1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তন আর শব্দ-বায়ু দূষণেও বাড়ছে অটিজম

সমীর কুমার দে ঢাকা
২ এপ্রিল ২০২২

বাংলাদেশে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা কম নয়৷ সরকারি হিসেবে, গত মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে অটিজমে আক্রান্ত ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজার৷

https://p.dw.com/p/49NQU
Bangladesch Dhaka Behinderteneinrichtung CRP
ছবি: CRP

টেকশহর নামে একটি অনলাইন পোর্টালে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন তাহমিনা তানিয়া৷ স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলেকে নিয়ে গত ৬ বছর ধরে একাই লড়াই করছেন৷ বর্তমানে তার ছেলের বয়স ১৫৷

ডয়চে ভেলেকে তানিয়া বলেন, ‘‘এই চিকিৎসাটা অনেক ব্যয়বহুল৷ এটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জের৷ এছাড়া ছেলেকে অনেক বেশি সময় দিতে হয়৷ ওকে পার্কে নিয়ে যেতে হয়, খেলার মধ্যে রাখতে হয়৷ আমি যেহেতু চাকরি করি, ফলে যতটা সময় দেওয়া দরকার, সেটা দিতে পারি না৷ গত ৪ বছর ধরে একটা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে৷ আমার ইচ্ছে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ওকে উপার্জনক্ষম করে তোলা৷’’

বাংলাদেশে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা কী বেড়েছে নাকি মানুষের সচেতনতার কারণে এখন সনাক্ত বেশি হচ্ছে জানতে চাইলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দু'টোই বাড়ছে৷ আটিজমে আক্রান্ত শিশু যেমন বাড়ছে, তেমনি মানুষের সচেতনতার কারণে সনাক্তও বেশি হচ্ছে৷’’

‘আগামী ১০ বছরের মধ্যে ছেলেকে উপার্জনক্ষম করে তুলতে চাই’

কেন অটিজমের বৈশিষ্টসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই অধ্যাপক বলেন, ‘‘অনেকগুলো কারণ আছে৷ যেমন জলবায়ু পরিবর্তন এবং শব্দ ও বায়ু দূষণের কারণে গর্ভবর্তী মায়েরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন৷ ফলে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক যেভাবে বিকশিত হওয়ার দরকার সেটা হচ্ছে না৷ এই দূষিত বায়ুতে এক ধরনের পদার্থ থাকে যেটা মস্তিষ্ক বিকাশে বড় ধরনের বাধা৷ পরিস্থিতি এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ের দিকে চলে যাচ্ছে৷''

এদিকে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের ভবিষ্যৎ কী এমন প্রশ্নকে সামনে রেখে শনিবার ‘‘এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি'' প্রতিপাদ্যে দেশজুড়ে পালিত হল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস৷

অটিজম আসলে কি?

ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিশেষ শাখার সভাপতি ও অটিজম নিয়ে কাজ করা সুইট বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাশিদা জেসমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অটিজম মস্তিষ্কের বিন্যাস ও বিকাশগত সমস্যা৷ এর লক্ষণ জন্মের তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়৷ অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর মধ্যে সামাজিক আচার-আচরণ, যোগাযোগ ও ব্যবহারে সমস্যা লক্ষ্য করা যায়৷ অটিজমসম্পন্ন শিশু বা ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য বা সমস্যা স্বতন্ত্র৷ মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি অটিজমে আক্রান্ত হতে দেখা যায়৷ ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে অটিজম আক্রান্তের অনুপাত ৪-১৷ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে একটা বড় পার্থক্য হলো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর বিকাশ প্রতিটি স্তরে সমান গতিতে চলে, কিন্তু অটিজমের বিকাশ সব স্তরে একই রকম হয় না৷ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি একটি বিশেষ দিকে বাড়ে৷ তারা ছবি আঁকায় ভলো করে৷ তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে তারাও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে৷ আমার স্কুলের অনেক শিশুর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে৷ গত ২০ বছর ধরে কাজ করতে গিয়ে অনেককেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পেরেছি৷''

সরকারি হিসেবে দেখা গেছে, মার্চ পর্যন্ত দেশে ৪ লাখ ৪৬ হাজার অটিজম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছে৷ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, প্রতি ১০০ জনে একজন নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি৷ তাই এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি৷

বাংলাদেশে অনেকেই সম্প্রতি এমন শিশুদের নিয়ে কাজ করতে এগিয়ে আসছেন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ অটিজম নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন৷

অটিজমে আক্রান্তদের আবাসন ও কর্মসংস্থান করবে সরকার

ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের স্থায়ী আবাসন ও তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে সরকার৷ শনিবার বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এসময় প্রধানমন্ত্রী একটি প্রকল্প প্রণয়ন করার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে নির্দেশনা দেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা বিশেষ প্রতিভার অধিকারী হয়৷ তাদের সঠিক যত্ন নেওয়া হলে সে প্রতিভা বিকাশ সম্ভব৷ খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারকদের নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্টিফেন হকিংসহ অনেকের এই বৈশিষ্ট্য ছিল৷ কিন্তু তারা তো তাদের প্রতিভার সাক্ষর রেখে গেছেন৷ সুযোগ পেলে আমাদের এই শিশু-কিশোররা রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় তাদের বিষয়ে সচেতন ও যত্নবান হতে হবে৷ আগে তো বড় পরিবার ছিল, সেখানে সবার সঙ্গে মিশে এটি ওভারকাম করা গেছে৷ এখন ছোট পরিবারে এটি দুষ্কর হয়ে গেছে৷’’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে আমরা নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করেছি৷ এর মাধ্যমে অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তির গৃহভিত্তিক পরিচর্যা ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ৫৩টি জেলার ১৯০টি উপজেলার ৩৯০ জন পিতা-মাতা বা অভিভাবকদের অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ একই সঙ্গে ৬০টি জেলার ১০৫টি উপজেলার ১১৫টি বিদ্যালয়ের ৪৫০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ এটি এখনো চলমান৷ এছাড়া ‘বলতে চাই' ও ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা' নামক দুটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে৷’’

‘পরিচর্যা ও থেরাপি অনেক ব্যয়বহুল’

এই শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়? জানতে চাইলে অটিজম নিয়ে কাজ করা সংগঠন আলোর পথে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ঝুমনা মল্লিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো অভিভাবকরা মানতেই চান না তার বাচ্চা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন৷ দ্বিতীয় হল, আমাদের অনেকেই বাসা ভাড়া দিতে চান না৷ এদের অনেকেই পাগল মনে করে৷ ফলে ঝামেলা এড়াতে এই শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাইলে বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না৷ আর তৃতীয়ত হল, এই বাচ্চাদের পরিচর্যা ও থেরাপির কাজটা অনেক ব্যয়বহুল৷ ফলে আমরা যারা বেসরকারি পর্যায়ে কাজটা করি, তাদের জন্য ফান্ডিংটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷’’

সরকার তো এদিকে বেশ মনোযোগী? সেখান থেকে কি অর্থ মেলে না? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সরকার অনেক কিছুই করছে৷ তবে পুরোটা তো হচ্ছে না৷ এখানেই বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করতে হচ্ছে৷ এখন যদি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে কাজটা হয় তাহলে বিষয়টা অনেক সহজ হয়ে যাবে৷’’

‘অভিভাবকরা মানতেই চান না তার বাচ্চা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন’

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যোগাযোগ স্থাপনে শিশুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক চেষ্টাগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে সে বিষয়ে একটি ভিডিওতে পরামর্শের মাধ্যমেই দুই তৃতীয়াংশ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব৷ ৯ থেকে ১৪ বছরের ৮৯টি শিশুর ওপর ৪ বছর ধরে এ পরীক্ষা চালানো হয়৷ এদের মধ্যে অর্ধেক শিশুর বাবা-মা ৫ মাস ধরে ভিডিওতে পরামর্শ পেয়েছেন৷ বাকি অর্ধেক শিশুর ক্ষেত্রে প্রচলিত সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে৷ ফলাফলে দেখা গেছে, ভিডিওর মাধ্যমে অভিভাবকদের দেওয়া সাধারণ পরামর্শের মাধ্যমেই প্রথম গ্রুপের দুই তৃতীয়াংশ শিশুকে অটিজম থেকে রক্ষা করা গেছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য