জলবায়ু পরিবর্তনের অভিনব উপায়
১০ ডিসেম্বর ২০১৮অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ছাইয়ের মেঘ বায়ুমণ্ডল ঢেকে দেয়৷ গন্ধকের কণা বিশাল উচ্চতায় উঠে সূর্যের আলোর পথে বাধা সৃষ্টি করে৷ তাপমাত্রা কমে যায়৷ খুব বড় আকারের অগ্ন্যুৎপাতের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে এমনকি আধ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে যেতে পারে৷
বিজ্ঞানীরা এবার প্রাকৃতিক এই ঘটনা নকল করার চেষ্টা করছেন৷ বায়ুমণ্ডলে গন্ধকের কণা ছেড়ে দিয়ে তাঁরা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মোকাবিলা করতে চান৷ জার্মানির মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের উলরিকে নিমায়ার বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, প্রযুক্তিগতভাবে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে গন্ধক ছেড়ে দেওয়া সম্ভব৷''
অতি ক্ষুদ্র এই কণা ঠিক রিফ্লেকটরের মতো সূর্যের আলোর একটি অংশ ঢেকে দিতে পারে৷ পৃথিবীর উপর এমন সুরক্ষার ছাতা মেলে ধরলে উষ্ণতা কমানো সম্ভব হবে৷
শুনতে খুব সহজ মনে হলেও এমন আইডিয়া কতটা বাস্তবসম্মত? উলরিকে নিমায়ার বলেন,‘‘জলবায়ুর প্রণালী এতই জটিল,যে আমরা এমনকি হিসেবের মডেল দিয়েও অপ্রত্যাশিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার পূর্বাভাষ দিতে পারি না৷ তার অপ্রত্যাশিত পরিণতি সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারি না৷''
তা সত্ত্বেও গোটা বিশ্বে বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তির সাহায্যে জলবায়ুর উপর হস্তক্ষেপের প্রক্রিয়ার খোঁজ করছেন৷ পৃথিবীর গতি-প্রকৃতির রাসায়নিক ও পদার্থগত কার্যপ্রণালীর উপর হস্তক্ষেপ ‘ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং' নামে পরিচিত৷
হেল্মহলৎস সামুদ্রিক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী আন্দ্রেয়াস ওশলিস আমাদের পৃথিবীর উপর এমন হস্তক্ষেপের পরিণতি নিয়ে গবেষণা করছেন৷ প্রো. ওশলিস বলেন, ‘‘আমরা ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দু'টি পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য করি৷ প্রথমটি উপসর্গ হিসেবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মোকাবিলা করতে সূর্যের আলোর তীব্রতা কমানো বা ছায়া সৃষ্টির চেষ্টা করে৷ দ্বিতীয় পদ্ধতি জলবায়ু পরিবর্তনের উৎসে আঘাত করে, অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সরিয়ে মহাসাগর অথবা মাটিতে নিয়ে আসে৷''
অপেক্ষাকৃত ছোট আকারে হস্তক্ষেপের প্রভাবও বিশাল হতে পারে৷ আন্দ্রেয়াস ওশলিস-এর অসংখ্য কম্পিউটার সিমুলেশনে এমনটাই দেখা যাচ্ছে৷
বেশ কিছু আইডিয়া আপাতদৃষ্টিতে অত্যন্ত সহজ মনে হতে পারে৷ যেমন মহাসাগরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমা রাখার উদ্যোগ৷ কারণ উষ্ণ পানির তুলনায় শীতল পানি অনেক বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধরে রাখতে পারে৷ বিশাল পাম্পের মাধ্যমে সমুদ্রের গভীর থেকে শীতল পানি তুলে উপরের স্তরে আনা যেতে পারে৷ সমুদ্র তখন বায়ুমণ্ডলের বাড়তি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেবে৷ সমুদ্রবিজ্ঞানী প্রো. আন্দ্রেয়াস ওশলিস বলেন, ‘‘মডেল সিমুলেশনের মাধ্যমে আমাদের ধারণা হয়েছে, যে এভাবে আমরা বর্তমান কার্বন নির্গমনের ১০ শতাংশ ক্ষতি পূরণ করতে পারি৷ কিন্তু তার জন্য দক্ষিণের মহাসাগরের বিশাল ইকোসিস্টেমের উপর হস্তক্ষেপ করতে হবে৷ সেখানে অ্যালজির বৃদ্ধি ও অক্সিজেন কমে যাবে৷ প্রশ্ন হলো, আজ যে নির্গমন ঘটছে, তার মাত্র ১০ শতাংশ কমাতে আমরা কি সত্যি এমনটা করতে চাই?''
উত্তরমেরু সাগরে পরীক্ষা চালিয়ে একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে৷ গবেষকরা সার প্রয়োগ করে ফাইটোপ্ল্যাংকটন চাষ করেছেন৷ সেগুলি বিকশিত হবার সময় ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধরে রাখে৷ তারপর প্ল্যাংকটন সমুদ্রের তলদেশে তলিয়ে যায়৷ এভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিরাপদে দূর করা যায়৷
স্রোতের মাধ্যমে সেই সার গোটা বিশ্বের মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়ে ফাইটোপ্ল্যাংকটনের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে৷ তবে এক্ষেত্রেও বড়জোর ১০ শতাংশ নির্গমন কমানো সম্ভব হবে৷ ইকো সিস্টেমের উপর তার প্রভাবও অনিশ্চিত৷
ডিয়র্ক কুনৎসে/এসবি