪০.৮ শতাংশের মতো৷ কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক ও তার পরের পর্যায়ে লেখাপড়া করেন মাত্র ৪ শতাংশ নারী ৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত না হলে এই হার আরো কমতে পারে৷ তবে এই প্রবণতা কমানোর উদ্যোগও আছে৷ সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেট বা শৌচাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছে সরকার৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যমে এই নির্দেশ দেয়৷ ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, প্রতিটি স্কুলে ছাত্রীদের ঋতুকাল নিয়ে কথা বলার জন্য একজন শিক্ষিকা রাখার কথাও বলা হয়েছে ঐ পরিপত্রে৷
২০১৪ সালের একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে পরিপত্রে বলা হয়, দেশে প্রতি ১৮৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি টয়লেট থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টয়লেটগুলোর ৪৫ শতাংশই বন্ধ থাকে, তাছাড়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ টয়লেটে বা টয়লেটের কাছাকাছি পানি ও সাবান থাকে না৷ আরো জানানো হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টয়লেটগুলোর জানালা থাকে ছোট বলে আলো-বাতাস কম থাকে৷ কোনো কোনো টয়লেটে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে, কিন্তু বাল্ব থাকে না বা থাকলেও অকেজো৷
এছাড়া মেয়েদের ঋতুকালীন নানা সমস্যা সমাধানে, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের ঋতুকালীন বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য একজন অন্তত শিক্ষিকাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথাও পরিপত্রে বলা হয়েছে৷
সাম্প্রতিক সময়ে ট্রান্সসেক্সুয়াল বা ট্রান্সজেন্ডার, অর্থাৎ হিজরাদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সরকার৷ গত মে মাসে হিজরাদের ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
আবার গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে হিজরা উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়র জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রাম বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এমন নির্দেশনার কারণ জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘সমাজের সব ধরনের উদ্যোক্তারা যাতে ব্যাংক ঋণ পায়, সেজন্য আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি৷ বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে মানবিক ব্যাংকিং চালু করতে চায়৷ এ জন্য কোনো শ্রেণি বা সম্প্রদায় যেন ব্যাংকিং পরিসেবার বাইরে না থাকে সেই ব্যবস্থা করা হবে৷''
নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশে এমন অনেক মানবিক সিদ্ধান্তই কার্যকর হয় না৷ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ছাত্রীদের পরামর্শ দেয়ার জন্য একজন শিক্ষিকা এবং আলাদা টয়লেট হলে নারী শিক্ষার অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে বিশ্লেষকরা বলে মনে করেন৷ হিজরা উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার নির্দেশকেও শুভ উদ্যোগ বলে মনে করেন তাঁরা৷