মালির এক মেয়রের সংগ্রাম
১ জুলাই ২০২০বালুর মধ্যে একমাত্র প্রজাপতির চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট আর্দ্রতা রয়েছে৷ তাও আবার মালিতে বর্ষাকাল সবে শেষ হবার পর এই অবস্থা৷ আবদুলায়ে কুলিবালি দেশের দক্ষিণে ফানা জনপদের মেয়র৷ তিনি বলেন, ‘‘দশ বছর আগেও জায়গাটা এমন শুকনো ছিল না৷ সে সময় মানুষ এখানে ধান চাষ করতো৷ আজ তা একেবারেই সম্ভব নয়৷ আর গাছ কাটাও উচিত নয়৷ তাহলে আর কখনো বৃষ্টিও হবে না৷''
কয়েক মাস আগে মেয়র কুলিবালির টেলিফোন বেজে উঠেছিল৷ রাজধানী বামাকো থেকে কেউ একজন তাঁকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ তিনি অবশ্যই রাজি হয়েছিলেন৷ কুলিবালি এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন, ‘‘প্রশিক্ষণের আগেই বহুকাল ধরে আমি জঙ্গল ধ্বংস করার বিপক্ষে ছিলাম৷# তবে প্রশিক্ষণের কল্যাণে এই ধ্বংসলীলার পরিণাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি৷# সেইসঙ্গে প্রকৃতির সুরক্ষার জন্য আরও উদ্যোগ-উদ্দীপনার খোরাক পেয়েছি৷''
মালিতে যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মকর্তা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, আবদুলায়ে কুলিবালি তাঁদেরই একজন৷ আজকাল পৌর পরিষদের যে কোনো সভায় জলবায়ু সংরক্ষণের বিষয়টি উঠে আসে৷
পানির অভাব
সমস্যার মাত্রা সত্যি বিশাল৷ ফানা জনপদের প্রায় ৩০,০০০ মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই গরিব৷ জমি থেকেই তাদের সামান্য কিছু উপার্জন হয়৷ কার্পাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য৷ কিন্তু তার জন্য অনেক পানির প্রয়োজন৷
প্রতিবেশী দেশ নাইজারের উপর মালি অনেকটাই নির্ভর করে৷ সারা বছর ধরে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা হয়৷ কিন্তু ফানা অঞ্চলের চাষিদের জন্য সেই উৎস অনেক দূরে অবস্থিত৷ ফলে তাঁদের বৃষ্টির উপর নির্ভর করতে হয়৷ কিন্তু বৃষ্টিপাত অনিয়মিত হয়ে পড়ার কারণে অনেকে চাষবাস ছেড়ে কাঠকয়লা বিক্রি করছেন৷ আস্ত জঙ্গল কেটে পথের ধারে সাদা বস্তায় পুরে ফেলা হচ্ছে৷ অনেকে রাজপথের ধারে ছোট ছোট স্টল তৈরি করেছেন৷ ফাউলে ফানে তাঁদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা মোটেই মজা করতে কাঠকয়লা বিক্রি করি না৷ জলবায়ু পরিবর্তন যে বাস্তব হয়ে উঠেছে, আমরা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি৷ কিন্তু কী করবো, আমাদের জমি থেকে কিছুই তো আর পাচ্ছি না৷ # বিকল্প থাকলে এখনি কাঠকয়লার ব্যবসা বন্ধ করে দিতাম৷''
উপার্জনের বিকল্প পথ
মেয়রের প্রশিক্ষণের কল্যাণে অবশ্যই উপার্জনের কিছু বিকল্প পথ খুলে যাচ্ছে৷ তিনি নিজে শেখ মামাদু কুলিবালিকে বোঝাতে পেরেছেন৷ মামাদু সপরিবারে ছোট পরিসরে চাষবাষ করেন৷ পরিবারের হাতে মাত্র দুই হেক্টর জমি রয়েছে৷ গত কয়েক বছরে কম ফসল উঠেছে৷ কিছুকাল আগে শেখ মামাদু চাষের ধরন বদলে ফেলেন৷ এখন তিনি জঙ্গল ধ্বংস না করেই পরিবারের জন্য অন্নসংস্থান করতে পারছেন৷ শেখ মামাদু কুলিবালি বলেন, ‘‘মেয়র আমাদের বুঝিয়েছিলেন, যে কম গাছ মানেই কম বৃষ্টি হবে৷ তাই আমি কাঠকয়লা সংগ্রহের বদলে বরং গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ তাতে আমার ভালই চলে যাচ্ছে৷ আমি আমার নার্সারি থেকে গাছ বিক্রি করছি৷ সেইসঙ্গে ইউক্যালিপটাস গাছ বড় হতে দিচ্ছি, যা পরে নির্মাণের কাঠ হিসেবে বিক্রি করবো৷''
তিনি এরই মধ্যে দশ হাজারেরও বেশি চারাগাছ বিক্রি করেছেন৷ মেয়র নিজে বার বার জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বুঝিয়ে বলায় ফানায় পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বেড়ে চলেছে৷ আবদুলায়ে কুলিবালি বলেন, ‘‘এখানে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখলে মনটা ভালো হয়ে যায়৷ কারণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে আমরা সঠিক পথে এগোচ্ছি৷''
আশার আলো
মামাদু ফোম্বাও সব ছেড়ে চলে যাবার কথা ভেবেছিলেন৷ তাঁর জমিতে ফসল কমে আসছিল৷ জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের সঙ্গে সঙ্গে বামাকো থেকে বাজরার বীজও এসেছে৷ মাত্র একবার ভালো বৃষ্টি হলেই সেগুলি বেড়ে ওঠে৷ এর ফলে সব কিছু বদলে গেছে৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মামাদু বলেন, ‘‘আগে আমি হেক্টরপ্রতি মাত্র দেড় টন বাজরার ফসল তুলতে পারতাম৷ আজ নতুন বীজের দৌলতে হেক্টরপ্রতি তিন টন উৎপাদন হচ্ছে৷''
তবে মেয়র জানেন, সবে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে৷ সবাইকেই যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে কিছু একটা করতে হবে, ফানার মানুষকে তা বোঝাতে হবে৷ আবদুলায়ে কুলিবালি বলেন, ‘‘অনেক গাছপালা ও অনেক বৃষ্টি ফিরে পেতে সমাজে আরও অনেক মানুষকে জলবায়ুর সুরক্ষার জন্য কাজ করতে হবে৷ আগামী প্রজন্মের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি, যাতে তারা আমাদের পিতামহদের মতো বাঁচতে পারে৷ আগে গ্রামের প্রান্তেই বন্য জন্তু দেখা যেত৷ ঝোপঝাড় লোপ পাওয়ায় আজ তারা উধাও হয়ে গেছে৷''
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে ফানার মানুষের জীবন আরও দূর্বিষহ হয়ে উঠবে৷ কারণ তখন মরুভূমির থাবা এগিয়ে আসবে৷ মেয়র কুলিবালি তাঁর প্রশিক্ষণের সময় এই হুমকির কথা জানতে পেরেছেন৷
ইয়ুর্গেন শ্নাইডার/এসবি