1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তন: নগরায়নে বাংলাদেশের দ্বৈত নীতি

১০ অক্টোবর ২০২২

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সোচ্চার দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ৷ কিন্তু এই প্রভাব মোকাবিলায় নগরায়নসহ নানা জাতীয় নীতিতে কি পর্যাপ্ত পরিবর্তন আনা হয়েছে? অনেকেই মনে করছেন, না৷

https://p.dw.com/p/4HxCO
জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে অপরিকল্পিত নগরায়নসহ মানবসৃষ্ট সংকটকেই ঢাকার ‘উত্তপ্ত দ্বীপে‘ পরিণত হওয়ার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

Bangladesch Klimaflüchtlinge Slum Dhaka
জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে অপরিকল্পিত নগরায়নসহ মানবসৃষ্ট সংকটকেই ঢাকার ‘উত্তপ্ত দ্বীপে‘ পরিণত হওয়ার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্য়ে অন্য অনেক দেশের আগেই উচ্চারিত হয় বাংলাদেশের নাম৷ বিশ্বের সপ্তম ঘনবসতিপূর্ণ দেশটি ২০২০ সালেই দ্বিতীয়বারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ৫৫টি দেশের জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্বে ছিল৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশটি যতটা সোচ্চার, অভ্যন্তরীণ নীতিতে তার প্রভাব অনেকটাই সীমিত৷

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ বেড়ে চলেছে৷ ভাটির উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের পাশাপাশি উজানে বাড়ছে বন্যা এবং টর্নেডো৷ ঘূর্ণিঝড়ে পূর্বসতর্কতামূলক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের দক্ষতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ কিন্তু এর ফলে ভৌগলিক এবং জীবিকার পরিবর্তন নিয়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি কী রয়েছে?

সরকারের হিসাবেই ২০ কোটি মানুষের বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি মানুষ পরিণত হয়েছেন জলবায়ু উদ্বাস্তুতে৷ এই উদ্বাস্তুরা জীবিকার সন্ধানে জড়ো হচ্ছেন রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে৷ কিন্তু শহরগুলো কি সেই চাপ সামলাতে জলবায়ু উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে?

শহর পরিণত ‘উত্তপ্ত চুল্লিতে'

তাপমাত্রা বৃদ্ধি মোকাবিলায় সাময়িক স্বস্তি পেতে গিয়ে শহরকে ভবিষ্য়তের জন্য আরো বেশি হুমকিতে ফেলা হচ্ছে বলে মনে করেন স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবীব৷ প্রশাসন ও বাণিজ্যসহ নানা ক্ষেত্রে ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ না করায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘পরিকল্পনা নাই এটা সত্য নয়৷ পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না৷ ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ঢাকার চারপাশে তিনটি রিং রোড তৈরি করে ঢাকাকে এড়িয়ে আশেপাশে স্যাটেলাইট সিটি তৈরির পরিকল্পনা অনেক আগের৷ এর ফলে মানুষ ঢাকায় এসে কাজ করে আবার অন্য শহরে চলে যেতে পারতো৷ কিন্তু সেই সড়কগুলো তৈরি হয়নি৷ বরং পদ্মাসেতুর সংযোগ দেয়ায় সেই সেতুর পুরো যান চলাচল ঢাকার ওপর দিয়ে হচ্ছে৷''

অর্থনীতি, শিক্ষা, বাণিজ্য, প্রশাসন থেকে শুরু করে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ঢাকায় কেন, এ প্রশ্নও তোলেন তিনি৷ ঢাকার আশেপাশে সমুদ্র না থাকলেও নৌবাহিনীর সদরদপ্তর ঢাকায়, এমনকি ঢাকা বাংলাদেশের কেন্দ্রে অবস্থিত হলেও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সদরদপ্তরও ঢাকায়৷ এমন সব স্থাপনা রাজধানীর বাইরে না সরালে শহরের ওপর বাড়তি চাপ কমানো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন ইকবাল হাবীব৷

এর ফলে যে ভয়াবহ চাপ তৈরি হচ্ছে মহানগরের পরিবেশের ওপর, তা আশঙ্কাজনক৷ রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের পাঁচটি প্রধান মহানগরীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই এক চিত্র৷ অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের মোট ছয় জন গবেষক এতে যুক্ত ছিলেন।

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট- এই পাঁচটি শহরের দিনের ও রাতের তাপমাত্রার ধরন বিশ্লেষণ করে এই গবেষণাটি চালানো হয়। এর মধ্যে ছিল প্রতিদিনের দুপুর ও রাতের তাপমাত্রার তথ্য। প্রায় আট হাজার স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করা হয়েছে এই গবেষণায়।

ঢাকার আসন্ন মৃত্যু, 'দায়ী নয় জলবায়ু'

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি যেখানে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখা হচ্ছে, ঢাকার তাপমাত্রা গত ২০ বছরে প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন নয়, বরং অন্য শহুরগুলোর তুলনায় ঢাকার তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধির পেছনে এর জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাভূমি ভরাট ও গাছপালা কেটে ফেলাকেই দায়ী করা হয়েছে গবেষণায়

গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং স্কুল অব আর্থ এন্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ড. আশরাফ দেওয়ান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন এখটা ভালো মুখরোচক গল্প৷ এখন যেকোনো কিছুর সঙ্গে এটাকে ট্যাগ করে দিতে পারেন৷ আমাদের দেশের এই পাঁচটা শহরে প্রধান যে সমস্যা, তা হচ্ছে নীতির অভাব৷ আমরা খুব বলতে থাকি যে পরিকল্পনার অভাব, কিন্তু আমরা কি আসলে জানি যে কী কী পরিকল্পনা আমাদের গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে?‘‘

গবেষণায় দেখা গেছে, শহরগুলোর আশেপাশের অঞ্চলে দিনের তাপ হারিয়ে রাতের তাপমাত্রা যতটা কমে আসতে পারে, শহরগুলোতে আর আগের মতো রাতের তাপমাত্রা সেভাবে কমতে পারছে না৷ শহরকে ইট ও কংক্রিট দিয়ে ভরে ফেলা, পর্যাপ্ত জলাধার ও গাছ না থাকার ফলে ঢাকাসহ অন্য মহানগরগুলো পরিণত হচ্ছে ‘হিট আয়ল্যান্ড' বা উত্তপ্ত দ্বীপে৷ এই দ্বীপের আশেপাশে তাপমাত্রা কম থাকলেও দ্বীপটি থাকছে দিনরাতই উত্তপ্ত৷

আশরাফ দেওয়ান বলেন, ‘‘যাদের টাকা আছে তারা এসি লাগাচ্ছে৷ কিন্তু যাদের টাকা নেই, সে সংখ্যাটাই বেশি৷ যে তাপ শোষণ করছে আমাদের ভবন তৈরির উপাদানগুলো, যত্রতত্র আমরা গাছপালা নষ্ট করছি, বিল বা জলাশয়কে নষ্ট করছি৷ এর ফলে তাপ জমা হচ্ছে, যার প্রভাব এখনই দেখা যাচ্ছে৷ আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি বিপর্যয় ডেকে আনবে৷''

বাড়ছে দুর্যোগ, ক্ষয়ক্ষতি, জলবায়ু উদ্বাস্তু

গত তিন দশকে ২০০টিরও বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে৷ অতীত অভিজ্ঞতা থেকে পূর্বাভাস এবং সতর্কতামূলক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ দক্ষ হয়ে ওঠায় কমানো গেছে প্রাণহানি৷ কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষতি বেড়েই চলেছে৷

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০০৯-২০১৪ সালের চেয়ে ২০১৫-২০২০ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এই ক্ষতির ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশই হয়েছে বন্যার কারণে, ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার৷ ২০০৯-২০১৪ সালে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ছিল চার হাজার ২৮০ কোটি টাকা৷

জুনে প্রকাশিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ক পরিসংখ্যানে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর এর প্রভাবের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে৷ দুর্যোগের ঝুঁকি, প্রভাব এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির একটি জাতীয় ডেটাবেইজ গড়ে তোলাই এই পরিসংখ্যানের লক্ষ্য৷ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এটি এ বিষয়ক দ্বিতীয় প্রতিবেদন৷ প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২০১৬ সালে৷

বন্য়ার পাশাপাশি ভূমিধস এবং ঘূর্ণিঝড়ের পরিমাণও বেড়েছে৷ আগের প্রতিবেদনে এই তিন দুর্যোগে ক্ষতির পরিমাণ মোট ক্ষতির ৫৮ দশমিক চার শতাংশ থাকলেও দ্বিতীয় পরিসংখ্যানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ছয় শতাংশে৷

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, বাড়ছে উপকূলবর্তী অঞ্চলের জমিতে লবণাক্ততা৷ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বিধৌত বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপের উজানেও অতিবৃষ্টি, ভয়াবহ বন্যা এবং নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যূত হচ্ছেন লাখো মানুষ৷ এ বছরের জুনে সিলেট অঞ্চলে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন, ৪০ হাজার ঘরবাড়ি পড়ে ভাঙনের মুখে৷

একসময় মৌসুমি দুর্যোগের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার স্থানীয় দক্ষতা থাকলেও এখন বছর বছর বেড়ে চলা চতুর্মুখী এই দুর্যোগের কবলে সর্বস্ব হারিয়ে বিকল্প জীবিকার সন্ধানে অনেকেই বাড়ি জমাচ্ছেন গ্রাম থেকে শহরে৷

বিশ্বব্যাংকের একটি হিসাব জানাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর চার লাখ মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আসছেন৷ অর্থাৎ, প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষ নিজেদের আবাস পরিবর্তন করছেন৷ এদের ৭০ শতাংশই জলবায়ু উদ্বাস্তু৷

কিন্তু বৈশ্বিক এই সংকটের স্থানীয় সমাধানে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বলে মনে করেন আশরাফ দেওয়ান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন শহরে যে বাড়তি মানুষের তাপ হচ্ছে, সেটা নিয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই৷ তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য আমরা জলবায়ুকে দায়ী করি৷ কিন্তু পাঁচটি শহরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কম দায়ী, বড় সমস্য়া হচ্ছে জনসংখ্যা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়ন৷''

তিনি বলেন, ‘‘যেকোনো কিছুকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা গেলে সেটিতে অন্য একটা মাত্রা আসে৷ কিন্তু আমাদের গবেষণায় আমরা সেটা দেখিনি৷ অভ্যন্তরীণ অভিবাসন একটা বড় ফ্যাক্টর, যেটা কিভাবে ব্যবস্থাপনা করা যাবে এ নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই৷ অপরিকল্পিত নগরায়নের শেষ কোথায় তা আমরা জানি না৷ যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তাহলে খুব বেশি দিন লাগবে না, পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকার বেশিরভাগ অঞ্চল বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে৷''

এখনও আশা রয়েছে

ঘনবসতি, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জনসংখ্য়ার চাপ এবং নীতির অভাব সত্ত্বেও এখনও শহরগুলোকে বাঁচানোর আশা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা৷

আশরাফ দেওয়ান বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বাস্তুতন্ত্র থেকে শুরু করে সবকিছুই জড়িত৷ জলবায়ুর তথ্যগুলোকে যদি পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়, পাশাপাশি পরিবেশগত সুশাসন৷ এই দুটা বিষয় এখন থেকে শুরু করতে হবে৷ আমরা পেছনে যেতে পারবো না৷ কিন্তু আজকে থেকে শুরু করে ভবিষ্য়তে এটা নিশ্চিত করতে হবে৷ এছাড়া এই বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে না৷''

ঢাকার জলবায়ু শরণার্থীরা কেমন আছেন?

অপরিকল্পিত নগরায়ন হলেও এখন চাইলে ঢাকাকে পুনর্গঠন করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন ইকবাল হাবীব৷ ঢাকার যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন পর্যন্ত হয়েছে, সেটি সাময়িক হওয়ায় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এখনও ঢাকাকে নতুন করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি৷

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এর এক গবেষণা সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ঢাকা এখনও প্রায় ৭৩-৭৪ শতাংশ পুনর্গঠনমুখী৷ আপনি অবাক হবেন, ঢাকার যে সম্পূর্ণ উন্নয়ন, তার কেবল ২৭-২৮ শতাংশ গত ৩০-৪০ বছরে হয়েছে৷ অর্থাৎ, ঢাকার অবকাঠামো সাময়িক উন্নয়ন দিয়ে ভরাট হয়ে আছে৷ এর মানে এখনও সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই পুরো অবকাঠামোতে যদি নিয়ন্ত্রিতভাবে এখনই হাত দেয়া যায়৷''

এ বিষয়ে জাপান এবং জার্মানির উদাহরণ তুলে ধরেন ড. আশরাফ দেওয়ান৷ জাপান আকারে বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বড় হলেও দেশটির ২০ শতাংশ জমি ব্যবহারযোগ্য৷ অন্যদিকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা জাপানের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও ব্যবহারযোগ্য জমির পরিমাণ দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ৷

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যে সংস্থাগুলো রয়েছে, বিভিন্ন শহরের যে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তাদের পরিকল্পনা করার কোনো সামর্থ্য নেই৷ এমন একটা ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করতে পারে না যেটা মানুষ মানতে বাধ্য হয়৷ জার্মানিতেও আপনি দেখবেন কেউ আপনার কাজ করে দিচ্ছে না৷ বরং আপনাকে মানতে বাধ্য করা হয়৷ বাসার সুনির্দিষ্ট উপকরণ না থাকলে বাসাই তৈরি করতে দেয়া হয় না৷ আমাদেরও তেমন ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সেটা বাস্তবায়ন করা যায় না৷''

মহানগরকে রক্ষায় জলাশয় নির্মাণ ও পুনরুদ্ধার, পার্ক নির্মাণ, কেমন জমিতে কেমন ভবন তৈরি করা যাবে, কী পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে, এমনকি ভবন তৈরির উপকরণও নির্দিষ্ট করে দেয়াসহ নানা পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের৷ রাজনীতি যাতে পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সে ব্যাপারেও নজর দেয়ার আহ্বান তাদের৷