1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌জমি আন্দোলন:‌ পিছু হটল রাজ্য

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৮ জানুয়ারি ২০১৭

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড়ে জমি আন্দোলনের মুখে পিছু হটল রাজ্য সরকার৷ একজন কৃষকের গুলি খেয়ে মৃত্যু ও একাধিক আন্দোলনকারী আহত হওয়ার পর তারা জানিয়ে দিল, কৃষিজমিতে বিদ্যুতের লাইন বসানো হবে না৷

https://p.dw.com/p/2VxpP
প্রতীকী ছবি
ছবি: Aditi Mukerji

ভাঙড়ে কৃষিজমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষদের যে আন্দোলন, তার মধ্যে স্পষ্টই ছিল বাম আমলের সিঙ্গুর, বা নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের ছায়া৷ তাই শুরু থেকেই সতর্ক ছিল রাজ্য সরকার: মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং পুলিশের গুলিতে, মতান্তরে বহিরাগত দুষ্কৃতিদের গুলিতে একজন আন্দোলনকারী কৃষক মারা যাওয়ার পর সরকারের তরফে মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি ঘোষণা করলেন যে, ভাঙড় দিয়ে হাই টেনশন বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যাওয়া হবে না৷ কোনো কৃষকের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাঁর চাষের জমি নেওয়া হবে না৷ পাওয়ার গ্রিড প্রকল্প অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যে পাওয়ার গ্রিড মূলত কলকাতার নতুন উপনগরী রাজারহাট-নিউ টাউনে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছিল৷

যদিও এক্ষেত্রে সরকারের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ হচ্ছিল না৷ রাষ্ট্রায়ত্ব বিদ্যুৎ সংস্থা ‘‌পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড'‌ সরাসরি কৃষকদের থেকে জমি কিনে নিয়েছিল৷ এই পদ্ধতিকে আসলে এতদিন আদর্শ বলে ভেবে এসেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার৷ সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানা এবং নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাবের জন্য জমি সরকার অধিগ্রহণ করার ফলে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে এটাকেই সেরা বিকল্প বলে ভাবা হচ্ছিল৷ অর্থাৎ জমির মালিকদের থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সরাসরি জমি কিনে নেওয়া৷ কিন্তু ভাঙড়ের ক্ষেত্রে সেই ভাবনা ধাক্কা খেল৷ উল্টে অভিযোগ উঠল, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং তাঁদের মদতপুষ্ট গুন্ডারা ভয় দেখিয়ে, জোর করে বাজারদরের থেকে কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেছে৷

রাজ্যে শিল্পায়নের উদ্দেশ্যে যখন ‘‌গ্লোবাল বিজনেস সামিট'‌-এর তোড়জোর চলছে, বিশাল বিশাল সরকারি বিজ্ঞাপন পশ্চিমবঙ্গকেই লগ্নির সেরা ঠিকানা বলে তুলে ধরছে, তখন ভাঙড়ের ঘটনা তুমুল অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠল সরকার এবং শিল্পপতি মহল, দুই পক্ষের কাছেই৷ ৩০০ কোটি টাকার এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য পাওয়ার গ্রিড বসাতে জমি দরকার ছিল মাত্র ১১ একর৷ সেই কাজই যখন ৭৫ শতাংশ‌ হয়ে যাওয়ার পরও এভাবে বিক্ষোভ, আন্দোলনের চাপে আটকে গেল, তখন ভবিষ্যতের শিল্প প্রকল্পগুলির রাস্তা কতটা সুগম হবে, পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি করাটা কতটা নিরাপদ হবে, সেই প্রশ্নও উঠে গেল৷ যদিও সরকার খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকল্পটি স্থগিত রেখে স্থানান্তরিত করার ঘোষণা করেছে, বৃহত্তর সংঘর্ষ এড়িয়েছে, কিন্তু সেটাই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে না তো?‌ যেভাবে আজ দৃষ্টান্ত হয়ে গেছে সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়?‌ প্রশ্ন করছে সংশয়ী শিল্পমহল৷

 

 

আরও একটি বিষয় ভাঙড় আন্দোলনের ক্ষেত্রে নজরে পড়েছে৷ বহিরাগতদের উপস্থিতি, যারা গন্ডগোলে ইন্ধন জুগিয়েছে, সংঘর্ষে জড়িয়েছে৷ নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল৷ এবারও একই কায়দায় গাছ কেটে রাস্তা আটকে, পুলিশকে মেরে, পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে, ইঁট-পাটকেল, বোমা ছুঁড়ে যে তাণ্ডব করা হলো, তার পিছনে বহিরাগত প্ররোচনা দেখছে প্রশাসন৷ এক সপ্তাহ আগেই সরকারি নির্দেশে প্রকল্পের কাজ স্থগিত হওয়ার পরেও যে কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে হাঙ্গামা, বিক্ষোভ, সংঘর্ষ বেড়েছে বই কমেনি৷ মঙ্গলবারের ব্যাপক হাঙ্গামা এবং গুলি চালানোর ঘটনা নিয়ে রাজ্য পুলিশ যে রিপোর্ট দিয়েছে সরকারকে, তাতেও দাবি করা হয়েছে, বহিরাগত দুষ্কৃতিরাই গুলি চালিয়েছে৷ এই দাবি যদি সত্যি নাও হয়, ভাঙড়ের আন্দোলনে বাইরের প্ররোচনা যে আছে, তার আরও তথ্য-প্রমাণ পুলিশের হাতে আছে৷

এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান