জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা
১২ অক্টোবর ২০১২ইউনাইটেড নেশন্স ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান সিকিওরিটি, সংক্ষেপে বলে ইউএনইউ-ইএইচএস৷ মিউনিখ রি হলো বিশ্বের অন্যতম রি-ইনশিওরার বা সহজ করে বলতে গেলে বিমা কোম্পানিগুলির বিমা কোম্পানি৷ নাইন-ইলেভেনের আক্রমণ কিংবা ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনার পরে এদের এক বিলিয়ন ডলার অবধি খেসারত দিতে হয়েছে, জানালেন মিউনিখ রি ফাউন্ডেশনের প্রধান৷ আর বাংলাদেশের আইসিসিসিএডি নামধারী যে প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টি হতে চলেছে, তার প্রধান ড. সলিমুল হকও উপস্থিত ছিলেন ডয়চে ভেলের ট্রিনকোমালি সভাকক্ষে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে - যখন নতুন প্রকল্পটির কথা সরকারিভাবে ঘোষিত হয়৷
এর আগের দু'দিন ধরে চলেছে মিউনিখ রি ফাউন্ডেশনের বাৎসরিক সামার অ্যাকাডেমি, যার বিষয় হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামাজিক বিচারে যারা সবচেয়ে দুর্বল, তাদের উপর প্রভাবটা কতটা পড়ে এবং সেই প্রভাব উপশমের কোনো পন্থা আছে কিনা৷ ২০০৬ সাল যাবৎ মিউনিখ রি নিধি এভাবে দেশ-বিদেশের তরুণ গবেষক ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের একত্র করে জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের খোঁজ চালাচ্ছে৷ আগামীতেও তা চলবে৷
নতুন প্রকল্পটি সম্পর্কে ড. সলিমুল হক ডয়চে ভেলেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন:
‘‘যে সংস্থাটি আমি বাংলাদেশে করতে যাচ্ছি, সেটা একটা জয়েন্ট ভেঞ্চার বলা যায়৷ ইংল্যান্ডে ইউকে-বেসড ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, যেখানে আমি বিগত ১৩ বছর ধরে কাজ করেছি, ওখানকার ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রোগ্রাম পরিচালনা করেছি৷ ওরা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সাথে যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সেন্টারটা করছে, যাতে শুধু বাংলাদেশের উপকার না হয়৷ যাতে সেখান থেকে যে শিক্ষাটা আমরা পাই, সেটা আমরা অন্য অন্য দেশে, এশিয়া মহাদেশে, আফ্রিকা মহাদেশে, এমনকি জার্মানি এবং ইউরোপেও পৌঁছে দিতে পারি৷''
সংস্থার কাজটা কিরকম হবে, সে বিষয়ে ড. হক বললেন:
‘‘আমরা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশে কিছু কাজ করবো, মূলত প্লাবন এলাকার আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেমের উপরে৷ অর্থাৎ ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপ্টেশনের জন্য সাধারণ মানুষ এবং কম্যুনিটির সাথে একটা কম্যুনিটি-বেসড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম তৈরি করতে যাচ্ছি আমরা৷''
পরে তিনি ব্যাখ্যা করে বললেন, বিশটি কম্যুনিটি বা জনপদ কি বসতি, যেগুলি বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপের মুখে, সেখানে যুগপৎ গবেষণা ও বাস্তব পরিকল্পনা চালানো হবে৷ এ ধরণের প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকেই কেন বেছে নেওয়া হল, এ প্রশ্নের জবাবে ড. হক বলেন:
‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশকে তারা ধরছে একটা বিশেষ ভালনারেবল কান্ট্রি হিসেবে৷ এবং আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশে শুধু গবেষণা না, কিছু অ্যাকশনেও যাবে তারা৷ ছয়টা এলাকা আমরা ধরবো, বিভিন্ন রকমের প্লাবন যেখানে হয়৷ বাংলাদেশের এক এক এলাকায় এক এক রকমের প্লাবনের সমস্যা আমরা দেখি৷ সেখানে আমরা কিছু ইন্টারভেনশন করবো, আর্লি ওয়ার্নিং, যাতে লোকজন যদি আগের থেকে খবর পায়, তারা কিভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে, তা জানানো৷ তার সাথে সাথে গবেষণাও করবো৷''
তাহলে কি জলবায়ু পরিবর্তন রোখার কোনো আশা আর নেই? ড. হক বললেন:
‘‘জলবায়ু পরিবর্তন যে সমস্যা, যেটা পৃথিবী জুড়ে আছে, বিশেষ করে মানুষের দ্বারা যেটা হচ্ছে, সেটা আগামী দশ-বিশ বছরে আমাদের ঠেকানোর কোনো উপায় নেই৷ আমাদের যা হবার তাই হবে এবং বাংলাদেশের মতো দেশে আমাদের মোকাবিলা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই৷ আমরা যদি - ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ বছরের দিকে তাকাই - তখন আমাদের এখনও এটাকে ঠেকাবার সুযোগ রয়েছে, যদি পৃথিবী জুড়ে যে সব দেশ এগুলোর জন্য দায়ি, তারা দায়িত্ব নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করে৷ এই পর্যন্ত তারা সেটা করেন নি, এবং এই দায়িত্বটা এখনও পুরোপুরিভাবে পালন করতে পারেনি বলে আমাদেরই এ সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ আগামীতে হয়ত তারা যদি এগিয়ে যান তাহলে আমরা এটাকে ঠেকাতে পারি৷''
মঙ্গলবারের সাংবাদিক সম্মেলনে আরো একটি প্রসঙ্গ উঠেছিল৷ সেটা হল, বাংলাদেশের মতো যে দেশে মানুষজন শত শত বছর ধরে বান, বাড়, অতিবৃষ্টি নিয়ে ঘর করছে, তাদের কাছ থেকে বাকি বিশ্বেরও তো কিছু শেখার থাকতে পারে? সেটাও হবে তাঁদের গবেষণার একটা লক্ষ্য, বললেন ড. হক৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ